img

মোবাইল ফোনে আর হবে না নেটওয়ার্কের বিড়ম্বনা। আশঙ্কা থাকবে না টাওয়ারের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ারও। গহীন সমুদ্র কিংবা নির্জন মরু প্রান্তর, বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকেই হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি দিয়েই দিনরাত যে কোনো সময় প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা যাবে। এমনই এক তাক লাগানো প্রযুক্তি নিয়ে এবার বিশ্বের সামনে হাজির হলেন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক।

হাতের মোবাইল ফোনটিকেই পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইটের সঙ্গে যুক্ত করে বাকি পৃথিবীর সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রযুক্তি বাজারে ছাড়তে যাচ্ছেন ইলন মাস্ক।

নিত্যনতুন উদ্ভাবন ও কাণ্ডকারখানা করে মানুষকে প্রায়ই চমকে দেয়া ইলন মাস্কের চমকের ভাণ্ডারে সর্বশেষ সংযোজন হলো এ স্যাটেলাইট সংযুক্ত মোবাইল ফোন।

আপাতত এ মোবাইল ফোনের স্যাটেলাইট সেবা যুক্তরাষ্ট্রে চালু হবে। যৌথভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘টি মোবাইল’র সঙ্গে এ সেবা বাজারে আনতে যাচ্ছে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন মহাকাশ প্রযুক্তি সংস্থা স্পেসএক্স। ‘টি মোবাইল’র গ্রাহকরা স্পেসএক্স এর স্টারলিংক স্যাটেলাইটের সাহায্যে এ সেবা পাবেন।

বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে স্পেসএক্স এর উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ স্যাটেলাইট ভিত্তিক মোবাইল ফোন সার্ভিস বাজারে আনার ঘোষণা দেন ইলন মাস্ক ও টি মোবাইলের প্রেসিডেন্ট মাইক সিভার্ট।

তাদের ঘোষণা অনুযায়ী, ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্স এর স্টারলিংক স্যাটেলাইটের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের গ্রাহকদের এ স্যাটেলাইট মোবাইল ফোনের সুবিধা দেবে টি মোবাইল। এর মাধ্যমে টি মোবাইলের গ্রাহকরা সরাসরি তাদের হাতে থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা স্পেসএক্স এর স্যাটেলাইটের সাহায্যে অন্য গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারবেন।

এর ফলে সমুদ্র কিংবা মরুভূমির মত বিরান বা জনবিরল প্রান্তর থেকেও বাকি পৃথিবীর সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ রাখতে পারবেন টি মোবাইল ব্যবহারকারীরা।

এ প্রযুক্তির সবচেয়ে সুবিধাজনক বিষয়টি হলো এ সেবা পেতে গ্রাহকদের বাড়তি কোনো ডিভাইস কিনতে হবে না। হাতে থাকা বর্তমান প্রযুক্তির মোবাইল ফোন বা স্মার্টফোনই এ যোগাযোগের জন্য যথেষ্ট। এ প্রযুক্তিতে আপাতত শুধু টেক্সট ম্যাসেজ ও ছবি পাঠানো যাবে। তবে খুব শিগগিরই স্টারলিংকের দ্বিতীয় প্রজন্মের স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সরাসরি ভিডিওকলে যোগাযোগ করার সুবিধা পাবেন গ্রাহকরা।

এ ব্যাপারে ইলন মাস্ক বলেন, স্টারলিংকের দ্বিতীয় প্রজন্মের স্যাটেলাইটগুলোর মাধ্যমে সরাসরি মোবাইল ফোনে কথা বলা যাবে। বর্তমানে হাতে থাকা ফোনের মাধ্যমেই আপনারা সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন। তবে বর্তমানে স্টারলিংকের টার্মিনালগুলোতে এ ধরনের ব্যান্ডউইথ এখনও সংযুক্ত করা হয়নি। তারপরও এটা দিয়ে টেক্সট ম্যাসেজ ও ছবি পাঠানো যাবে। এমনকি নেটওয়ার্কে ভিড় না থাকলে অল্পস্বল্প ভিডিওবার্তাও পাঠানো যাবে। তার মানে আপনার মোবাইল ফোনের জন্য পৃথিবীতে আর কোনো ডেড জোন থাকছে না।
 

ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই পরবর্তী প্রজন্মের স্টারশিপ রকেটের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের স্টারলিংক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে যাচ্ছে স্পেসএক্স। এ স্যাটেলাইটে বৃহৎ আকৃতির অ্যান্টেনা সংযুক্ত থাকবে। যা টি মোবাইলের নেটওয়ার্কে থাকা মোবাইল ফোনগুলোকে সরাসরি সংযুক্ত রাখতে পারবে। ফলে সেখান থেকে সহজেই সরাসরি ভিডিও কল করা সম্ভব হবে। বৈদ্যুতিক গাড়ি টেসলাতেও সংযুক্ত থাকবে এ স্পেসএক্স স্যাটেলাইট। মূলত যে সব এলাকায় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কের কাভারেজ নেই সেখানে যোগাযোগ রাখতে ব্যাপক কার্যকর হবে।

প্রচলিত মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতার বাইরে থাকা প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থানরত ব্যবহারকারীদের উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা দেয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে স্পেসএক্স এর স্টারলিংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মাস্ক। মহাকাশে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে প্রায় তিন হাজার কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট স্থাপন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

নেটওয়ার্ক হিসেবে টি মোবাইলের মিডব্যান্ড স্পেকট্রাম ব্যবহার করবে স্টারলিংকের স্যাটেলাইটগুলো। এ প্রযুক্তির মধ্য দিয়ে আক্ষরিক অর্থে যুক্তরাষ্ট্রে আর নেটওয়ার্কের বাইরে কোনো জায়গা থাকছে না। ধারণা করা হচ্ছে, খুব শিগগিরই এ প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়বে পুরো বিশ্বে। এ প্রযুক্তি প্রচলিত স্যাটেলাইট ফোনের ধারণাকেও অচল করে দিতে পারে।

সূত্র: রয়টার্স ও মিন্ট

এই বিভাগের আরও খবর