img

এশিয়া কাপে আসার পর থেকে হোটেল আর মাঠের বাইরে এত দিন কোথাও তেমন যাননি মাসুদুর রহমান মুকুল। একটি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ পরিচালনা করার পর আরেকটির অপেক্ষা আর উত্তেজনায় কেটে গেছে তাঁর একেকটি দিন। সাফল্যের সঙ্গে সেই অপেক্ষাও ফুরানোর পর গতকাল দুবাইয়ের এক শপিং মলে ভীষণ ফুরফুরে বাংলাদেশের এই আম্পায়ার বললেন ‘মুকুল’ থেকে বিকশিত হয়ে বড় কিছু হওয়ার স্বপ্নের কথাও। 

প্রশ্ন : দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর দুটি লড়াইয়ে আপনি অনফিল্ড আম্পায়ার।স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ব্যাপার নিশ্চয়ই?

মাসুদুর রহমান : সত্যিই তা-ই। সেই ছোটবেলা থেকেই জানি, এটি ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ম্যাচ। ক্রিকেট খেলেছি, খেলা ছেড়ে আম্পায়ার হওয়ার পর থেকেই এই চাপের ম্যাচে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতাম। 

প্রশ্ন : স্বপ্নের দুটি দিন পার করলেন। সবচেয়ে অদ্ভুত লেগেছে কোন ব্যাপারটি?

মাসুদুর : দুই হাত দূরে দাঁড়ানো কারো কথাও শুনতে না পাওয়া। আমাদের মিরপুরও দর্শকে গমগম করে। কিন্তু এ রকম হয় না। একটি কারণ বোধ হয় এটি যে দুবাই স্টেডিয়ামের ওপরিভাগটা। অনেকটাই ছাদের মতো করে ঢাকা বলে ভেতরের শব্দটা জোরালো হয় আরো। অনেক সময়ই তাই সতীর্থ আম্পায়ারের সঙ্গে কথা হয় কানে কানে!

প্রশ্ন : আর সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয়?

মাসুদুর : বাংলাদেশের একজন আম্পায়ারকে নিয়ে ইতিবাচক কথাবার্তাই সবচেয়ে ভালো লাগার দিক। আপনারা জানেন, আমাদের দেশের আম্পায়াররা সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও পিছিয়ে। এই পিছিয়ে থাকা অংশের প্রতিনিধি হিসেবে আমি নিজেদের অবস্থান ওপরে নিয়ে যেতে চাই। এখন পর্যন্ত আমরা অবহেলিতই। 

প্রশ্ন : ব্যাটে-বলে তো আর সুযোগ নেই। অবহেলার জবাব তাহলে দারুণ আম্পায়ারিং দিয়েই দিতে চান?

মাসুদুর : এটি জবাব দেওয়ার ব্যাপার না। সাকিব-তামিমদের মতো আমিও কিন্তু এই আসরে বাংলাদেশের একজন পতাকাবাহী। ওরা ভালো খেললে যেমন পুরো দেশ গর্বিত হয়, তেমনি ভালো আম্পায়ারিং দিয়েই দেশের গৌরব বাড়াতে চাই। আমিই শুধু নই, এই পর্যায়ে দাঁড়ানোর মতো ভালো আম্পায়ার আরো আছে বাংলাদেশের। আমরা সবাই মিলে পরের প্রজন্মের জন্য দারুণ একটি প্ল্যাটফরম দিয়ে যেতে চাই। যাতে ওদের কেউ একদিন বিশ্বকাপ ফাইনালেও দাঁড়াতে পারে। সাকিব-তামিমরাও তো আমাদের বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখায়। 

প্রশ্ন : ম্যাচের আগে ক্রিকেটাররা নেট করেন। আপনার নেটটা কোথায় হয়?

মাসুদুর : (হাসি...) আমার নেট হয় হোটেলে নিজের রুমে। জানালায় দাঁড়িয়ে আমি মনে মনে নিজের কথাগুলো বলি। আর মাঠে গিয়ে যা যা করতে হয়, এর সবই ম্যাচের আগের দিন রাতে হোটেলে করে নিই। 

প্রশ্ন : ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ পরিচালনার বিষয়ে কারো সাহায্য নিয়েছেন?

মাসুদুর : অবশ্যই। দেশে সৈকত (শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ) ও মনি ভাইরা (এনামুল হক) ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ করেছেন। ওনাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এখানে এসে কথা বলেছি শ্রীলঙ্কান রুচিরা পালিয়াগুরুগে ও ভারতের অনিল চৌধুরীর সঙ্গে, যাঁরা এ রকম অনেক ম্যাচ করেছেন। আম্পায়ারদেরও দুই দলের ক্রিকেটারদের খেলার ধরন-ধারণ বোঝার ব্যাপার আছে। অনিলদা যেমন আমাকে বলেছিলেন, (যুজবেন্দ্র) চাহাল স্টাম্প সোজা বল করে অনেক এবং হার্দিক (পাণ্ডে) বোলিং করে ‘বডিলাইন’-এ। আম্পায়ারিং করতে দাঁড়ালে এই জানা জিনিসগুলো খুব কাজে দেয়। 

প্রশ্ন : আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটারদের কখনো কখনো ফুঁসে ওঠার বিষয়েও নিশ্চয়ই পূর্বধারণা নিয়েছিলেন?

মাসুদুর : দুটি ম্যাচ তো করলাম। মনে হয় না আমি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেটিতে ওরকম কিছু হওয়ার সুযোগ ছিল। তবে নিজেকে এই কথাও বলে যাচ্ছিলাম যে ভুল করলেও যেন আমি ঘাবড়ে না যাই। পরের ডেলিভারি থেকেই যেন দৃঢ়তার সঙ্গে ম্যাচ চালাতে পারি। আম্পায়ারদের ওই দৃঢ়তার মার্কিংই সবচেয়ে বেশি। 

প্রশ্ন : সুপার ফোরের ম্যাচে আসিফ আলীর বিপক্ষে কট বিহাইন্ডের আবেদনে ভারতের নেওয়া রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত আসার পর দেখলাম রোহিত শর্মা কী যেন বলছিলেন আপনাকে। 

মাসুদুর : সে এসে জিজ্ঞেস করছিল, ‘স্নিকোমিটারে তো ছোট একটা স্পাইক দেখলাম। ’ আমি ওকে ব্যাখ্যা দিলাম, ‘বল আর গ্লাভসের দূরত্ব যেহেতু পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, তাই ওই স্পাইকটি হতে পারে যেকোনো কিছু থেকেই। এমনকি বাতাস থেকেও। ’ ভারত-পাকিস্তান প্রথম ম্যাচে বল ফখর জামানের ব্যাট ছুঁয়ে গেছে কি না, তা নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটাররাও খুব নিশ্চিত ছিল না। দীনেশ কার্তিক এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘সত্যিই কি আপনি শব্দ শুনেছেন?’ শুনেছি বলেই তো আউট দিয়েছিলাম।

এই বিভাগের আরও খবর