হাত-পায়ে ঝিঁঝি ধরা যেসব কারণে বিপজ্জনক!
জীবনে কোনো না কোনো সময় হাত-পায়ে ঝিঁঝি সমস্যায় ভোগেননি, এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। কমবেশি সবাই এই সমস্যায় আমরা ভুগেছি। কিন্তু কখনোই এ সমস্যাকে আমরা বিপদের কারণ বলে মনে করি না। কিন্তু আপনি কি জানেন বিশেষজ্ঞরা এ সমস্যাকে শরীরের মারাত্মক বিপর্যয়ের কারণ ভাবছেন?
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাত-পায়ে ঝিঁঝি ধরার সমস্যা, জটিল রোগের ইঙ্গিত হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে ঝিঁঝি ধরার সমস্যাটি সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় হাত কিংবা পায়ে। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সাধারণত দীর্ঘসময় একই ভঙ্গিতে বসা বা শোবার পর কিংবা শরীরে কোনো অংশে দীর্ঘসময়ে চাপ পড়ার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। চিকিৎসাশাস্ত্রে, এ সমস্যাকে 'টেম্পোরারি প্যারেসথেসিয়া' এবং ইংরেজিতে এটিকে 'পিনস অ্যান্ড নিডলস'ও বলা হয়ে থাকে। প্রায়ই এ সমস্যায় ভুগলে এ রোগটিকে অবহেলা করা ঠিক নয়।
হাত-পায়ে ঝিঁঝি সমস্যার কারণ
হাত-পায়ে ঝিঁঝি সমস্যার কারণ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ এস এম সিয়াম হাসান মনে করেন, বেশ কিছু কারণেই আমাদের হাত, পা কিংবা শরীরের বিভিন্ন অংশে ঝিঁঝি সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. মেরুদণ্ডে আঘাতজনিত সমস্যা থেকে 'সার্ভাইকাল স্পন্ডাইোসিস' বা ‘লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস’-এর সমস্যায়।
২. হাতে বা পায়ে রক্ত সঞ্চালন কমে গেলে 'পেরিফেরাল আর্টারাল ডিজিজ।
৩. ডায়বেটিসের কারণে ডায়বেটিক নিউরোপ্যাথি নামক একটি রোগের ক্ষেত্রে।
৪. মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে।
৫. মস্তিষ্ক ও দেহের অন্যান্য অংশে নার্ভগুলোতে তথ্য আদান-প্রদানে ব্যাঘাত ঘটলে।
৬. স্নায়ু নার্ভগুলো হৃৎপিণ্ড থেকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পাওয়া থেকে বিরত থাকলে।
৭. শরীরে ভিটামিন বি ১২-এর ঘাটতি।
স্বাভাবিক ক্ষেত্রে এ সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার পর ২ থেকে ৩ মিনিটের মধ্যেই এ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়, যা 'কমপ্রেশন টিঙ্গলিং নামে খ্যাত। তবে কখনো কখনো এ সমস্যা দীর্ঘকালীন প্যারেস্থেসিয়ায় রূপান্তরিত হতে পারে। এই সমস্যা হলে ঝিঁঝি সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অন্তত ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত সময় লেগে যায়।
দীর্ঘকালীন প্যারেস্থেসিয়া
দীর্ঘকালীন প্যারেস্থেসিয়ায় হাতে বা পায়ে অসাড়তা বোধ হয় এবং যতক্ষণ স্নায়ুর ওপর চাপ থাকে, ততক্ষণ এই অনুভূতি থাকে। এ সমস্যার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা চিহ্ণিত করেছেন ৭ টি কারণ। এগুলো হলো:
১. কেমোথেরাপির মতো চিকিৎসার ক্ষেত্রে।
২. এইচআইভির ওষুধ, খিঁচুনির ওষুধ বা বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে।
৩. সিসা বা রেডিয়েশনের মতো বিষাক্ত বস্তুর সংস্পর্শে এলে।
৪. পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের অভাব হলে।
৫. স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে। বিশেষ করে কোনো অসুস্থতা বা আঘাতের পর।
৬. অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে।
৭.বিশেষ ক্ষেত্রে শরীরে চেতনানাশক ব্যবহারের পর।
৮. শরীরে অ্যানিমিয়া, ডায়রিয়া, পেপটিক আলসার, থাইরয়েড, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কিংবা স্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকলে।
চিকিৎসকের সেবা নেয়ার প্রয়োজনীয়তা
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি প্রায়ই আপনার হাত, পা কিংবা শরীরের বিভিন্ন অংশে ঝিঁঝি সমস্যা দেখা দেয়, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। এ ছাড়া শরীরে ক্লান্তিভাব, যেকোনো কাজ করার প্রতি অনীহা, নিশ্বাস নিতে অসুবিধা, ত্বক বিবর্ণ হয়ে যাওয়া, হৃদ্স্পন্দন বেড়ে যাওয়া এসব সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসা সেবা নিতে হবে।