img

পূর্ব-ইউক্রেনের দোনবাস প্রদেশের লুহানস্ক অঞ্চলের লিসিচানস্ক শহর চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে রুশ সেনাবাহিনী। এর ফলে শহরটির হিরস্ক ও জোলোট এলাকায় আটকা পড়েছে প্রায় দুই হাজার ইউক্রেনীয় সেনা। শুক্রবার (২৪ জুন) এক নিয়মিত ব্রিফিংকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রুশ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা।

ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের প্রথম দিকে রুশ বাহিনীর লক্ষ্য ও পরিকল্পনা ছিল রাজধানী কিয়েভ দখল। কিন্তু দুই মাসের মাথায় সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে এবং পূর্বাঞ্চল দোনবাসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে মনোযোগ দেয়। সেই লক্ষ্যে গত মাসের শেষের দিকে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৪০টি শহর টার্গেট করে অভিযান শুরু করে পুতিন বাহিনী।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে (৭ জুন) রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সোইগু জানান, ইউক্রেনের সবচেয়ে পূর্বাঞ্চলীয় শহর লুহানস্কের ৯৭ ভাগ এলাকা রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। শহরটির পুরো দখল নিতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পুতিন বাহিনীর প্রধান টার্গেট সেভেরোদোনেৎস্ক ও লিসিচানস্ক শহর। লুহানস্ক অঞ্চলের এই দুটি শহরে এখনও কম-বেশি ইউক্রেনীয়দের প্রতিরোধ জারি ছিল। কিন্তু শুক্রবারই (২৪ জুন) লুহানস্ক অঞ্চলের ইউক্রেনীয় গভর্নর সেরহি হাইদাই জানিয়েছেন, সেভেরোদোনেৎস্ক শহর থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শহরটি যে রুশ বাহিনীর দখলে চলে গেছে এর মাধ্যমে মূলত সেটাই স্বীকার করে নিল ইউক্রেন। টেলিভিশনে প্রচারিত এক বিবৃতিতে হাইদাই বলেছেন, কয়েক মাস ধরে টানা বোমা বর্ষণের পর শহরের অবশিষ্ট অবস্থান ধরে রাখার কোনও মানে নেই।

ইউক্রেনীয় টেলিভিশনকে হাইদাই বলেন, নতুন অবস্থানে সরে যেতে সেনাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে তারা নিজেদের অভিযান পরিচালনা করবে। তিনি বলেন, কয়েক মাস ধরে অবস্থান ধরে রাখার ফলে শেষ স্থানগুলো প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে এমন অবস্থান ধরে রাখার কোনও অর্থ হয় না। তিনি আরও জানান, রুশ গোলাবর্ষণে শহরের ৯০ শতাংশ অবকাঠামো একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে মতে, সেভেরোদোনেৎস্ক শহর দখলের পর রুশ সেনারা লিসিচানস্ক শহরের দিকে বেশ খানিকটা অগ্রসর হয়েছে এবং প্রায় ঘিরে ফেলেছে। শুক্রবার ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, লিসিচানস্ক শহরের হিরস্ক উপশহর ও এর পাশের আরও বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকা সম্পূর্ণ দখলে নিয়েছে রুশ বাহিনী।

এদিন হিরস্কের প্রশাসনিক প্রধান ওলেসাই ববচেঙ্কো এক বিবৃতিতে বলেন, শহরের বাইরে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু লড়াই হচ্ছে। তবে শত্রুপক্ষ শহরে ঢুকে পড়েছে। এদিকে এদিনই রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ এক বিবৃতিতে বলা হয়, হিরস্কে প্রায় দুই হাজার ইউক্রেনীয় সেনাকে ঘিরে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ জন বিদেশি সেনাও রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে লুহানস্কের প্রশাসন কোনো মন্তব্য করেনি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। 

এ পরিস্থিতিতে দ্রুত অস্ত্র দিয়ে সাহায্যের জন্য ইউরোপের মিত্র শক্তিগুলোর কাছে আবেদন জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদামির জেলনস্কি। শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, দোনবাসে ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। পুরো এলাকা ধ্বংস স্তূপে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রুশ বাহিনী। এই পরিস্থিতি ইউক্রেনের সাহায্য প্রয়োজন। আমাদের শহরকে, আমাদের জমিকে পুনরুদ্ধার করতে হবে।'

এই বিভাগের আরও খবর