নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন: স্বল্প আয়ের মানুষ যাবে কোথায়?
রাজধানীর উত্তর বাড্ডা কাঁচাবাজারে ইলিশ মাছের দোকানের সামনে হাতে ব্যাগ নিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন আবদুল আজিজ। কিছুক্ষণ দরদামের পরে শূন্যহাতে ফিরে যান তিনি। মাছের দোকান থেকে ভাঁজ করা ব্যাগ বগলে নিয়ে এভাবেই প্রতিদিন খালি হাতে বাড়ি ফেরেন অনেকেই। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের সাধ ও সাধ্যের গল্প বদলে গেছে বাজারদরের কাছে।
একটা সময় সপ্তাহের ছুটির দিন মানে ছিল দুপরে সবাই একসঙ্গে বসে ভালোমন্দ খাওয়া-দাওয়া। এ দিনটিতে বাসায় মেহমান বেড়াতে আসতেন, ভালো ভালো বাজার হতো। টেবিলের ওপরে সাজানো থাকত গরুর মাংস, মুরগির রোস্ট, ইলিশ দোপেঁয়াজো, ডিমের কোরমা, হরেকরকম সবজি, ডাল আর ঝরঝরে সাদা ভাত।
মধ্যবিত্তদের এ চিরাচরিত চেনারূপ যেন ফিকে হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। এখন গরুর মাংসের কেজি ৭০০-৭২০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০ টাকা, ব্রয়লার ২০০ টাকা, ইলিশ মাঝারি সাইজের কেজি ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা, ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৪৫-১৫০ টাকা, চিকন মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়, আর মিনিকেট চালের কেজি ৭৫ টাকা, নাজিরশাইল ৭৮ টাকা। অর্থাৎ ২৫ হাজার টাকা বেতনের কোনো মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীর কাছে পুরনো দিনের সেই বাজার এখন বিলাসি খাওয়া-দাওয়াতে পরিণত হয়েছে।
সময় সংবাদের সঙ্গে কথা হয় অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মোতালেব হোসেনের। তিনি বলেন, আগে বাজারে গিয়ে এক হালি ইলিশ মাছ কিনে নিয়ে আসতাম ১ হাজার ৫০০ টাকায়। এখন ইলিশের কেজিই ১ হাজার ৫০০ টাকা। এক হালি দূরে থাক, একটি মাঝারি সাইজের ইলিশ কিনতে গেলে কয়েকবার চিন্তা করতে হয়। আগে প্রতি সপ্তাহে গরুর মাংস খাওয়া পড়ত। শুক্রবার মাংস রান্না কিন্তু নিম্নমধ্যবিত্ত-মধ্যবিত্ত পরিবারের একরকমের অঘোষিত রেওয়াজ ছিল। এখন দুই কেজি গরু কিনতে লাগে ১ হাজার ৪০০ টাকা। শুরুর দিকে গরুর বদলে সোনালি মুরগি কিনতাম। সেটার দামও এখন ৩২০ টাকা। শুক্রবার (১২ আগস্ট) বাজারে গিয়ে দেখলাম ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। দোকানদার বলছেন, সামনের সপ্তাহে নাকি দাম বেড়ে হবে ২৫০ টাকা।
অনেক ক্ষোভ ও হতাশা মিশ্রিত কণ্ঠে রামপুরায় বাজারে আসা এক ক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, কী খেয়ে বেঁচে থাকবেন আপনি, আগে টাকা না থাকলে মানুষ ডাল-ভাত-ডিম খেয়ে থাকত। দিন চলে যেত। সেদিনের ৬৫ টাকা চাল এখন ৭৫ টাকা। ডালের দাম ১৪০। আজকে শুনি ডিম ১৫০ টাকা ডজন। মগের মুল্লুক চলছে বাজারে। আমরা নিম্ন স্বল্প আয়ের মানুষ এখন কোথায় যাব, কীভাবে জীবন-জীবিকা চালাব?
মহাখালী কাঁচাবাজারে সবজির দোকানের সামনে কথা হয় সবজি কিনতে আসা রিয়াদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, কয়েক দিন আগেও ৫০০ টাকা নিয়ে বাজারে আসলে দুই ব্যাগ ভরে সবজি নিয়ে বাজারে ফেরা যেত। এখন যেই সবজিই কিনুন প্রতিটির দাম ৬০ টাকার ওপরে। এর নিচে কোনো সবজি নেই। আগে শাকের আঁটি ছিল ১০ টাকা। এখন আঁটি হয়েছে ছোট, দাম হয়েছে ২০ টাকা।