img

বিষণ্নতায় ভুগছে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার শিশুরা। এ সংখ্যা একশ কিংবা দুইশ নয়; হাজার হাজার। নতুন এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমানে উপত্যকার ৮০ শতাংশ শিশুই মানসিক অবসাদে আক্রান্ত।

বুধবার (১৫ জুন) গাজার শিশুদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে শিশু অধিকারবিষয়ক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে গাজা উপত্যকা অবরোধ করে রেখেছে ইসরাইল। এক যুগের বেশি সময় অবরুদ্ধ জীবনযাপনের কারণে এখানকার বেশির ভাগ বাসিন্দাই এখন মানসিকভাবে অসুস্থ।

সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা এখানকার শিশুদের। রিপোর্টমতে, প্রতি পাঁচটি শিশুর চারটিই মানসিক অবসাদ, বিষণ্নতা, ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে বড় হচ্ছে। ‘ট্রাপড’ শিরোনামের রিপোর্টটির জন্য উপত্যকার ৪৮৮ শিশু ও ১৬৮ বাবা-মা ও স্বাস্থ্যকর্মীর সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। এ ধরনের গবেষণা এর আগে সবশেষ ২০১৮ সালে চালানো হয়েছিল।

রিপোর্টমতে, ২০১৮ সালের তুলনায় শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে যেখানে ৫৫ শতাংশ শিশু মানসিক অবসাদে ভুগত, বর্তমানে সেটা বেড়ে ৮০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।


গাজা হচ্ছে ফিলিস্তিনের এমন একটি এলাকা, যা পশ্চিম তীর থেকে বিচ্ছিন্ন। এই এলাকাটি ৪১ কিলোমিটার বা ২৫ মাইল দীর্ঘ এবং ১০ কিলোমিটার চওড়া। একদিকে ভূমধ্যসাগর, তিন দিকে ইসরাইল ও দক্ষিণ দিকে মিশরের সিনাই সীমান্ত।

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত ফিলিস্তিনি সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে। পরে অপর প্রভাবশালী সংগঠন ফাতাহর সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জেরে পশ্চিম তীর থেকে ফাতাহ হামাসের নেতাকর্মীদের বের করে দিলে গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয় সংগঠনটি। তখন থেকেই মিশর ও ইসরাইল যৌথভাবে গাজার ওপর অবরোধ আরোপ করে।

গাজা উপত্যকার অবরোধ মূলত শুরু হয় ২০০৭ সালের জুনে। এর ফলে গত ১৫ বছরে ভূমধ্যসাগরপাড়ের ছোট্ট ভূ-খণ্ডটির অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবরোধের কারণে এখানকার অধিবাসীদের চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে। যার ফলে এখানকার শিশুদের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।

মাত্র কয়েক বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ উপত্যকায় রীতিমতো গাদাগাদি করে বসবাস করে প্রায় ২০ লাখ মানুষ। এর জনসংখ্যার ৪৭ শতাংশই বর্তমানে শিশুকিশোর।

সেভ দ্য চিলড্রেনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, এখানকার প্রায় ৮ লাখ শিশুকিশোরই অবরোধের বাইরের জীবন কেমন তা দেখেনি। এর মধ্যে তাদের আবার এমনসব পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়, যা যেকোনো মুহূর্তে তাদের জীবন কেড়ে নিতে পারে।

সেভ দ্য চিলড্রেনের রিপোর্টে আরও ভয়ানক তথ্য উঠে এসেছে। আর তা হলো, উপত্যকার শিশুদের অর্ধেকই কোনো না কোনো সময় আত্মহত্যা করার কথা ভাবছে। শুধু তাই নয়, প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে তিনজন নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে।

শিশু ও কিশোরদের এ মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির পেছনে প্রধান কারণ (ফ্যাক্টর) স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক অধিকার না পাওয়া, সহিংসতা ও চলমান অবরোধের কারণে চলাচলের সুযোগহীনতা।

গবেষণায় অংশ নেওয়া স্বাস্থ্যকর্মীদের দেয়া তথ্যমতে, উপত্যকার শিশুদের ৭৯ শতাংশই কয়েক বছর ধরে বিছানায় প্রস্রাব করার মতো সমস্যায় ভুগেছে। এ ছাড়া ৫৯ শতাংশ শিশুর মধ্যেই ঠিকমতো কথা বলতে না পারা, ভাষা ও আচরণগত সমস্যা রয়েছে।

সেভ দ্য চিলড্রেন সতর্ক করে বলেছে, এসব লক্ষণের কারণে শিশুদের বেড়ে ওঠা, শিক্ষণ ও সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার ক্ষেত্রে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সংস্থাটির কাউন্ট্রি ডিরেক্টর জেসন লি বলেন, গাজার শিশুদের বিছানায় প্রস্রাব, ঠিকমতো কথা বলতে না পারা ও নিজেদের প্রাকৃতিক জরুরি কাজগুলো করতে না পারার মতো সমস্যাগুলোর বাস্তব প্রমাণ আসলেই মর্মান্তিক। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখনই পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

এই বিভাগের আরও খবর