img

খাদ্য, ওষুধ ও বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে জামালপুরের পোলট্রি খামার। খামারিরা বলছেন, দাম বৃদ্ধির কারণে মুরগি পালন করে যে দাম পাওয়া যাচ্ছে তাতে খামার ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য খামার বন্ধ করে অন্য ব্যবসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অনেকে। ফলে খামারের সঙ্গে জড়িত শত শত মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। তবে বিষয়টি নজরদারি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

জামালপুর সদর উপজেলার পলাশগড়, রামনগর, তিরুথা, কম্পপুর, কেন্দুয়া, হাজিপুর, শরিফুরসহ ১৫টি ইউনিয়নের বেকার সমস্যা সমাধান করতে লেখাপড়া শেষ করে পোলট্রি ব্যবসা শুরু করেন যুবকরা। অনেকেই বিদেশ থেকে এসে খামার গড়ে তুলেন। প্রথমদিকে লাভের মুখ দেখলেও বর্তমানে মুরগির বাচ্চা, খাদ্য, ওষুধ, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মোটা অঙ্কের লোকসানে পড়তে হচ্ছে খামার মালিকদের। ফলে এ ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসার দিকে ঝুঁকছেন খামারিরা।

 

খামার মালিকরা বলছেন, ২০১২-২০১৩ সালে এ ব্যবসায় কিছু লাভের মুখ দেখেছি। এরপর সব কিছুর দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। লাখ লাখ টাকা পুঁজি করে লোকসানে পড়তে হচ্ছে। সরকারিভাবে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের কোনো সহায়তা না দেয়ার কারণে তারা বেকায়দায় পড়ে ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে খামারিরা জানান, একদিনের বাচ্চা কিনে ৬০ থেকে ৭০ দিন লালনপালন করে বাজারে নেয়া পর্যন্ত প্রতি মুরগির জন্য খরচ হয় ১৬০ টাকা। আগে বাচ্চা কিনতে খরচ হতো ১০ থেকে ১২ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ টাকা। খাদ্য ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩ হাজার ১০০ টাকা হয়েছে।

পলাশগড় গ্রামের মাসুদ মিয়া বলেন, ভোকেশনাল স্কুল থেকে লেখাপড়া শেষ করে বেকার ছিলাম। ২০১২ সালে মুরগির খামার দিয়ে ভালোই চলছিল। প্রথম ২-৩ বছর লাভ পেয়েছিলাম। পরে আরও তিনটি খামার গড়ে তুলি। তবে এ খামারে এখন আর আগের মতো লাভ হচ্ছে না। কোনোরকম খামারগুলো টিকিয়ে রেখেছি। এ ছাড়া বর্তমানে আমি ১৪ লাখ টাকা লোকসানে আছি।

 

রামনগর গ্রামের শফিকুল ইসলাম মাস্টার্স পাস করে মুরগি খামার এবং খাদ্য ব্যবসা শুরু করেন। তার দাবি বর্তমানে অনেকেই খাদ্য নিয়ে টাকা দিতে পারছেন না। শফিকুল আরও বলেন, আমার কাছে খাদ্য কিনতেন দেড়শ খামারি। তাদের মধ্যে ১০০ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের কাছে আমার লাখ লাখ টাকা বাকি। আমি বাধ্য হয়েই ৪টি খামার বন্ধ করে দিয়েছি। এদিকে লোকসানে কর্মচারীদের বেতনও দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

 

পলাশগড় গ্রামের রাজু আহমেদ বলেন, ১১টি খামার ছিল তার। সবকিছুর দাম দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় প্রায় ২৫ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।


এ বিষয়ে জামালপুর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে কোন খামার বন্ধ হয়েছে সেটি আমার জানা নেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ খামার বন্ধ করতে পারে। আর খামারিদের ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। তবে জেলার মুরগির মাংসের চাহিদায় কোনো সমস্যা হবে না। জামালপুরে প্রাণিসম্পদ অফিসের হিসাব মতে দুই হাজার ৮৬১টি খামার রয়েছে। 

এই বিভাগের আরও খবর