img

এতকাল ধরে মহাকাশের ছবি মানে ছিল ঝাপসা ও সাদাকালো একধরনের আবছায়া অবয়ব। কিন্তু এবার নাসা জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের মাধ্যমে প্রকাশ করেছে উচ্চ রেজুলেশনের রঙিন ছবি, যা তাক লাগিয়ে দিয়েছে সারা বিশ্বকে।

সোমবার (১১ জুলাই) মার্কিন মহাশূন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের মাধ্যমে ধারণ করা প্রথম রঙিন ছবিটি প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এটিই এখন পর্যন্ত গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের পাওয়া সবচেয়ে স্পষ্ট ও বিস্তারিত ছবি।
 

জেমস ওয়েব হচ্ছে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ও বৃহত্তম টেলিস্কোপ, যেটি মহাকাশ গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হয়। মার্কিন মুদ্রায় টেলিস্কোপটির দাম ৯০০ কোটি টাকা।
 

ওয়েব টেলিস্কোপের তোলা বাইডেন ও নাসার প্রধান বিল নেলসন যে ছবিটি দেখিয়েছেন, তাতে ৪৬০ কোটি বছর পুরোনো একটি গ্যালাক্সি ক্লাস্টার দেখানো হয়েছে, যার নাম স্ম্যাকস ০৭২৩। এর সম্মিলিত ভর একটি 'মহাকর্ষিক লেন্স' হিসেবে ব্যবহার হয়, যার ফলে এই ক্লাস্টারের পেছনে থাকা আরও দূরের গ্যালাক্সি থেকে আসা আলো বহুগুণে বেড়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এ ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকা অনেক দূর থেকে আসা আলোর মধ্যে একটি রশ্মি কমপক্ষে ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর আগের।
 

নেলসন জানান, এই রশ্মির বয়স ‘বিগ ব্যাং’-এর মাত্র ৮০ কোটি বছর পর। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ১ হাজার ৩৮০ কোটি বছর আগে বিগ ব্যাং-এর ফলেই সৃষ্টি হয়েছে সৌরজগৎসহ আমাদের জ্ঞাত বিশ্বের বেশির ভাগ অংশ।

ছবি অবমুক্তকরণ অনুষ্ঠানে বাইডেন বলেন, ‘এটি আমাদের মহাজাগতিক ইতিহাসে একটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে। আজ আমরা সেই দিগন্ত রেখা থেকে আসা জ্বলজ্বলে রশ্মি দেখতে পাচ্ছি। এই আলো এসেছে ভিন্ন কোনো জগৎ থেকে এবং এটি এমনসব তারা থেকে এসেছে, যা আমাদের দৃশ্যমান তারাগুলো থেকে যোজন যোজন দূরত্বে অবস্থিত। এটি আমার জন্য অভাবনীয় একটি ঘটনা।’

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার (১২ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে অবস্থিত গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার থেকে আরও কিছু উচ্চ রেজুলেশনের রঙিন ছবি প্রকাশের কথা রয়েছে।
 

মহাশূন্যে স্থাপিত এই টেলিস্কোপে ধারণ করা প্রথম ছবি অবমুক্ত করার আগে ছয় মাস ধরে বিভিন্ন ধরনের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে কাজ করা হয়, যার মধ্যে ছিল যন্ত্রাংশ চালু করা, আয়নাগুলোকে সঠিক ক্রমে বসানো এবং এর সব উপাদানের সমন্বয়। বলা হচ্ছে, ওয়েব টেলিস্কোপ এখন তার অভিযানের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। বিজ্ঞানীরা কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযানের মাধ্যমে মহাবিশ্বের বিবর্তন, তারাদের জীবনচক্র ও দূর-দূরান্তের গ্রহ ও উপগ্রহের আবহাওয়া সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে।
 

উল্লেখ্য, ৩০ বছর আগে নির্মিত হাবল টেলিস্কোপের চেয়ে ওয়েব টেলিস্কোপ ১০০ গুণ বেশি সংবেদনশীল এবং এটি মূলত অতিলাল স্পেকট্রামে কাজ করে। নরথ্রপ গ্রুম্ম্যান করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ওয়েব টেলিস্কোপ নির্মাণ করা হয়। ২০২১ সালের বড়দিনে একে দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত ফ্রেঞ্চ গায়ানা থেকে এই টেলিস্কোপটিকে মহাশূন্যে পাঠানো হয়।
 

আশা করা যাচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে বিজ্ঞানীরা ওয়েব টেলিস্কোপের মাধ্যমে ধারণ করা আরও চমকপ্রদ ছবি ও তথ্য প্রকাশ করবেন।


সূত্র: রয়টার্স, এনটি

এই বিভাগের আরও খবর