img

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আট মাসে দেশের ২৮টি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দুই হাজার ৩০১ জন কন্যাশিশুর বাল্যবিবাহ হয়েছে। গড়ে প্রতি মাসে বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে ২৮৮ জন কন্যাশিশু। এর মধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে মাত্র ১৫ জন কন্যাশিশুর বাল্যবিবাহের খবর। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম।

মাঠ পর্যায়ে সংগ্রহ করা তথ্য থেকে এ চিত্র তুলে ধরা হয়। 
কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের উদ্যোগে এবং এডুকো বাংলাদেশের সহায়তায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশের ২৪টি জাতীয়, স্থানীয় ও অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে শূন্য থেকে ১৯ বছরের কন্যাশিশুদের ওপর নির্যাতনের আরেকটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। 

ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৩ জন কন্যাশিশু। এর মধ্যে যৌতুক দিতে না পারায় পাঁচজন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। আর এই সময়কালে ৫৭৪ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। একক ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৬৪ জন, দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৮৪ জন এবং ৪৩ জন প্রতিবন্ধী কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। 

এই আট মাসে ১৫টি গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে দুজনকে হত্যা করা হয় আর একজন আত্মহত্যা করেছে। একই সময়ে ১৮১ জন কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে। প্রেমে প্রতারণার শিকার হয়েছে ৪৬ জন এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে ৩৫ জন কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে। আটজন কন্যাশিশুকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে আর এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে তিনজন কন্যাশিশু।   

প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি বলেন, এসব নির্যাতনের বেশির ভাগ সংঘটিত হয়েছে রাস্তায়, নিজের বাসায়, নিকটতম আত্মীয়-পরিজন ও গৃহকর্তা কর্তৃক। যৌন নির্যাতনের নতুন ধরন হচ্ছে পর্নোগ্রাফি। সঙ্গে বাড়ছে অন্য সাইবার অপরাধ।   

সংস্থাটির সভাপতি বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কন্যাশিশুর ওপর নির্যাতন দিন দিন বাড়ছে। এটা একটা ব্যাধি। এই ব্যাধির প্রতিকার ও প্রতিরোধ করতে না পারলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। 

বাংলাদেশ ওয়াইডাব্লিউসির সাধারণ সম্পাদক হেলেন মনীষা সরকার বলেন, ‘আজকাল মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক তথ্য সহজে পেয়ে যাচ্ছি আমরা। কিন্তু এসব তথ্য কোন পথে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের? মানুষ হিসেবে আমরা উন্নত হচ্ছি, নাকি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছি, সেটি ভাবতে হবে। ’ 

এডুকো বাংলাদেশের চাইল্ড রাইটস প্রটেকশন স্পেশালিস্ট শহীদুল ইসলাম বলেন, কন্যাশিশু নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা দরকার। এ নিয়ে মাঠ পর্যায়ের গণমাধ্যমকর্মীদেরও আরো জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী আহসানা এ্যানী।

এই বিভাগের আরও খবর