img

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে দিন দিন উষ্ণ হচ্ছে পৃথিবী। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে দিন দিন ক্ষুদ্র হয়ে আসছে বিশ্বের স্বাদু পানির উৎসগুলো। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খরা ও অনাবৃষ্টি। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে কৃষি, জলজ ও সেচ ব্যবস্থাপনাতেও। তবে পরিস্থিতি উত্তরণে পথ দেখাচ্ছে প্রযুক্তির ব্যবহার।

ক্যালিফোর্নিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় কৃষিসমৃদ্ধ অঙ্গরাজ্য। সেখানকার বিশাল বিস্তৃত কৃষি প্রান্তরগুলোতে সেচের প্রয়োজনে জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য খাল। কৃষি সেচে ব্যবহৃত এ খালগুলোকে সোলার প্যানেল দিয়ে মুড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ। ফলে বাড়তি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি রক্ষা হবে জৈব ও পরিবেশগত ভারসাম্য।

 



এ উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা হয়েছে একটি পাইলট প্রকল্প। ক্যালিফোর্নিয়ার টারলক ইরিগেশন ডিস্ট্রিক্ট এ বাস্তবায়ন হচ্ছে প্রজেক্ট নেক্সাস হিসেবে অভিহিত এই পাইলট প্রকল্প। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো বাড়তি জমি নষ্ট না করেই কৃষিখালগুলো ব্যবহার করে ক্যালিফোর্নিয়াকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সরবরাহ করা। তবে আরও কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে।

যেমন খালগুলোর ওপর সোলার প্যানেল বসানোয় সূর্যের তাপে খালের পানি বাষ্পীভূত হওয়ার প্রবণতা রোধ হয়েছে। ফলে কোটি কোটি গ্যালন পানি বাতাসে মিলিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে। এ ছাড়া পানির ওপর স্থাপন করায় বৃদ্ধি পেয়েছে প্যানেলগুলোর স্থায়িত্ব ও কার্যকারিতা। এ ছাড়া পানির তাপমাত্রা ঠান্ডা থাকায় খালগুলোতে শেওলা জমার প্রবণতাও রোধ হয়েছে। এতে ঠিক থাকছে সেচের পানির গুণগত মান।

২০২৫ সালের মধ্যে জ্বালানি চাহিদার ৫০ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৬০ শতাংশকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে পূরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য। আশা করা হচ্ছে, সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যাপক সহায়ক হবে এ প্রজেক্ট নেক্সাস। ২ কোটি ডলারের এই প্রকল্পে তহবিলের যোগানও দিচ্ছে রাজ্য কর্তৃপক্ষ।

এ ব্যাপারে টারলক ইরিগেশন ডিস্ট্রিক্ট-এর ব্যবস্থাপক জোশ ওয়েমার রয়টার্সকে বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যাপারে আমাদের একটি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সেটা পূরণের জন্য এটি খুবই কার্যকর একটি উপায়।

তবে পুরো বিষয়টির মূল রূপকার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বিজ্ঞানী ব্রান্ডি ম্যাককুইন। এ সংক্রান্ত তার গবেষণাপত্র ২০২১ সালে ছাপা হয় নেচার সাসটেইনেবিলিটি নামের একটি সাময়িকীতে। সেখান থেকেই প্রজেক্ট নেক্সাসের সূত্রপাত।

গবেষণায় ম্যাককুইন ক্যালিফোর্নিয়ার শত শত খালকে সোলার প্যানেল দিয়ে মুড়িয়ে দেয়ার কথা বলেন। সবগুলো খালকে একত্রে ধরলে এগুলোর দৈর্ঘ্য হয় ৬ হাজার ৪৩৭ কিলোমিটার। সেগুলোকে সোলার প্যানেল দিয়ে মুড়িয়ে দিলে এর মাধ্যমে ১৩ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সাড়ে ৭ লাখ বাড়ির গৃহস্থালী বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর জন্য এক গিগাওয়াট বিদ্যুতই যথেষ্ট। পাশাপাশি এর মাধ্যমে বাষ্পীভূত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে ৬৩ বিলিয়ন গ্যালন পানি। যা ২০ লাখ মানুষের ব্যবহার এবং ৫০ হাজার একর জমিতে সেচ দেয়ার জন্য যথেষ্ট।

যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের প্রকল্প নতুন হলেও এর আগে একই ধরনের প্রকল্প শুরু হয়েছিল ভারতের গুজরাটেও।

প্রজেক্ট নেক্সাসের কাজ শেষ হলে এর প্রভাবের ওপর আরও গবেষণা চালাবেন ম্যাককুইন ও অন্যান্য বিজ্ঞানী। তাদের গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ক্যালিফোর্নিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য স্থানেও নেয়া হবে এই প্রকল্প ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ।

এই বিভাগের আরও খবর