img

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে কেন্দ্রসচিবসহ তিন শিক্ষককে আটক করেছে পুলিশ। চারজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হলেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অন্যতম সহযোগী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে আসামি না করায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় চার বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করেছে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড। 

জানা গেছে, থানায় প্রশ্ন বাছাইয়ের (শর্টিং) সময় ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওই কেন্দ্রের কেন্দ্রসচিব লুৎফর রহমান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার আব্দুর রহমানের যোগসাজশে বাংলা ১ম পত্রের প্রশ্নপত্রের প্যাকেটের ভেতর বাংলা ২য় পত্র, ইংরেজি ১ম ও ২য় পত্রের প্রশ্নপত্রের একটি করে খাম ঢুকিয়ে নেন এবং প্যাকেট সিলগালা করে তার ওপর স্বাক্ষর করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান।

বাংলা ১ম পত্রের পরীক্ষার দিন যথানিয়মে থানা থেকে বাংলা ১ম পত্রের প্যাকেট এনে তা খুলে বাংলা ২য় পত্র, ইংরেজি ১ম ও ২য় পত্রের খামটি কৌশলে সরিয়ে ফেলেন। এ সময় কেন্দ্রে দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার বোর্ডের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী পাঠানো প্রশ্নপত্রের খাম গণনা করার নিয়ম থাকলেও তারা দায়িত্ব অবহেলা করে তা করেননি।  

পরে প্রধান শিক্ষক কয়েকজন শিক্ষকের সহায়তায় ফাঁস করা প্রশ্নপত্রের উত্তরমালা তৈরি করে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে (চুক্তিতে সব সেট) ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি করেন। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনাটি স্থানীয় সাংবাদিকদের নজরে এলে বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করা হলে তারা প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেন। পরে ইংরেজি ২য় পত্র পরীক্ষার  প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় নড়েচড়ে বসে পুলিশ ও প্রশাসন।  

মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) ইংরেজি ২য় পত্র পরীক্ষার দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপক কুমার দেব শর্মা, সহকারী পুলিশ সুপার মোর্শেদুল হাসান, ওসি আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল প্রধান শিক্ষকের কক্ষে অভিযান চালিয়ে গণিত, কৃষিবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নের প্রশ্নপত্র পায়। যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা এখনো হয়নি।  

উল্লেখ্য, পুলিশ জানতে পারে, একইভাবে ইংরেজি ১ম পত্রের পরীক্ষার প্যাকেটে এই প্রশ্নগুলো ঢোকানো ছিল। আর এ প্রশ্নগুলো প্রধান শিক্ষকের কক্ষে রয়েছে নিশ্চিত হয়ে তারা অভিযান চালায়। পরে বিকেলে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান ও প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানকে থানায় আনা হলেও রাতে প্রধান শিক্ষককে আটক করা হয় এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে ইংরেজি শিক্ষক আমিনুর রহমান রাসেল, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক জোবায়ের হোসাইনকে আটক করে এবং বুধবার ভোরে হামিদুল ইসলাম, সোহেল আল মামুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে।  

মামলার অপর আসামি ক্লার্ক আবু হানিফ পলাতক রয়েছেন। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তার অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা না বলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। 

এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার মোর্শেদুল হাসান জানান, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ট্যাগ অফিসার আদম মালিক চৌধুরী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। পরবর্তী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে কি না সে ব্যাপারে বোর্ড কর্তৃপক্ষ  সিদ্ধান্ত নেবে। 

ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে। আরো কারো সম্পৃক্ততা থাকলে তাদেরকেও গ্রেপ্তার করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর