img

পূর্ব ইউক্রেনের দোনবাস অঞ্চলের প্রধান দুটি শহরের একটি লুহানস্ক দখলের দ্বারপ্রান্তে রুশ বাহিনী। পুতিন বাহিনীর হামলার মুখে পিছু হটতে শুরু করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। ইউক্রেন যখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ প্রার্থীর মর্যাদা পেতে যাচ্ছে, ঠিক তখন দেশটির গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা রাশিয়ার দখলে চলে যাচ্ছে।

ইউক্রেনের পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোয় যোগদান ঠেকাতে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে সরাসরি সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর দুদিন আগে দেশটির সংঘাতপূর্ণ দোনবাসের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল দুটিকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন তিনি। ২০১৪ সালের পর থেকে এ দুটি অঞ্চলকে দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক নামে শাসন করে আসছে রুশপন্থি স্বাধীনতাকামীরা। 

ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের প্রথম দিকে রুশ বাহিনীর লক্ষ্য ও পরিকল্পনা ছিল রাজধানী কিয়েভ দখল। কিন্তু দুই মাসের মাথায় সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে এবং পূর্বাঞ্চল দোনবাসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে মনোযোগ দেয়। সেই লক্ষ্যে গত মাসের শেষের দিকে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৪০টি শহর টার্গেট করে অভিযান শুরু করে পুতিন বাহিনী।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে (৭ জুন) রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সোইগু জানান, ইউক্রেনের সবচেয়ে পূর্বাঞ্চলীয় শহর লুহানস্কের ৯৭ ভাগ এলাকা রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। শহরটির পুরো দখল নিতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

শুক্রবার (২৪ জুন) লুহানস্কের আঞ্চলিক গভর্নর সেরহি হাইদাই জানিয়েছেন, বেশির ভাগ এলাকা রাশিয়ার দখলে চলে যাওয়ায় ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ইতোমধ্যে সেভেরোদোনেৎস্ক শহর ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। লুহানস্ক দখলের জন্য শহরটির দখল খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। 

রয়টার্স জানায়, ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানে এখন পর্যন্ত যত জায়গায় তুমুল লড়াই হয়েছে, তার মধ্যে সেভেরোদোনেৎস্ক অন্যতম। শহরটিতে প্রায় এক মাস ধরে একটার পর একটা সড়কে লড়াই হয়েছে। ধীরগতিতে ও কষ্ট স্বীকার করে রাশিয়া একের পর এক এলাকার দখল পেয়েছে।

সেভেরোদোনেৎস্কের দখল রাশিয়ার জন্য বেশ বড় ধরনের সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ, এটা ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা লুহানস্ক অঞ্চলের সবশেষ গুরুত্বপূর্ণ দুটি শহরের একটি। সেভেরোদোনেৎস্কের পতন ইতোমধ্যে নিশ্চিত হয়ে গেছে। এখন বাকি কেবল লিসিচানস্ক নামে আরেকটি শহর।

রাশিয়া ও তাদের সমর্থনপুষ্ট পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে দোনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়া। দোনবাস যে দুটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত, লুহানস্ক তার একটি। লুহানস্ক শহর দখলের জন্য শেষ সময়ের লড়াই করছে রুশ সেনারা।
 

পাশাপাশি দোনবাসের অন্য এলাকাও দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। ঠিক করা হচ্ছে পরবর্তী লক্ষ্যও। দোনবাস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে এলে হয়তো তারা আরও উত্তরে খারকিভের দিকে এগোবেন। কারণ, সেখানে হামলা জোরদার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রুশ হামলায় এ অঞ্চলে অন্তত ২৫ জনের প্রাণহানি ঘটে বলে জানান গভর্নর।

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রার্থীর মর্যাদা পাওয়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভূখণ্ড হারাচ্ছে ইউক্রেন। যেকোনো মুহূর্তে লুহানস্ক রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ওলেক্সি অ্যারেস্টোভিচ।

ওলেক্সি বলেন, দোনবাসে ভয়ংকর সব সমরাস্ত্র মোতায়েন করছে রাশিয়া। পুতিনের সৈন্যরা অঞ্চলটি ধ্বংস না করে ছাড়বে না। তিনি আরও বলেন, লুহানস্কের দোনেৎস্ক নদীর তীরবর্তী নগরী সেভেরোদনেৎস্ক ও লিসিচানস্ক দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রুশ সেনারা। যেকোনো সময় এর ফলাফল নির্ধারণ হয়ে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর