img

ক্লাব ক্যারিয়ারে অনেক আগে এক ম্যাচেই পাঁচ গোল করার কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। ২০১২ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে বেয়ার লেভারকুসেনের জালে একাই ৫ গোল দিয়েছিলেন মেসি। তবে জাতীয় দলের হয়ে এর আগে সাতটি হ্যাটট্রিক করলেও এক ম্যাচে পাঁচ গোল করতে পারেননি তিনি। এস্তোনিয়ার বিপক্ষে পাঁচ গোল করে সেই আক্ষেপও ঘুচিয়েছেন এই কিংবদন্তি। তবে মেসির ক্যারিয়ারে আছে এমন অনেক স্মরণীয় মুহূর্ত। অবস্মরনীয় পারফরম্যান্সে মেসি মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই।

বলা হয়ে থাকে মেসি যতটা বার্সেলোনার, ঠিক ততটা নন আর্জেন্টিনার। বার্সেলোনার হয়ে দেখানো পারফরম্যান্স বা সাফলয় কোনটাই আর্জেন্টিনার জার্সিতে অনুদিত না হওয়ায় মেসির নামে এ বদনাম রটে গিয়েছিল। তবে ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ ফাইনালসহ তিনটি ফাইনালে দলকে তুলে সেই বদনাম ঘোচাতে সক্ষম হন তিনি। তবে বার্সেলোনার শিরোপাভাগ্য যে ধরা দিচ্ছিল না আর্জেন্টিনার জার্সিতে।

২০২১ এ ব্রাজিলকে হারিয়ে সে আক্ষেপ দূর করেছেন। তারপর বার্সেলোনা ছেড়ে যোগ দিয়েছেন পিএসজিতে। তবে বার্সেলোনার মেসিকে এখনো দেখা যায়নি পিএসজির জার্সি গায়ে। তবে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে দেখা মিলছে বার্সেলোনার মেসি। আর্জেন্টিনা যে ৩৩ ম্যাচ ধরে অপরাজিত তার বড় কৃতিত্ব তো মেসির।

চলুন এই সুযোগে দেখে নেয়া যাক আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে মেসির সেরা কিছু পারফরম্যান্স। ফুটবল বিষয়ক ওয়েবসাইট গোল ডট কমের বিচারে এগুলোই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মেসির সেরা খেলা -

১০. আর্জেন্টিনা ৪-০ ইউনাইটেড স্টেটস, ২১ জুন, ২০১৬: কোপা আমেরিকার শতবর্ষের এই আয়োজনে সেমিফাইনালে মেসি দেখিয়েছিলেন তার খেলোয়াড়ি জীবনের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স। স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে শুধু গোলই করেননি, সেদিন আক্রমণের পুরোটা জুড়ে ছিলেন এলএম টেন। ৪-০ গোলের জয়ে ফ্রি-কিক থেকে দুর্দান্ত গোলের পাশাপাশি সতীর্থদের গোলেও রেখেছেন ভূমিকা।

৯. কলম্বিয়া ১-২ আর্জেন্টিনা, ১৫ নভেম্বর, ২০১১: ব্রাজিল বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বাছাই পর্বটা শুরু হয়েছিল বাজেভাবে। প্রথম ম্যাচে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মত তারা হারে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে। ঠিক পরের ম্যাচেই নিজেদের মাঠে পয়েন্ট হারায় বলিভিয়ার বিপক্ষেও। এর ঠিক পরের ম্যাচেই কলম্বিয়ার মাটিতে পাবনের গোলে পিছিয়ে পড়ে হারের শঙ্কায় কাঁপছিল আলবিসেলেস্তেরা।

দ্বিতীয়ার্ধে কয়েকটা পরিবর্তন নিয়ে নতুন উদ্যমে নামা আর্জেন্টিনা ট্রাকে ফেরে অধিনায়ক লিও মেসির দারুণ এক গোলে। এরপর ম্যাচজয়ী গোলটি করেন সার্জিও আগুয়েরো। এই জয়েই কোচ আলেসান্দ্রো সাবেয়ার পায়ের নিচের মাটি শক্ত হয়। এই ম্যাচ দিয়েই আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগে মেসি-হিগুয়েইন-আগুয়েরো ত্রয়ীর রাজত্বের সূচনা, যার হাত ধরে তিন বছর পর বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে আলবিসেলেস্তেরা।

৮. আর্জেন্টিনা ৩-০ ইকুয়েডর, ৩ জুলাই, ২০২১: মেসি কোন প্রতিযোগিতার নকআউট পর্বে গোল করার পর ততদিনে পেরিয়ে গেছে পাঁচ বছর। ইকুয়েডরের বিপক্ষে কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনাল শেষে যখন মাঠ ছাড়ছেন মেসি ততক্ষণে আর কারো সন্দেহ নেই যে, মেসি বড় ম্যাচের খেলোয়াড়। প্রথমে রদ্রিগো দি পল ও লাউতারো মার্টিনেজকে দিয়ে গোল করালেন। তারপর ম্যাচের যোগ করা সময়ে ডি মারিয়াকে ফাউল করা হলে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। তবে ভিএআরে চেক করে পেনাল্টির বদলে ফ্রি-কিকের সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। বক্সের কর্নার থেকে পাওয়া ফ্রি-কিক থেকে মেসি যে গোল করলেন তাতে তাকে চাইলে পেনাল্টি গোলও বলা চলে।

৭. আর্জেন্টিনা ৩-০ মেক্সিকো, ১১ জুলাই, ২০০৭: কী হতে পারত যদি হুয়ান রোমান রিকুয়েলমেকে আর কিছুদিন জাতীয় দলে ধরে রাখতে পারতেন মেসি। হয়তো তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের চিত্রটাই ভিন্ন হতো। ফুটবল ইতহাসের অন্যতম আইকনিক দুই নম্বর টেনকে তারপরও কিছুদিন এক সঙ্গে খেলতে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। তেমন এক ম্যাচ মেসির ক্যারিয়ারে স্মরণীয় হয়ে আছে।

কোপা আমেরিকার ইতিহাসের অন্যতম সেরা সেমিফাইনালে মেক্সিকোর বিপক্ষে রিকুয়েলমে ও মেসি দুজনই স্কোরশিটে নাম তুলেছিলেন। ম্যাচের দ্বিতীয় গোলটি করেছিলেন সেদিনের টিনএজার মেসি। অসাধারণ চিপে গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে পাঠানো গোলটি মেসির জাতীয় দলের হয়ে করা সেরা গোলগুলোর তালিকায় থাকবেই।

৬. আর্জেন্টিনা ২-১ বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, ১৫ জুন, ২০১৪: ২০১০ বিশ্বকাপে একবারও জালের দেখা পাননি লিওনেল মেসি। সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে বিধ্বস্ত হয়ে বিদায় নেয় আর্জেন্টিনাও। এই হতাশা কাতানর জন্য মেসি বেছে নেন পরের বিশ্বকাপটাই। ব্রাজিল বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচেই গোল করে বিশ্বকাপে ৮ বছর পর ফের গোল করেন মেসি।

এই গোলের স্মৃতি রোমন্থন করে ফোর ফর টুকে মেসি বলেন, 'বিশ্বকাপে দ্বিতীয় গোল করতে আমাকে ৮ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। আমরা একটা দারুণ টুর্নামেন্ট কাটাতে চাচ্ছিলাম এবং এটার শুরু হয়েছিল বসনিয়ার বিপক্ষে জয় দিয়ে, এবং আমি দ্বিতীয় গোলটি করেছিলাম।'
 

৫. আর্জেন্টিনা ৬-০ সার্বিয়া ও মন্টেনিগ্রো, ১৮ জুন, ২০০৬: ১৯তম জন্মদিনের আটদিন আগে মেসি নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলতে নামেন। হোশে পেকারম্যানের তারকায় ভরা দলে প্রথম একাদশে খেলার সুযোগ অবশ্য হয়নি মেসির। সার্বিয়া ও মন্টেনিগ্রোর বিপক্ষে মেসি যখন নামেন ততক্ষণে আর্জেন্টিনা ৩-০ গোলে এগিয়ে আছে। সেদিন ম্যাচের শেষ পনেরো মিনিট খেলার সুযোগ পেয়ে মেসি দলের ষষ্ঠ গোলটি করেন।

৪. আর্জেন্টিনা ৩-২ নাইজেরিয়া, ২৫ জুন, ২০১৪: মেসির অসাধারণ ক্যারিয়ার থেকে কয়েকটি বিশেষ মুহূর্ত খুঁজে বের করা সহজ নয়। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে মেসি তার সেরা সময়টা হয়তো ২০১৪ বিশ্বকাপেই কাটিয়েছেন। বসনিয়া ও ইরানের বিপক্ষে গোল করার পর  বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে আবার  আর্জেন্টিনার কঠিন পরীক্ষা নেয় নাইজেরিয়া। তবে আর্জেন্টিনা দলে থাকা মেসি ব্যবধান গড়ে দেন। মেসির জোড়া গোলেই নাইজেরিয়া বাঁধা পেরিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। মেসিও পান জন্মদিন উদযাপনের দারুণ উপলক্ষ।

৩. আর্জেন্টিনা ৪-৩ ব্রাজিল, ৯ জুন, ২০১২: নিউইয়র্কের মেটলাইফ স্টেডিয়াম সেদিন স্বাক্ষী হয়েছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিপক্ষে মেসির ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্সের। দুই লাতিন পরাশক্তির জমজমাট লড়াইয়ে মেসির হ্যাটট্রিকে ৪-৩ ব্যবধানে জয় পায় আর্জেন্টিনা। সে ম্যাচে মেসির একটি গোল ছিল প্রায় মধ্যমাঠ থেকে একক প্রচেষ্টায় করা। যদিও সে ম্যাচে ব্রাজিলের মূল একাদশের অধিকাংশ খেলোয়াড় অনুপস্থিত ছিলেন, তবুও ম্যাচটি স্মরণীয় হয়ে আছে লিও মেসির হ্যাটট্রিকে।

২. ব্রাজিল ০-১ আর্জেন্টিনা, ১০ জুলাই, ২০২১: জাতীয় দলের হয়ে মেসির ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত আসে এই ম্যাচেই। ২০০১ সালের কোপা আমেরিকার পর ব্রাজিলের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে স্মরণীয় ম্যাচ। কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়েই মেসির ক্যারিয়ারে আন্তর্জাতিক শিরোপার আক্ষেপ দূর হয়। অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার গোলে আর্জেন্টিনা ২৮ বছর পর পেয়েছিল আন্তর্জাতিক শিরোপার স্বাদ।

১. ইকুয়েডর ১-৩ আর্জেন্টিনা, ১০ অক্টোবর, ২০১৭: এটা ছিল খাঁদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে আর্জেন্টিনার ভাগ্য ঝুলে ছিল শেষ ম্যাচ পর্যন্ত। শেষ ম্যাচে ইকুয়েডরের মাটিতে তাদের হারাতেই হতো হোর্হে সাম্পাওলির শিষ্যদের। এমন ম্যাচের শুরুতেই পিছিয়ে পড়েছিল আর্জেন্টিনা। এরপর অবশ্য সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক মেসি।দারুন এক হ্যাটট্রিক করে দলকে নিয়ে যান বিশ্বকাপের মঞ্চে।  

এই বিভাগের আরও খবর