img

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন স্বপ্না আক্তার। অফিস থেকে রাতে বাসায় ফিরেই তার প্রথম কাজ ভালো করে গোসল করা। রাত হয়ে যাওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই তাড়াহুড়ো করে গোসল শেষ করতে হয় তাকে। কিন্তু সেদিন হঠাৎ করেই তার কেন জানি মনে হলো ডান স্তনের উপরের দিকে চাকার মতো কিছু একটা অনুভূত হচ্ছে। ভালো করে বাম স্তনও পরীক্ষা করেন তিনি। কিন্তু কোথাও আর চাকার মত অনুভব হচ্ছে না। শুধু ডান স্তনের উপরের অংশেই চাকা অনুভব হচ্ছে। আর চাকাটি বেশ বড়ও। এতদিন ধরে বুঝতে না পারায় নিজের উপরই রাগ হলো তার। সিদ্ধান্ত নিলেন পরদিন অফিস ছুটির পর ডাক্তারের কাছে যাওয়ার।

রাহেলার বয়স এখন ৩৯। চার সন্তানের মা রাহেলা গৃহবধূ। থাকেন নরসিংদীর এক প্রত্যন্ত গ্রামে। তার হঠাৎ করেই রোগটি ধরা পড়ে। আর যখন জানতে পারেন যে তার ব্রেস্টে টিউমার তখন আর সময় ছিল না। আবার দ্রুত যে চিকিৎসা করাবে তারও সামর্থ্য ছিল না কৃষক স্বামীর। এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় মারা যান রাহেলা।

গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. নুরানী নিরু বলেন, এমন অনেক মেয়ে আর মহিলা রয়েছেন যারা ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত। তবে চাকার মত অনুভব করলেই যে ক্যানসার, তা কিন্তু নয়। কিন্তু আমাদের মত দেশের নারীদের সবচেয়ে প্রধান সমস্যা হচ্ছে লজ্জা। তারা লজ্জায় এসব রোগের কথা মুখ ফুঁটে কাউকে বলতে পারেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় একেবারে শেষ অবস্থায় যখন রোগী একেবারে সহ্য করতে পারছেন না তখন তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসা হয়। এমন ক্ষেত্রে ডাক্তারদেরও তেমন কিছু করার থাকে না।

তিনি বলেন, স্তনে চাকা দেখা দিলেই যে ক্যানসার তা কিন্তু নয়। তবে এ জন্য দরকার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা। তবে অধিকাংশ সময়ই দেখা যায়, এসব মূলত সাধারণ টিউমার বা সাধারণ কোনো রোগ। আর তাই স্তনে চাকা দেখা দিলেই আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

ডা. নীরু বলেন, শরীরের অন্য স্থানের মতোই স্তনে অস্বাভাবিক কোষ বাড়ার কারণে কোনো চাকা হলে তাকে টিউমার বলে। শরীরের কোনো প্রয়োজন ছাড়াই অনিয়ন্ত্রিত কোষবিভাজন থেকে এর সৃষ্টি। দুই ধরনের হতে পারে এই টিউমার। বিনাইন টিউমার মূলত ক্ষতিকারক নয়। আর ম্যালিগন্যান্ট টিউমার, যা ক্ষতিকারক। উৎপত্তিস্থলের সীমানা ছাড়িয়ে বাসা বাঁধতে পারে অন্য যেকোনো স্থানে, কাছে কিংবা দূরের অঙ্গে। এই ম্যালিগন্যান্ট টিউমারই ক্যানসার।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। তারপরও নারীদের মধ্যে বর্তমানে যে সচেতনতাটুকু তৈরি হয়েছে তা এই আওয়ামী লীগ সরকারের কারণেই হয়েছে। সরকারের একাধিক প্রচারণার কারণে আজ শহর ছাড়িয়ে গ্রামের নারী-পুরুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে।

আরেক গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. শাহানারা চৌধুরী বলেন, মূলত খুব অল্প বয়সে পিরিয়ড বা মাসিক হওয়া এবং বেশি বয়সে মাসিক বন্ধ হলেও বাড়তি ঝুঁকি থাকে ব্রেস্ট ক্যান্সারের। আর এ জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। মানুষকে আরো বেশি সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর