img

প্রাক-ইসলামী যুগ ছিল চরম উচ্ছৃঙ্খলতা, পাপাচার, দুরাচার, ব্যাভিচার, মিথ্যা, হত্যা, লুণ্ঠন, মদ্যপান, জুয়ায় ভরপুর। চারিদিকে যখন অন্যায়-অপরাধ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য আর হাহাকার বিরাজ করছিল ঠিক সে সময় মুক্তির দূত হিসেবে মহান আল্লাহতায়ালা হিদায়েত হিসেবে পাঠান বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে।

বিশ্ব নবীর আগমনের রহমত স্বরূপ মহান আল্লাহতায়ালা মক্কা ও মদীনার কিছু স্থানকে দিয়েছেন আলাদা মর্যাদা। পবিত্র মক্কা ও মদিনা শরীফে কিছু স্থান রয়েছে যা মুসলমানদের দোয়া কবুল হওয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পবিত্র হজ ও ওমরাহের সময় সেসব স্থানে আল্লাহতায়ালার ওপর পরিপূর্ণ আস্থা রেখে মনোযোগসহ বিনম্রচিত্তে, অশ্রুসজল নয়নে দোয়া করলে সে দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। সেসব স্থানে দোয়ার মাধ্যমে দুনিয়ার যাবতীয় জায়েজ মকসুদ পূরণের আবদার করা যায় আল্লাহতায়ালার কাছে।

আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা পবিত্র কোরআন মাজিদে বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৬০)।’ অন্যদিকে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও বলেছেন, ‘দোয়া ইবাদতের মগজ। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দোয়া করে না, আল্লাহতাআলা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।’

হজের সফর দোয়া কবুল হওয়ার অপূর্ব সুযোগ। হজ বা ওমরাহর জন্য ইহরামের নিয়ত করা থেকে দোয়া কবুল হওয়া শুরু হয়। হজের সফরে এমন কিছু সময় ও স্থান রয়েছে, যে সময় ও স্থানে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, যে স্থানগুলোতে নবী-রাসুলদের দোয়া কবুল হয়েছিল বলে বর্ণিত আছে। সেসব জায়গায় দোয়া করা বাঞ্ছনীয়।

বাইতুল্লাহ শরীফ বা আল্লাহর ঘর হচ্ছে দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম একটি স্থান। এটিকে আল্লাহ নিজের ঘর হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা সূরা আল ইমরানের ৯৬ নম্বর আয়াতে বাইতুল্লাহ শরীফ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এই ঘর, যা বাক্কায় (মক্কা) অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময়।’ এ ঘরটিকে গুরুত্ব দেয়ার জন্য কোরআনের শুরুতে যেমন ‘লা-রাইবা’ শব্দ দিয়ে কোনো সন্দেহ নেই বলে চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন, তেমনি এখানেও নিঃসন্দেহে শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আল্লাহর ঘর বায়তুল্লাহ শরিফ দেখামাত্রই দোয়া করতে হয়। বর্ণিত আছে, বায়তুল্লাহ শরিফ প্রথম নজরে আসার পরে যে দোয়া করা হবে তা কবুল হবে।

মুলতাজাম দোয়া কবুলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। হাজরে আসওয়াদ অর্থাৎ কালো পাথর থেকে কাবা শরিফের দরজা পর্যন্ত জায়গাটুকুকে বলা হয় মুলতাজাম। এছাড়া হজের সময় সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে অবস্থানের সময়েও দোয়া করলে সে দোয়া আল্লাহতায়ালা কবুল করেন। সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয় আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ দুই পাহাড়ের মাঝে সাঈ করা হাজিদের জন্য ওয়াজিব। উভয় পাহাড়ই দোয়া করা ও দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম স্থান।

আরাফার মাঠে আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের দোয়া কবুল করেন। মূলত আরাফার মাঠে আরাফার দিবসে অবস্থান ও আমলই হচ্ছে দোয়া। এ দিন দোয়া ও মোনাজাতের গুরুত্ব অপরিসীম। এসময় জোহর ও আসরের নামাজকে জোহরের প্রথম ওয়াক্তের মধ্যে একত্রে আদায় করে নিতে হয়। কোনো সুন্নত বা নফল নামাজ আদায় না করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দীর্ঘ সময় দোয়া-মোনাজাত ও কান্না-কাটিতে ব্যস্ত থাকতে হয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আরাফাতের দিনের দোয়াই উত্তম দোয়া। আমি ও আমার আগের নবীরা যা বলেছিলেন তার মধ্যে সর্বোত্তম কথাঃ “আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বূদ নেই। তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই, সার্বভৌমত্ব তারই এবং সমস্ত কিছুর উপর তিনি সর্বশক্তিমান”।

মুজদালিফায় দোয়া করলে সে দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা যখন আরাফা থেকে প্রত্যাবর্তন করবে, মাশআরুল হারামের কাছে পৌঁছে আল্লাহকে স্মরণ করবে।’ –সূরা আল বাকারা: ১৯৮

হজরত রাসূলুল্লাহ সা. মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায়ের পর ‘কুজা’ পাহাড়ের পাদদেশে গিয়ে উপস্থিত হতেন এবং সেখানে তিনি অবস্থান করতেন। এ স্থানটি বর্তমানে মাশআরুল হারাম মসজিদের সম্মুখভাগে অবস্থিত। একেবারে আকাশ পরিষ্কার হওয়া পর্যন্ত দোয়া ও মোনাজাতে মশগুল থাকতে হয়। মূলত এটিই হলো মুজদালিফার মৌলিক আমল।

দোয়া কবুলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও সময় হচ্ছে, জামারায় শয়তানের উদ্দেশে কঙ্কর নিক্ষেপ করে দোয়া করা। এটি শয়তানের প্রতি হাজিদের ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ। কঙ্কর নিক্ষেপের পর জামারার স্থান থেকে সামান্য দূরে সরে গিয়ে প্রাণ খুলে দোয়া করলে সে দোয়া আল্লাহ কবুল করেন।

বিদায়ী তাওয়াফ শেষে দোয়া করলেও সে দোয়া কবুল হতে পারে। হজের সব কর্ম পালন শেষ করে ফেরার আগে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হবে। এছাড়া জমজমের পানি পান করার সময়ও আল্লাহার কাছে দোয়া করতে হয়। জমজমের পানি পান করার সময় আপনি যা দোয়া করবেন, আল্লাহতায়ালা তাই কবুল করবেন।

হজের সময় তওয়াফের স্থানে, কাবাঘরের ভেতর, মাকামে ইবরাহিমের পেছনে, মিনার মসজিদে খায়েফে, হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানির মধ্যবর্তী স্থান, হাতিমের (এলাকার) মধ্যে, মিজাবে রহমতের নিচে যেখানে বায়তুল্লাহর ছাদের পানি পড়ে ও মাকামে ইবরাহিমের পেছনে বেশি বেশি দোয়া করার নিয়ম রয়েছে। এসব স্থানে দোয়া করলে সে দোয়া আল্লাহতায়ালা কবুল করে নেন।

এই বিভাগের আরও খবর