img

অনেকের ধারণা, বেহেশতবাসীর খাবারের কোনো প্রয়োজনই হবে না। আবার কেউ কেউ ভাবেন, বেহেশতের খাবার সম্পর্কে মানুষের কোনো ধারণা নেই। সেক্ষেত্রে সে খাবার হবে নতুন ধরনের, নতুন প্রজাতির যার নাম ও বৈশিষ্ট্য হবে দুনিয়া থেকে আলাদা।

মহান আল্লাহ তা’লা প্রথমেই পবিত্র কোরআন মজিদে মানুষের এ ভুলটি ভেঙে দিয়েছেন। বেহেশতের খাবার হবে দুনিয়ার ফলমূলের মতোই, তবে তার স্বাদ ও গন্ধ হবে অনন্য। কারণ, বেহেশতে নতুন প্রজাতির অপরিচিত ফল দেয়া হলে মানুষ ভড়কে যাবে। কিছু লোক বরং বেহেশতে আম, কাঁঠাল, লিচু, বেল, কলা দেখে মন্তব্য করে বসবে বেহেশতে তো দুনিয়ার মতো ফলই দেয়া হলো।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআন মজিদে আলাহ তা’লা বলেন, 'হে নবী, যারা ইমান এনেছে এবং সৎকাজসমূহ করেছে, আপনি তাদের এমন বেহেশতের সুসংবাদ দিন, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবহমান থাকবে। যখনই তারা খাবার হিসেবে কোনো ফল পাবে, তখনই তারা বলবে, এ তো অবিকল সে ফলই, যা আমরা এর আগেও লাভ করেছিলাম। বস্তুত তাদের একই প্রকৃতির ফল দেয়া হবে এবং সেখানে তাদের জন্য শুদ্ধচারিণী রমণীকুল থাকবে। আর সেখানে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে।’ (সুরা বাকারা: ২৫)।

দুনিয়ায় উত্তম খাবার বলতে আমরা বুঝি পোলাও, কোর্মা, বিরিয়ানি, তেহারি, রুটি-কাবাব, মুরগি ইত্যাদি। কিন্তু বেহেশতের খাবারের তালিকায়ও কি এসব থাকবে? আল্লাহ তা’লা বলেন, ‘আর তাদের পছন্দমতো পাখির গোশত দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে’, যা কিনা সুরা ওয়াক্বিয়াহর ২০ নম্বর আয়াতে বলা আছে।

সুরা তুরের ২২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি তাদের ঢের ফলমূল এবং গোশত দেব, যা তারা পছন্দ করে। দুনিয়ায় কষ্টবরণ করে যে আমল তারা করত, তারই ওসিলায় পাবে ইচ্ছামতো পান-ভোজনের ব্যবস্থা।’ মহান আল্লাহ তাদের বলবেন, ‘তোমরা যা করতে তার প্রতিফলস্বরূপ তোমরা তৃপ্তির সঙ্গে পানাহার করতে থাকো’ (সুরা তুর: ১৯)।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘রকমারি ফলের বৃক্ষে ফল ঝুলে থাকবে, যা সম্পূর্ণরূপে জান্নাতিদের আয়ত্তাধীন করা হবে। জান্নাতিরা বসে বা শয়ন করেও ফল তুলে খেতে পারবে। সেখানে তারা হেলান দিয়ে বসবে পুরু রেশমের আস্তরবিশিষ্ট বিছানায়, দুই বাগানের ফল থাকবে তাদের হোতের কাছেই।’ (সুরা আর রাহমান : ৫৪)।

জান্নাতে আছে খেজুর, বেদানা ও আরও অজানা শত রকমের ফল। জান্নাতিরা থাকবে ফলমূলের প্রাচুর্যের মধ্যে। বলা হবে: তোমরা যা করতে তার বিনিময়ে তৃপ্তির সঙ্গে পানাহার করো (সুরা আল মুরসালাত : ৪১-৪৩)। খাওয়া শেষে একটু পানীয়র ব্যবস্থা না হলে কেমন হয়! সেটিও থাকবে। তবে সেটা হবে পবিত্র ও মাদকতামুক্ত এবং সুস্বাদু। তাদের ঘুরেফিরে পরিবেশন করা হবে স্বচ্ছ পানপাত্র। সুশুভ্র, যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু। তাতে মাথাব্যথার উপাদান নেই এবং তারা তা পান করে মাতালও হবে না (সুরা আস সাফফাত : ৪৫-৪৭)।

বরং যে খাবার খেতে মনে বাসনা হবে, সেই খাবারই জান্নাতিরা জান্নাতে খেতে পারবে। আল্লাহ বলেন, সেখানে রয়েছে এমন সবকিছু, যা মন চায় এবং যাতে নয়ন তৃপ্ত হয়। সেখানে তোমরা চিরকাল থাকবে (সুরা যুখরুফ: ৭১)।

মূলত জান্নাতে সব খাবারই মিলবে, যা আল্লাহর বান্দারা চাইবে। তবে দুনিয়ার মতো মদ, শূকরের মাংস, সিগারেট, তামাক সেখানে মিলবে না। এত এত উত্তম খাবার রেখে এসব পচা ও অপবিত্র কোনো খাবারের প্রতিও তাদের আগ্রহ হবে না।

এই বিভাগের আরও খবর