img

আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনায় পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ। জাতিসংঘের জরুরি শিশু তহবিলবিষয়ক সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, ঘণ্টায় ঘণ্টায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।

মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সবশেষ তথ্যানুযায়ী, মৃতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। গুরুতর আহত মানুষের সংখ্যা ১ হাজার ৫০০ জনে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে।

বুধবার (২২ জুন) দিনের শুরুতেই শক্তিশালী ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। যার গভীরতা ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫১ কিলোমিটার। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ১। ইউরোপিয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএসএসসি) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির তীব্রতা উৎপত্তিস্থল থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরেও অনুভূত হয়।

ভূমিকম্পে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পাকটিকা প্রদেশের পরিস্থিতি নাজুক আকার ধারণ করেছে। বুধবার বিকেলে ইউনিসেফের কমিউনিকেশন, অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড সিভিক এনগেজমেন্ট-এর প্রধান সামান্থা মোর্ট বলেন, প্রবল বর্ষণের কারণে বন্যা ও ভূমিধসের ফলে পাকিস্তান সীমান্তবর্তী প্রদেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ওইসব অঞ্চলে প্রবেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।

মোর্ট আরও বলেন, এমন পরিস্থিতির মাঝেই আবার ভূমিকম্পের ঘটনা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। এরপরও অনেক কষ্টে ইউনিসেফের কয়েকটি ছোট ছোট দল ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। ভূমিকম্পের কারণে ভেঙেপড়া ঘরবাড়ির নিচ থেকে মানুষকে উদ্ধারে মরিয়া চেষ্টা করছে তারা। উদ্ধারের পর আহতদের হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্যমতে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল পাকিস্তান সীমান্তবর্তী আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় খোস্ত শহর থেকে ৪৬ কিলোমিটার দূরে। ২০০২ সালের পর এটাকেই আফগানিস্তানে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প বলে মনে করা হচ্ছে। এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বিশাল।

ভূমিকম্পে আফগানিস্তানের পাকটিকা অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখানে অন্তত ২৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা দুইশর বেশি। তালেবান সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থামন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম হক্কানি জানিয়েছেন, ওই অঞ্চলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

পাকটিকা প্রদেশের উপজাতি নেতা ইয়াকুব মানজুর বলেন, ভূমিকম্পে প্রত্যন্ত এলাকার পাহাড়ি গ্রামগুলোর ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের সংখ্যা জানতে সময় লাগবে। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় বাজারগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আক্রান্ত এলাকায় উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে অনেকেই।

তালেবান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আইয়ুবি জানান, হেলিকপ্টার নিয়ে গিয়ে উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে। তবে এখনো সর্বত্র পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ভূমিকম্প আঘাত হানার পর গত কয়েক ঘণ্টায় বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ছবি ও ভিডিওতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া বহু ঘরবাড়ির চিত্র উঠে এসেছে।

ভূমিকম্পে প্রত্যন্ত এলাকার পরিস্থিতি

কাবুল থেকে আফগান সাংবাদিক আলি এম লতিফি জানিয়েছেন, উৎপত্তিস্থল থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে রাজধানীর মানুষও কম্পন অনুভব করেছেন। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ভূমিকম্পে শত শত ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।

লতিফি আরও জানান, ভূমিকম্পের কারণে ঘরবাড়ির ধ্বংসাবশেষের নিচে বহু মানুষ আটকা পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আটকেপড়া ওইসব অধিবাসীকে উদ্ধারে একাধিক হেলিকপ্টার পাঠিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ সহায়তার জন্য দেশি ও বিদেশি সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এ সাংবাদিক আরও জানান, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় একটি চিকিৎসা দল পাঠিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি। তবে আক্রান্ত এলাকাগুলোতে পৌঁছানো নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। কারণ, স্থানগুলো প্রাদেশিক রাজধানীগুলো থেকেও অনেক অনেক দূরে। আর রাস্তার অবস্থাও তত ভালো নয়। ফলে ওই সব জায়গায় পৌঁছাতেই অনেকটা সময় লেগে যাবে।

সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার হেদায়েতুল্লাহ পাকতিন বলেছেন, পাকটিকা অঞ্চলের বেশির ভাগ ঘরবাড়িই পুরোনো ধাঁচের। সাধারণত মাটি, পাথর ও অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে এগুলো তৈরি করা হয়। পাকা ঘর খুবই কম।

পাকতিন আরও বলেন, দুর্ভাগ্যজনক যে, আফগানিস্তান যখন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে, ঠিক তখন ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানল। গত বছরের আগস্টে রাজধানী কাবুল দখলের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে ক্ষমতায় আসে তালেবান। এরপর আফগানিস্তানের নাগরিকদের দুঃখ-দুর্দশা আরও বেড়েছে। খাদ্য ও চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদাগুলোও পূরণ করতে পারছে না বেশির ভাগ মানুষ।

পাকিস্তান ও ইরানেও ভূমিকম্পের শক্তিশালী আঘাত

আফগানিস্তানের পাশাপাশি পাকিস্তান ও ইরানেও প্রবলভাবে অনুভূত হয়েছে এ ভূমিকম্প। পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন জানিয়েছে, ইসলামাবাদেও হালকা কম্পন হয়েছে। তবে লাহোর, মুলতান, কোয়েটায় ভূমিকম্পের তীব্রতা বেশি ছিল। কম্পন অনুভূত হওয়ার পর সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েন। তবে পাকিস্তান থেকে এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির খবর আসেনি।

এই বিভাগের আরও খবর