img

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনকে ঠেকাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় শক্তি মনে করে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলেও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ আছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের সর্বশেষ এক প্রতিবেদন থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন সামরিক অধিনায়করা এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁরা তাঁদের মিত্র, অংশীদার ও বন্ধুদের সঙ্গে বোঝাপড়া ও কার্যপদ্ধতির ওপর জোর দিয়েছেন। তাঁরা বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে অনুশীলনকেও দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করছেন। 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সামরিক অনুশীলন ও বিনিময় কর্মসূচি পরিচালনা করছে। মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের অধিনায়করা পুরো অঞ্চলে অংশীদারি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদারে আগ্রহ প্রকাশ করছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সাক্ষাতে নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। 

এর আগে গত ২০ মার্চ ঢাকায় বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারি সংলাপে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা বিষয়ক ‘জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্টের (জিসোমিয়া চুক্তি)’ খসড়া হস্তান্তর করেছে। এ ছাড়া ইন্দো-প্যাসিফিকে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে ঢাকার আরো ভূমিকা চেয়েছে ওয়াশিংটন। 

পেন্টাগনের এই প্রতিবেদনের সূত্র হচ্ছে, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তৃতীয় লয়েড জে অস্টিনের সফরসঙ্গী সাংবাদিকদের সঙ্গে হাওয়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর প্যাসিফিক অঞ্চলের চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল পিটার এন বেনচফ, নৌবাহিনীর প্যাসিফিক ফ্লিটের অধিনায়ক অ্যাডমিরাল স্যামুয়েল পাপারো ও প্যাসিফিক এয়ার ফোর্সের অধিনায়ক জেনারেল কেনেথ এস উইলসবাচের মতবিনিময়। ওই অধিনায়করাও তাঁদের আলোচনায় ইন্দো-প্যাসিফিকে অংশীদারি জোরদারের কথা বলেছেন। 

প্রতিবেদন বলছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলজুড়ে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় সম্মিলিত পদ্ধতি প্রয়োজন বলে মনে করেন ওই তিন অধিনায়ক। তাঁদের মতে, চীন ও রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী। ‘দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র’ উত্তর কোরিয়া প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের চমকে দিতে পারে। এ ছাড়া এই অঞ্চলে চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হুমকি সব সময়ই আছে। 

প্রতিবেদন বলা হয়, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় অপারেশন সমন্বয়ে মার্কিন প্যাসিফিক ফ্লিট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ‘নোবেল ইগল’ অনুশীলনে দুটি কানাডীয় ফ্রিগেট, দুটি অস্ট্রেলীয় ফ্রিগেট, দুটি জাপানিজ ডেস্ট্রয়ার এবং একটি মার্কিন ডেস্ট্রয়ার দক্ষিণ চীন সাগরে তৎপর ছিল। 

নৌবাহিনীর প্যাসিফিক ফ্লিটের অধিনায়ক অ্যাডমিরাল স্যামুয়েল পাপারো বলেন, ‘বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরের সঙ্গে আমাদের সম্মিলিত প্রস্তুতি ও অনুশীলনগুলো অংশীদারির উদাহরণ। এসব এলাকায় আমাদের আরো দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উদ্যোগ নিতে হবে। ’

যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ে হিকাম বিমানবাহিনী ঘাঁটিতে হওয়া ওই মতবিনিময়ে প্যাসিফিক এয়ার ফোর্সের অধিনায়ক জেনারেল কেনেথ এস উইলসবাচ বলেন, ‘অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকে ভূমিকা রাখতে সহযোগিতা করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা এটি মূলত বিমানশক্তির মাধ্যমেই করে থাকি। তবে আমরা এগুলো আমাদের মিত্র ও অংশীদারদের মাধ্যমে করে থাকি। ’

প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন এই অঞ্চলের জন্য ক্রমেই ঝুঁকি হয়ে উঠছে। রাশিয়াও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য শক্তি হিসেবে আছে। জেনারেল উইলসবাচ বলেন, ‘স্পষ্টতই, চীন বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি হতে চায়। এটি স্পষ্ট, চীন বিশ্বের ওপর, বিশেষ করে তার মিত্রদের ওপর তাদের ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে চায়। আর সেটি মোকাবেলা করতেই আমাদের লক্ষ্য অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক। ’

প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন সেনাবাহিনীও মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে অনুশীলন ও অপারেশন পরিচালনা করতে চায়। মার্কিন সেনাবাহিনীর প্যাসিফিক অঞ্চলের চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল পিটার এন বেনচফ বলেন, জটিলতার মধ্যে অংশীদারদের সঙ্গে অনুশীলন ও এর পরিধি বেড়েছে। তিনি বলেন, “থাইল্যান্ডে ‘কোবরা গোল্ড’ এবং ফিলিপাইনের ‘বালিকাটানের’ মতো অনুশীলনগুলো আরো বহুজাতিক হয়ে উঠেছে। কারণ এখানে আমাদের মিত্র ও অংশীদাররা নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তার ক্ষেত্রে পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখতে পাচ্ছেন। ”

এই বিভাগের আরও খবর