img

ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে আগামী ১ জুলাই থেকে টোল নেয়া শুরু হবে।

 এরইমধ্যে মহাসড়কে মাঝারি মানের ট্রাকের জন্য কিলোমিটারপ্রতি ১০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়। মঙ্গলবার (২৮ জুন) বাস ও অন্যান্য পরিবহনের জন্য এক্সপ্রেসওয়ের টোলের হারের সিদ্ধান্ত আসবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

সোমবার (২৭ জুন) সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ফাহমিদা হক খানের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, ৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ মহাসড়কে মাঝারি মানের ট্রাকের জন্য প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা হারে টোল ধরা হয়েছে। টোল নীতিমালা ২০১৪ অনুযায়ী চূড়ান্তভাবে টোলের হার নির্ধারণের আগপর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কের টোলের হার নির্ধারণ করা হলো।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিনুল্লাহ নূরী বলেন, মাঝারি গাড়িকে স্টান্ডার্ড ধরে প্রতি কিলোমিটারের টোল ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কাল-পরশুর মধ্যে মোটরসাইকেল ও অন্যান্য ছোট যানবাহন এবং বড় গাড়ির মধ্যে একটি সমন্বিত টোল নির্ধারণ করা হবে। কিছু গাড়ির টোল বাড়তে পারে আবার ছোট গাড়ির ক্ষেত্রে কমবে।
এটা কার্যকর হলে এ এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে মাঝারি মানের একটি ট্রাকের টোলের পেছনে কত টাকা খরচ হবে, তার একটি হিসাব তুলে ধরা হলো:

মাঝারি মানের একটি ট্রাক (৫ থেকে ৮ টন) পদ্মা সেতু ব্যবহার করলে টোল দিতে হচ্ছে ২ হাজার ১০০ টাকা। আর ৮ থেকে ১১ টন ধারণক্ষমতার একটি মাঝারি ট্রাককে টোল দিতে হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকা। এর সঙ্গে যদি ৫৫ কিলোমিটার ১০ টাকা করে হিসাব করা হয়, সেখানে টোল আসবে ৫৫০ টাকা। তাহলে (৮ থেকে ১১ টন ধারণক্ষমতার ট্রাক) টোল বাবদ খরচ হবে ৩ হাজার ৩৫০ টাকা। আর ৫ থেকে ৮ টন ধারণক্ষমতার মাঝারি মানের ট্রাকের টোল গুনতে হবে ২ হাজার ৬৫০ টাকা।

বর্তমানে ঢাকা থেকে ভাঙ্গায় যেতে পদ্মা সেতু ছাড়াও তিন জায়গায় টোল দিতে হয়। এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার আগে মেয়র হানিফ উড়ালসড়কে ৮৫ টাকা টোল দিতে হয়। এরপর ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় ৭৫ টাকা আদায় করা হয়। আর পদ্মা সেতুতে ১ হাজার ৩০০ টাকা। ওপারে হাজি শরীয়তউল্লাহ সেতু ব্যবহারের জন্য টোল দিতে হয় ৬০ টাকা। আগামী ১ জুলাই এক্সপ্রেসওয়ের টোল কার্যকর হলে এসব জায়গায় আর টাকা দিতে হবে না। সমন্বিতভাবে টোল আদায় করা হবে, জানানো হয় প্রজ্ঞাপনে।

এক্সপ্রেসওয়েতে বাসসহ অন্য যানবাহনের ক্ষেত্রে কিলোমিটারপ্রতি টোল কত হবে এমন প্রশ্নে উপসচিব ফাহমিদা হক খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ-সংক্রান্ত আলাদা একটি ফাইল অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। আগামীকাল মঙ্গলবার আলাদা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানানো হবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন টোলের হার অনুযায়ী বাসের জন্য ৪৯৫ টাকা (বেস টোলের ৯০ শতাংশ), গাড়ির জন্য (সেডান) ১৩৮ টাকা (২৫ শতাংশ) এবং বাইকের জন্য ২৮ টাকা (৫ শতাংশ) টোল দিতে হবে। সে অনুযায়ী অন্যান্য যানবাহনের টোলও নির্ধারণ করা হবে।

টোল আদায় যেভাবে হবে:

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েতে মোট ছয়টি টোল বুথ থাকবে। পদ্মার এপারে তিনটি, ওপারে তিনটি। এপারে তিনটি টোল বুথ থাকবে আবদুল্লাহপুর, ধলেশ্বরী ও শ্রীনগর এলাকায়। আর ওপারে কুলিয়াবাজার, মালি গ্রাম ও ভাঙ্গায় টোল বুথ থাকবে।

এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারীকে পুরো ৫৫ কিলোমিটারের জন্য ভাড়া গুনতে হবে কি না, জানতে চাইলে ফাহমিদা হক বলেন, একটি টোল বুথ থেকে আরেকটি টোল বুথ পর্যন্ত টাকা দিতে হবে। পুরো ৫৫ কিলোমিটারের জন্য টোল দিতে হবে না। সে জন্য ছয়টি টোল বুথ করা হয়েছে। এর মধ্যে কেউ যদি তার গন্তব্যে পৌঁছান, তার আগের টোল বুথ পর্যন্ত টাকা দিতে হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কটি দেশের প্রথম আধুনিক এক্সপ্রেসওয়ে। এ সড়ক ধরে পদ্মা সেতু হয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে সারাদেশের সরাসরি সংযোগ তৈরি হবে।

চার লেইনের এ সড়ক নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা। এতে ৪৪টি কালভার্ট, ১৯টি আন্ডারপাস, চারটি বড় সেতু, ২৫টি ছোট সেতু, পাঁচটি ফ্লাইওভার, দুটি ইন্টার চেইন, চারটি রেলওয়ে ওভারপাস রয়েছে।

গত বছরের ১১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মহাসড়ক উদ্বোধন করেন।

এই এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায়ে দক্ষিণ কোরীয় একটি কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। গত ২২ জুন সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন- কেইসিকে ৭১৭ কোটি টাকায় এ কাজের জন্য নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

কোম্পানিটি আগামী পাঁচ বছরের জন্য ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক’ এর রক্ষণাবেক্ষণ, টোল আদায় ও অন্যান্য পরিচালন কাজে যুক্ত থাকবে।
 

এই বিভাগের আরও খবর