img

বাজেটে বিশাল লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া থাকলেও অর্থবছরের শুরুতে রাজস্ব আহরণ কম হচ্ছে। কারণ রাজস্ব আহরণ ও সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়গুলোর সুষ্ঠু কোনো পরিকল্পনা নেই। নিজেদের এই ব্যর্থতা ঢাকতে অর্থবছরের শেষের দিকে ব্যয়ের হিড়িক পড়ে। ফলে বাজেটে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা যাচ্ছে না।সামগ্রিকভাবে প্রভাব পড়ছে বাজেট বাস্তবায়নে। 

তাই গতকাল রবিবার অর্থ মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নে একটি নীতিমালা জারি করেছে। নীতিমালাটি ৬৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়েছে। অর্থবছরের শুরু থেকে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো যাতে পরিকল্পিতভাবে বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারে, সে জন্য অর্থ বিভাগ নির্দিষ্ট কিছু ফরমও তৈরি করে দিয়েছে। আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সবাইকে ওই ফরম অনুযায়ী সুনির্দিষ্টভাবে পরিকল্পনা তৈরি করে অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে। 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে বিপাকে রয়েছে সরকার। কোনো অর্থবছরেই পুরো বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। এমনকি সংশোধিত বাজেটও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই ২০২১ থেকে মার্চ ২০২২) বাজেট বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মূল বাজেটের ৪৩.৫১ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের ৪৪ শতাংশ। এর আগের গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল মূল বাজেটের ৪৩ শতাংশ। 

বাজেট উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে মূল বাজেটের গড়ে ৮১ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের গড়ে ৮৬.৮০ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে চলতি অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার বাড়াতে নীতিমালা জারি করা হয়েছে। 

শেষে ব্যয়ের হিড়িকে বিশৃঙ্খলা

নীতিমালায় অর্থবছরের শেষ দিকে ব্যয়ের হিড়িক পড়ে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বাজেট বাস্তবায়ন অর্থবছরের প্রথমার্ধে চলে ধীরগতিতে। অর্থবছরের শুরুর দিকে বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে যেমন ধীরগতি দেখা যায়, তেমনি বেতন-ভাতা ছাড়া অন্যান্য খাতের বিপরীতে ব্যয়ের পরিমাণও কম থাকে। তবে অর্থবছরের শেষ দিকে বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, মেরামত, সংরক্ষণ, নির্মাণ ও পূর্ত এবং মালপত্র সংগ্রহের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয়ের গুণ-মান নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। বরং বছরের শেষে এসে সরকারকে অপরিকল্পিত ঋণের দায় নিতে হয়। ফলে বাজেট শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যায় না। 

আয়-ব্যয়ে পরিকল্পনা নেই

সরকারের আয় ও ব্যয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকার ব্যর্থতা স্বীকার করে নীতিমালায় বলা হয়, সরকারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্যহীনতার প্রধান কারণ রাজস্ব আহরণ ও সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকা। জাতীয় সংসদ অনুমোদিত বাজেট সুষ্ঠুভাবে সময়মতো বাস্তবায়নে আগাম পরিকল্পনা নেওয়া এবং তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে অপরিকল্পিত সরকারি ঋণ এড়ানো ও ঋণজনিত ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমানো সম্ভব হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ যাতে বাজেট বাস্তবায়নের একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিতে পারে, সে জন্য নীতিমালা ও পদ্ধতিসহ বিভিন্ন ফরম তৈরি করেছে অর্থ বিভাগ। 

যে নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে

অর্থ বিভাগ বলেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটেও কিছু কার্যক্রম ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কার্যক্রম যথাসময়ে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট ও সময়নিষ্ঠ পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন। 

২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেটে ঘোষিত কার্যক্রমের মধ্যে যেগুলো এখনো বাস্তবায়নাধীন এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ঘোষিত কার্যক্রমগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্দিষ্ট ফরম ব্যবহার করে পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। পরে এগুলো বাস্তবায়নের সর্বশেষ অগ্রগতির প্রতিবেদন ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে। 

রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে কোয়ার্টারভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা তৈরি করতে হবে উল্লেখ করে নীতিমালায় বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বিভিন্ন খাতের বিপরীতে ধার্য করা লক্ষ্যমাত্রার ভিত্তিতে কোয়ার্টারভিত্তিক রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। কোনো খাতের রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে মৌসুমভিত্তিক কমবেশির রেকর্ড থাকলে তা বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট আইটেমের বিপরীতে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর