img

এক স্বামীর ৭ স্ত্রী। কেউ জানেন না কারও পরিচয়। মৃত্যুর পর হঠাৎ মরদেহ দেখতে একে একে ছুটে আসেন পাঁচ জন। এমন ঘটনা ঘটেছে রাজধানী ঢাকায়।

ঘটনার শুরুতে আসা যাক। হৃদয়বিদারক ঘটনার মধ্যেই উন্মোচন হয় সাত স্ত্রীর রহস্য। সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে ছেলে হৃদয়কে নিয়ে তার শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন নুর ইসলাম রুবেল। গাড়িতে ছিলেন নববিবাহিত ছেলের বৌ রিয়া মনি, তার মা ফাহিমা আক্তার, খালা ঝর্ণা আক্তার ও তার দুই সন্তান জান্নাতুল এবং জাকারিয়া।

উত্তরার জসিমউদ্দিন মোড়ে আসতেই বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের একটি গার্ডার ক্রেন থেকে কাত হয়ে আছড়ে পড়ে তাদের বহনকারী প্রাইভেট কারের ওপর। মুহূর্তেই মারা যান ৭ অরোহীর ৫ জন। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান নবদম্পতি হৃদয় ও রিয়ামনি।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) ভোর থেকেই হাসপাতাল মর্গে একে একে জড়ো হন ৭ জনের মধ্যে ৫ স্ত্রী। বাকি দুজনের একজন অনেক আগেই মারা গেছেন, অন্যজন আরেক সংসারে এখন গৃহিণী। যার এক সন্তানও রুবেলকে বাবা পরিচয়ে দেখতে আসেন মর্গে।

রুবেলের দ্বিতীয় স্ত্রীর মেয়ে নিপা বলেন, প্রথমে আমার মাকে বিয়ে করেছে, তারপর আমি হওয়ার আগেই আমার মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। মা দেখেছে যখন এরকম করে এবং আমার নানুর বাসা থেকে টাকা পয়সা নিয়ে এসে আর ওখানে যায়নি। অনেকদিন যোগাযোগ ছিল না, তারপর আমি হয়েছি। বড় হওয়ার পর আব্বু আমাদের কাছে ফোন করে, আমাদের বাসায় আসে। আমি ১২ বছর পর আমার আব্বুকে সামনাসামনি দেখি। তারপর আমাকে ঢাকা নিয়ে আসে। উনার অনেকগুলো বউ আছে, সবার সঙ্গে আমাকে দেখা করাইছে, আমি সবার বাসায় গেছি। শুধু মানিকগঞ্জে কোনোদিন যাইনি।

তবে এ ঘটনার জন্ম দেয়ায় উপস্থিত সবার মধ্যেই শুরু হয় নানা আলোচনা। ৫ জন স্ত্রীই শেষ বারের মতো দেখতে আসেন স্বামীর মরদেহ। তখনই জানা যায় এক স্বামীর ৭ স্ত্রীর খবর।

রুবেলকে স্বামী দাবি করা স্ত্রী ফাহিমা বেগম বলেন, দ্বিতীয় স্ত্রীর ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আমি তার সঙ্গে ৩০ বছর সংসার করেছি। কিন্তু তার দ্বিতীয়, না তৃতীয় স্ত্রী আছে সেটা আমি জানি না। আমি শুধু জানি স্বামী আমার। আমার এক সন্তান। তিনি (রুবেল) যেহেতু বায়িংয়ের লাইনে কাজ করত, তাকে ঢাকার বাইরে যাওয়া লাগত, আমি জানতাম এটাই। তাছাড়া আমি কীভাবে বুঝব, আমার কোনোদিন কোনোদিক থেকে অভাব দেয়নি। আমার স্বামী আমাকে বলে গেছে ‘আমার বাবা-মায়ের পাশে আমাকে কবর দিবা, যদি তোমার আগে আমি মারা যাই।’

রুবেলকে স্বামী দাবি করা স্ত্রী সাহিদা আক্তার বলেন, ‘তুমি যদি আমার আগে মারা যাও, তাহলে তোমার কবরের পাশে আর আমি যদি পরে মারা যাই তাহলে তোমার কবরের পাশে আমায় কবর দিও। কারণ আমার এখানেই সবকিছু। এখন আমার আর কিছুই নেই।’

এদের মাঝে, আট বছর সংসার করার পর স্ত্রীর মর্যাদা ফিরে পেতে ও প্রতারণার অভিযোগে গত বছর রুবেলের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেন বলে জানান তার স্ত্রী দাবি করা একজন।

রুবেলকে স্বামী দাবি করা স্ত্রী সালমা আক্তার পুতুল বলেন, ২০১৪ সালে আমাকে মৌখিকভাবে বিয়ে করে আমার সঙ্গে সংসার করেছে। আমাদের কাজী অফিসে বিয়ে হয়নি, সে বিয়ে করবে করবে বলে সাত বছর কাটিয়ে দিয়েছে। এ কারণেই তার নামে আমি গত বছর মামলা দেই, মামলা এখনও চলছে। উনি ব্যবসা করত তো, নানা অজুহাতে আমার কাছ থেকে ১১ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়েছে। পরে হৃদয়ের মায়ের ব্যাপারে যখন আমি জানতে পারি। তখন আমি তাকে চাপ দিতে শুরু করি।’

মর্গে উপস্থিত পাঁচ স্ত্রীর দু'জন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তবে তারা কেউই লাশ গ্রহণ করতে কোনো জটিলতা তৈরি করেননি।

এ থেকে একটু ব্যতিক্রম ছিলেন হৃদয় ও রত্নার দুই পরিবার। তারা দু'পক্ষই  রুবেলের লাশ নিজেরা গ্রহণ করে নিজ নিজ এলাকায় দাফনের কথা বলেন। সৃষ্টি হয় ক্ষণিকের জটিলতা। হৃদয়ের পরিবার চায় দাফন হবে রুবেলের গ্রামের বাড়ি মেহেরপুরের পারিবারিক কবরস্থানে। আর রত্নার পরিবার চায় মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে দাফন হোক তার বাবার।

সাহিদা আক্তারের ছেলে রোমান বলেন, দরকার হলে আমরা গ্রামে নিয়ে যাব। আব্বুর ব্যবসা বাণিজ্য সব কিছু মানিকগঞ্জে। তাই আমরা তাকে সেখানেই দাফন করতে চাই।

ফাহিমা বেগমের ছেলে হৃদয় বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি মেহেরপুরে। আমার বাবাকে আমি মেহেরপুর নিয়ে যাব। আমার বাবার বাবা মানে আমার দাদা যেখানে তাদের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে।

তবে সব জল্পনা কল্পনার পর মানিকগঞ্জে রুবেলের প্রথম নামাজে জানাজা শেষে মেহেরপুরে সমাহিত করার সিদ্ধান্ত হয়।

ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটায় মর্গ থেকে একে একে পাঁচজনের লাশ হস্তান্তর করা হয় তাদের পরিবারের কাছে। আর রুবেলের মরদেহ গ্রহণ করে হৃদয়ের পরিবার। তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় মানিকগঞ্জে।

এই বিভাগের আরও খবর