img

ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে হজ চতুর্থ, যা অবশ্যই পালনীয়। হজ করতে আগ্রহী ব্যক্তিকে সব ধরনের ঋণ থেকে মুক্ত হতে হয়। এক কথায় ঋণমুক্ত শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের ওপরেই হজ ফরজ। আর এ ফরজ কাজে যাওয়ার আগে দরকার প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা। বিশেষ করে হজে সুস্থ থাকাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

মুসলিম উম্মাহর ঐক্য-ভ্রাতৃত্বের মহাসম্মেলন হজ। হজ জিলহজ মাসে অনুষ্ঠিত হলেও সামগ্রিক কার্যক্রমের বিবেচনায় রোববার (৫ জুন) থেকে হজের ফ্লাইট শুরু হয়েছে। সে হিসেবে হজযাত্রীদের সুস্থতা ও হজের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও অন্যান্য বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য জানা প্রয়োজন।

হজ আর্থিক ও শারীরিক দিক দিয়ে অন্য চারটি স্তম্ভের চেয়ে একটু আলাদা। বিশেষ করে সৌদির উষ্ণ আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে বিদেশিদের জন্য হজ পালন কিছুটা কষ্টকরও বটে। এ ছাড়া হজে লাখ লাখ লোকের অংশগ্রহণ ও ভিড়ের কারণে আরও কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে। তাই সুস্থ থেকে সঠিকভাবে হজ সম্পন্ন করতে কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত।

হজযাত্রীদের হজে যাওয়ার আগে ও পরে স্বাস্থ্যগত সুস্থতা সম্পর্কে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতেই আমাদের আজকের আয়োজন।

প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা


সৌদির উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে হজ পালনের সময় শারীরিক পরিশ্রম ও প্রচণ্ড গরমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ ঘাম ঝরে। এতে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। আর শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। এক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে। বিশেষ করে বোতলজাত পানি পান করা উত্তম। এ ছাড়া পরিমিত জুসও পান করতে পারেন।

পরিমিত খাবার গ্রহণ করা

হজের সময় পরিমিত খাবার গ্রহণ করুন। অতিভোজন এবং কম খাওয়া দুটোই পরিহার করুন। বদহজম ও বুক জ্বালা-পোড়া দুটোই অস্বস্তির কারণ হতে পারে। এ ছাড়া খাবারের তালিকায় ফল, স্টিম ভেজিটেবল, শাক-সবজি, ময়দার রুটি, দুগ্ধজাত খাবার, কাঁচা বাদাম ও অলিভ অয়েল রাখতে পারেন।


ফুটপাতের খাবার পরিহার করুন

স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা মাথায় রেখে ফুটপাত এবং হকারের কাছ থেকে খাবার ও ফল কেনা থেকে বিরত থাকুন। কারণ স্বাস্থ্যমান না থাকায় এতে ডায়রিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

একান্ত বাধ্য হলে খাবার কেনার আগে দেখে নিন- হকার এটা পরিষ্কার ও ভালোভাবে রেখেছেন কি না। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে এসব খাবার পরিবেশন করছে কি না। মাংস ঠিকভাবে রান্না হয়েছে কি না এবং ফল ও শাক-সবজি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গায় রাখা হয়েছে কি না। বিশেষ করে পানির সঙ্গে বরফ মেশাবেন না; এতে করে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

সন্দেহ হলে খাবেন না

কোনো খাবারের মান নিয়ে আপনার সন্দেহ হলে তা না খাওয়াই ভালো। যদি মুরগি ভালোভাবে রান্না না হয় এবং পঁচাবাসি মনে হয় তাহলে তা পরিহার করুন। খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে ডায়রিয়া হতে পারে এবং আপনি দুর্বল হয়ে পড়তে পারেন।
 

ভালো করে হাত ধুয়ে নিন


সুষ্ঠুভাবে হজ পালনে সুস্বাস্থ্য ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রত্যেক কাজের আগেই ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন। এতে করে জীবাণু মুক্ত থাকা যায় এবং জীবাণু ছড়ানো রোধ করা যায়। খাবার আগে-পরে, প্রশ্রাব-পায়খানার পর এবং ক্ষতস্থান ও নাক পরিষ্কারের পর ভালোভাব হাত ধুয়ে নিন।


হজের সময় ছোট এক বোতল স্যানিটাইজার সঙ্গে রাখতে পারেন। কারণ সবসময় কাছাকাছি জায়গায় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা মিলবে না। একটি বিষয় অবশ্যই মেনে চলার চেষ্টা করা উচিত, সেটা হলো- চোখ, নাক ও মুখ থেকে আপনার হাত দূরে রাখুন।

যোগাযোগে ঘনিষ্ঠতা এড়িয়ে চলুন


হজ পালনের সময় অন্যদের সঙ্গে কোলাকুলি ও করমর্দন যতসম্ভব পরিহার করা ভালো। এমনকি পিঠ চাপড়ানো থেকেও বিরত থাকা উচিত। কারণ এতে নানা ধরনের রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।

এ ছাড়া আপনি অসুস্থ হলে অন্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন। কারণ আপনার পাশের ব্যক্তির মাঝে জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে। হাঁচি এবং কাশির সঙ্গে অনেক রোগ-জীবাণু ছড়ায়। তাই আপনার মুখ ও নাক ঢেকে রাখুন এবং সঙ্গে টিস্যু রাখুন। ব্যবহারের পর সঠিক জায়গায় টিস্যু ফেলুন এবং হাত ধুয়ে নিন।

পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিন এবং ঘুমান

দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি দূর করতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম। সারারাত ঘুমানোর চেয়ে সুযোগ থাকলে হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা পালনের ফাঁকে ঘুমানো যেতে পারে। এতে শরীর ফুরফুরে থাকবে। সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য অটুট রাখতে সাহায্য করে।

এই বিভাগের আরও খবর