img

যুদ্ধ চাই না, নিষেধাজ্ঞা চাই না’এই কথা প্রধানমন্ত্রীর মুখে মানায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনাসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। 

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আজকে বড় বড় কথা বলছেন বিদেশে গিয়ে। মার্কিনদের ওখানে গেছেন ওখানে গিয়ে বলছেন, যে যুদ্ধ চাই না, নিষেধাজ্ঞা চাই না।কেউ চাই না যুদ্ধ পৃথিবীতে, কেউ চায় না নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু তার (প্রধানমন্ত্রী) মুখে এটা মানায় না। তিনি নিজে এদেশে এই হত্যার সঙ্গে জড়িত। সরকার যখন এই হত্যাগুলো করছে, গুম হয়ে গেছে ৬০০'র ওপরে মানুষ … ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম…। 

মির্জা ফখরুল বলেন, শত শত মানুষ তারা থানায় নিয়ে গিয়ে পঙ্গু করে দিয়েছে, সহস্রাধিক মানুষকে তারা হত্যা করেছে, এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং করেছে। এই কারণে আজকে একটা অত্যন্ত এলিড ফোর্স র‌্যাব যারা দেশে সুনাম কুড়িয়েছিল অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে এই সরকারের অন্যায় আদেশ পালন করতে গিয়ে তাদেরকে আজকে নিষেধাজ্ঞা পড়তে হয়েছে, ৭ জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা পড়েছে। এটা নিয়ে সরকারের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। তারা এটা কিছু কোনো করতে পারে না। তাদের বিরুদ্ধে সবার আগে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন। নিষেধাজ্ঞা ইতিমধ্যে জনগণ দিয়ে দিয়েছে। মানুষ বলে দিয়েছে তোমাদের আর দরকার নাই। বহু হয়েছে, এনাফ ইজ এনাফ। 

শাওনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে ফখরুল বলেন, এই আন্দোলন এই সংগ্রাম, এই আত্মদান, এই রক্তপাত –এটা বিএনপির জন্য নয়, এটা পুরো জাতির জন্য। আজকে সমস্ত জাতি একটা মহাসংকটে পড়েছে। আজকে ওরা গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে যে, পত্র-পত্রিকাগুলো কেউ সাহস করে সত্য কথাটা বলতে পারে না- এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে গেছে। আজকে পত্র-পত্রিকায় আপনারা খেয়াল করে দেখবেন বেশ কতগুলো পত্রিকায় বলেছে যে, শহীদুল ইসলাম শাওন যাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, আওয়ামী পন্থী মিডিয়া বলছে, তাকে নাকি পেছন থেকে ইট মারাতে সে মারা গেছে। 
 
'অথচ শাওনের যে ডেথ সার্টিফিকেট তাতে পরিস্কার করে বলা হয়েছে, মেসিভ ব্রেইন ইজুরি ডিউ টু গান শট। ছবিটা আমি দেখাব না। এখানে শিশুরা আছে। আমার কাছে সেই ছবিও আছে (মোবাইল দেখিয়ে)। মাথার খুলি পর্যন্ত উড়ে গেছে। এই দেশে, এই রাষ্ট্রে যারা গণতন্ত্রের কথা বলে আমাদের সেই সমস্ত ভয়াবহ গণতন্ত্র হরণকারীরা তখন লজ্জ্বায় ধিক্কার দেওয়া ছাড়া আর কিছু আসে না'। 

এ সময় তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। বলেন, সারা দেশে জুড়ে আমরা আন্দোলন করছি জনগণের সমস্যা নিয়ে। এই আন্দোলনে ইতিমধ্যে আমাদের চারজন তরুণ যুবক প্রাণ দিয়েছেন। গত পরশু মুন্সিগঞ্জের একজন যুব দলকর্মী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে মারা গেছেন। তার (শহীদুল ইসলাম শাওন) ছোট্ট আট মাসের একটা বাচ্চা, স্ত্রী, বাবা-মা-এদের বাঁচিয়ে রাখতে তাদের জীবন-ধারণের জন্য একটা অটো চার্জার চালাতেন। সেই ছেলে যখন দলের কর্মসূচি ছিল সে সকলের সঙ্গে গিয়ে যখন প্রতিবাদ করছিলেন সেই সময়ে এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট গণতন্ত্রবিরোধী সরকারের পেটুয়া পুলিশ বাহিনীর গুলিতে ইনজোরড হয়। তারপর তাকে হাসপাতাল নিলে গত পরশু রাতে সে মারা যায়। এজন্য আজকে ভারাক্রান্ত, আমরা এখানে যারা আছি সবাই। 

এই সরকার মুক্তিযুদ্ধকে পুরোপুরি বিকৃত করেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পুরোপুরিভাবে বিকৃত করা হচ্ছে। শুধু আংশিক নয়, পুরোপুরিভাবে একটা ভিন্ন নেরেটিভ একটা ভিন্ন ধারণা সৃষ্টি করা হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিল একদিনে নয়, দীর্ঘকাল ধরে সংগ্রাম হয়েছে তাদের স্বাধীনতার জন্যে, তাদের স্বাধিকারের জন্য। সেই সংগ্রামে আমাদের অনেক ত্যাগী নেতা তাদের অবদান আছে, আত্মত্যাগ আছে। ওই দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যে অনেকে প্রাণ দিয়েছেন। তাদের কথা কোথাও উল্লেখ করা হয় না। 

মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে বিএনপির জাতীয় কমিটির কার্যক্রমের প্রশংসা করেন তিনি। 

এ সময় একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়ার অবদানের কথাগুলো তুলে ধরে তাকে ‘প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে অভিহিত করেন মির্জা ফখরুল। 

অনুষ্ঠানে বিএনপির অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক লুতফর রহমান, অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক কামরুল আহসান, বিএনপির সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সোহরাব উদ্দিন, শামসুজ্জোহা মেহেদি, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর