img

ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেছেন প্রবীণ নেতা গুলাম নবি আজাদ। দল ছাড়ার পরই নতুন দল গড়তে কাজ শুরু করেছেন তিনি। শুক্রবার (২৬ আগস্ট) এ খবর জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

শুক্রবারই কংগ্রেস ছাড়ার ঘোষণা দেন গুলাম নবি আজাদ। এদিন দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকেই ইস্তফা দেন তিনি। এনডিটিভি জানায়, ৫ পাতার পদত্যাগপত্রে গান্ধী পরিবার বিশেষ করে রাহুল গান্ধীর কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি।

খবরে বলা হয়, কংগ্রেস ছাড়ার পরপরই নতুন দল গড়ার কাজ শুরু করেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক এ মুখ্যমন্ত্রী। তার এ দলটি সম্ভবত জম্মু ও কাশ্মীরভিত্তিক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তার পদত্যাগের সমর্থনে জম্মু ও কাশ্মীর কংগ্রেসের আরও পাঁচ নেতাও পদত্যাগ করেছেন।

কংগ্রেসের বিদ্রোহী গোষ্ঠী জি-২৩’এর সব থেকে বড় নেতা ছিলেন গুলাম নবি আজাদ। কাজেই তিনি নতুন দল গড়লে কংগ্রেসের জি-২৩ পুরোটাই শতাব্দী প্রাচীন দল ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

টিভিনাইনবাংলা বলেছে, আজ়াদের নতুন দল জম্মু ও কাশ্মীরভিত্তিক হবে নাকি সর্বভারতীয় দল হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে তাকে যখন বিরোধীদের যৌথ প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, সেই সময় গুলাম নবি আজ়াদ বলেছিলেন, উপত্যকার রাজনীতিতে তার থাকা দরকার। কাজেই কাশ্মীর তার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের অগ্রাধিকারে থাকবে বলেই অনুমান করা হচ্ছে।

ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আজাদ বলেছেন, ‘আমি জম্মু ও কাশ্মীরে ফিরে যাব। রাজ্যে আমার নিজস্ব দল গঠন করব। জাতীয় সম্ভাবনা পরে যাচাই করব।’ চলতি বছরের শেষেই জম্মু ও কাশ্মীরে নির্বাচন হওয়ার কথা।

তবে তার পদত্যাগপত্রে অন্যরকম রাজনৈতিক পদক্ষেপের ইঙ্গিত রয়েছে। আজাদ লিখেছেন, ‘আমি ও আমার অন্য সহকর্মীরা এখন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বাইরে সেই আদর্শকে তুলে ধরার জন্য উদ্যমী হব যার জন্য আমরা আমাদের পুরো জীবনকে উৎসর্গ করেছি।’

এরপরও গুলাম নবি আজাদ কংগ্রেস ছাড়ার ঘোষণা করার পর থেকেই তিনি বিজেপিতে যোগ দেবেন এমন জল্পনা শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই বিজেপির নেতা নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে গুলাম নবি আজাদের ব্যক্তিগত ভাল সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে সেই জল্পনা উসকে দেন।

তবে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে গুলাম নবি আজাদই স্পষ্ট করে দেন, তিনি আপাতত ‘আজাদ’ই থাকবেন, কারও ‘গোলামি’ করবেন না। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীকে লেখা পাঁচ পৃষ্ঠার পদত্যাগপত্রের ছত্রে ছত্রে রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করেছেন তিনি।

রাহুল গান্ধীকে তিনি ‘অপরিপক্ক’ ও ‘রাজনীতির বিষয়ে শিশুসুলভ’ বলে অভিহিত করেছেন। তারপরও তিনি দাবি করেছেন, গান্ধী পরিবারের প্রতি ব্যক্তিগত স্তরে তার শ্রদ্ধা রয়েছে। তিনি যা বলেছেন, তা কংগ্রেস দলের স্বার্থে বলেছেন।

আজাদ বলেছেন, ‘ব্যক্তিগত স্তরে সমগ্র গান্ধী পরিবারের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। এখানে আমি ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা বলছি না। আমি কংগ্রেসের পতনের কথা বলছি।’ ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে কাশ্মীরি এই নেতার সম্পর্ক সবসময়েই ভালো ছিল। পরবর্তীকালে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও তার যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা ছিল। কিন্তু রাহুল গান্ধীর থেকে কাঙ্ক্ষিত মর্যাদা তিনি পাননি।

দলীয় সব পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে গুলাম নবি আজাদ বলেন, ‘আজ কংগ্রেসে ৫০ বছর পূর্ণ করলাম। আর বেশিদিন নিতে পারলাম না। আমি ১৯৭৭ সাল থেকে এই দলের সঙ্গে ছিলাম এবং দলের জন্য কাজ করেছি। আমি নিজের জন্য কিছু চেয়েছি, এটা বলা ভুল। আমি সব পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। আমি শুধু সম্মান চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাকে সভা-সমাবেশে অপমান করেছে। দলের জন্য শুভ কামনা রইল। আমাদের পরামর্শ ছিল দলের ভালর জন্যই।’

আজাদের দলত্যাগ নিয়ে ইতোমধ্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কংগ্রেস। দলের দুই শীর্ষ নেতা জয়রাম রমেশ ও অজয় মাকেন বলছেন, ‘ঠিক যে সময় কংগ্রেস এবং গান্ধী পরিবার সর্বশক্তি দিয়ে মোদি সরকারের নীতির বিরুদ্ধে, ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব ও মেরুকরণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামছে, তখন আজাদের এই সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক।’

কংগ্রেসের প্রচার বিভাগের প্রধান জয়রাম রমেশ সরাসরি মোদির সঙ্গে আজাদের আঁতাতের অভিযোগ করেছেন। এক টুইটার বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তিকে কংগ্রেস সবচেয়ে বেশি সম্মান দিয়েছে, সেই ব্যক্তিই কংগ্রেস নেতৃত্বকে সরাসরি ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন, এটাই ওর চরিত্র বুঝিয়ে দেয়।’

এই বিভাগের আরও খবর