img

ব্রহ্মপুত্র নদের পানি হুহু করে বাড়তে থাকায় চরম অবনতি হয়েছে কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির। এ নদের সব পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে লোকজন ভেসে বেড়াচ্ছে নৌকায়।

জানা যায়, ঘরের ভেতর বুক সমান পানি উঠে যাওয়ায় সেখানে থাকতে না পেরে বের হয়ে এসেছেন পোড়ারচরের ৮৭টি পরিবারের শিশু নারী-পুরুষ সবাই। পাঁচ দিন ধরে চুলা জ্বলেনি গ্রামে। সব পরিবার ভেসে বেড়াচ্ছে নৌকায়। কারও কারও অবস্থান ঘরের চালে।


বানভাসীদের ক্ষোভ, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বাইরে নয় এই গ্রাম। কিন্তু ৫ দিনেও খবর নিতে আসেননি সরকারি কোনো কর্মকর্তা বা কোনো জনপ্রতিনিধি। এই গ্রামের পরিবারগুলোর বসবাস ছিল বিভিন্ন গ্রামে। ভাঙনে সর্বহারা মানুষগুলোকে একত্রিত করে পোড়ারচরের এই সরকারি জমিটিতেই পুনর্বাসন করা হয়েছিল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কিন্তু বন্যার পানি আজ সবই কেড়ে নিয়েছে। আবার অনেকেই নতুন কোনো আশ্রয়ের খোঁজে ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়ে যাচ্ছেন।


বৃহত্তর রংপুরের নদনদীগুলো পরিচর্যার অভাবে বন্যা ও ভাঙনে বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে বলে দাবি করেন নদী আন্দোলনের নেতা নজরুল ইসলাম হক্কানী।

তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদেরও সভাপতি এই সংগঠক বলেন, বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে তিস্তার ব্যাপক খননসহ ৬ দফা দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নেরর দাবিও আমরা জানিয়ে আসছি। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমোরসহ ১৬টি নদী বয়ে গেছে এ একটি জেলার ওপর দিয়ে। এ জেলার ৫টি উপজেলা এখন বন্যাকবলিত। পানিবন্দি এই জেলার এক লাখেরও বেশি মানুষ।


উজানে ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান নিয়েছে। নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার শত শত চর ও দ্বিপচরের অর্ধ লক্ষাধিক পরিবার কয়েকদিন ধরে পানিবন্দী জীবনযাপন করছে। ক্ষেত-খামার ডুবে যাওয়ায় খাদ্যের অনিশ্চয়তাও দেখা দিয়েছে। মাঠঘাট ডুবে থাকায় দেখা দিয়েছে পশুখাদ্যেরও সংকট।


তিস্তার দ্বিপচর রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার চর ঢুঁশমারার তোফায়েল আহমেদের জমির বাদাম বানের পানিতে ডুবে যাওয়ার আগে যেটুকু বাঁচাতে পেরেছিলেন, তা নিয়েই পরিবারে ১২ জন সদস্যের খাদ্যের ভরসা করেছিলেন।


তিনি জানান, রোদের অভাবে বাদাম শুকাতে পারছেন না। ভোর বেলা কিছু বাদাম নিয়ে নদীপাড়ি দিয়েছিলেন। বাদাম বেঁচে কিছু চাল কিনে ফিরছেন। এ দিয়েই তিন দিন পর আজ ভাতের দেখা মিলবে তার।


তিস্তা নদী বেষ্টিত শত শত চরের লক্ষাধিক মানুষের জীবন এখন প্রায় একই রকমের দুর্বিসহ।

এই বিভাগের আরও খবর