img

মানবিকতার সবচেয়ে বড় নিদর্শন হলো স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে এই সেবার গুরুত্বের শেষ নেই। কারণ আমাদের দেশে বছরে রক্তের চাহিদা থাকে প্রায় ৮-১০ লাখ ইউনিট। এই অবস্থায় কারো স্বেচ্ছায় রক্তদানের বিষয়টি অতি তুচ্ছ নয়, বরং তা বীরত্বের পরিচায়ক। তাই কারো প্রাণের স্পন্দন টিকিয়ে রাখতে বিশ্ব রক্তদাতা দিবসে আমাদের সবারই উচিত স্বেচ্ছায় রক্ত দান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করা।

বাংলাদেশে প্রতিবছর রোগীদের সার্জারি চিকিৎসা সেবার জন্য রক্তের প্রয়োজন হয়। যারা রক্ত সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত তাদেরও নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে প্রয়োজন হয় রক্তের। যেমন বাংলাদেশে ১৪ জনে ১ জন থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। প্রতিবছর থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে প্রায় ১০ হাজার শিশু।

এসব থ্যালাসেমিয়া রোগীর পাশাপাশি রক্তস্বল্পতা, হিমোফিলিয়া ইত্যাদি রোগীর ক্ষেত্রে রক্তের প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া প্রসূতির রক্তক্ষরণ, অপারেশন, অগ্নিদগ্ধ বা দুর্ঘটনাজনিত রোগীর ক্ষেত্রেও রক্তের প্রয়োজন দেখা দেয়।

পৃথিবীতে এখনো কৃত্রিম রক্ত তৈরি করা সম্ভব হয়নি। আর এ কারণেই মানুষের জীবন-মরণ নির্ভর করছে শুধুই স্বেচ্ছায় দান করা এক ব্যাগ রক্তের ওপর।

নির্দিষ্ট সময় পর পর রক্তদানের অভ্যাসে একজন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে না বরং তা শরীরকে আরও সুস্থ করে তোলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রক্ত দান করলে শরীরের অস্থিমজ্জা নতুন রক্তকণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়।

রক্তদান শরীরে লোহিত কণিকার প্রাণশক্তি বাড়িয়ে তোলে ও নতুন কণিকা তৈরির হার বৃদ্ধি করে। নিয়মিত রক্তদানকারীর হৃদ্‌রোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস পায়।

তবে একজন পূর্ণবয়স্ক ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ব্যক্তি রক্ত দিতে সক্ষম বলে মনে করেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান ডা. সিরাজুল ইসলাম। যদিও অনেক চিকিৎসক মনে করেন ৬০ বছর পর্যন্ত এ কাজে শামিল হওয়া যায়।

নারী ৪৫ এবং পুরুষ ৪৮ কেজি ওজনের বেশি হলেই তিনি রক্তদানের মতো মহৎ উদ্যোগে শামিল হতে পারবে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রক্তদানের সময় রক্তদাতার তাপমাত্রা ৯৯.৫ ফারেনহাইটের নিচে এবং নাড়ির গতি ৭০ থেকে ৯০ এর মধ্যে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকতে হবে।

পুরুষদের ক্ষেত্রে রক্তের হিমোগ্লোবিন প্রতি ডেসিলিটারে ১৫ গ্রাম এবং নারীদের ক্ষেত্রে ১৪ গ্রাম হওয়া বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া রক্তদাতাকে অবশ্যই ভাইরাসজনিত রোগ, শ্বাসযন্ত্রের রোগ এবং চর্মরোগ মুক্ত থাকতে হবে।

বছরে ৪ মাস অন্তর অন্তর ৩ বার রক্তদানে রক্ত প্রাকৃতিকভাবে পরিশুদ্ধ হওয়ার সুযোগ পায়, যা নিয়মিত রক্তদাতাদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া শরীরে হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, জন্ডিস, ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, এইচআইভি বা এইডসের মতো বড় কোনো রোগ আছে কি না, তাও বিনা খরচে জানা যায় এই মহৎ উদ্যোগে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে।
 

বাংলাদেশের জনসংখ্যার তুলনায় রক্তের চাহিদা একেবারেই নগণ্য হলেও এখনো আমরা স্বেচ্ছারক্তদানে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারিনি। রক্তের প্রয়োজন মেটাতে যেহেতু রক্তই দিতে হয়; সেহেতু ব্যাপক জনসচেতনতার মাধ্যমে স্বেচ্ছারক্তদাতা বৃদ্ধিই রক্তের এ চাহিদা মেটাতে পারে। তাই আসুন স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে নিজে সুরক্ষিত ও বিপদমুক্ত থাকি এবং অন্যের জীবন প্রদীপকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করি।

সূত্র: বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর