img

লিচু যেহেতু গ্রীষ্মকালীন ফল। তাই সব সময় এই ফল চাইলেই আপনি খেতে পারবেন না। তাই বলে অনেকেই প্রিয় এই ফলটিকে অনেক সময় বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেলেন। সমীক্ষা বলছে, এই প্রবণতাতেই অকালে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়তে পারেন আপনি।

তবে গ্রীষ্মকালীন এই ফলটির নানা উপকারী গুণ। এ উপকারী গুণ পেতে গরমের এ সময়টাতে আপনি অবশ্যই লিচু খেতে পারেন।

উপকারিতা


লিচুর উপকারিতায় প্রথমেই যা বলা যায় তাহলো এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এতে থাকা পটাশিয়াম হার্টবিট ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।


লিচুর ফিনলিক যৌগ ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং লিভারের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।


ফাইবারসমৃদ্ধ এই ফলটি খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে এবং অন্ত্রের গতিবিধি উন্নত করে। এছাড়া  ফ্রি র‌্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং অক্সিডেটিভ ক্ষতি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে লিচু।

লিচুর থিয়ামিন ও নিয়াসিন নামে উপাদান শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায়। কমায় ক্যানসারের আশঙ্কাও।

অপকারিতা


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লিচু পুষ্টিগুণে ভরপুর হলেও এর ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যা সম্পর্কে সবারই  জানা প্রয়োজন।

শরীরে লিচুর ক্ষতিকর প্রভাবের প্রথমেই রয়েছে শরীরের ভারসাম্যহীনতা। গবেষকরা শরীরে লিচুর প্রভাব বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, অতিরিক্ত লিচু খেলে শরীরে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে। এছাড়া গলা ব্যথা, রক্তক্ষরণ, মুখের আলসারের মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে অচিরেই।

এই ফল রক্তচাপ কমাতে পারে। তবে বিপদজনক ভাবে রক্তচাপ কমলে ঝাপসা দৃষ্টি, মাথা ঘোরা, ঠান্ডা, বমি বমি ভাব, অগভীর শ্বাস প্রশ্বাস এবং চরম ক্লান্তি দেখা দেওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। খালি পেটে লিচু খেলে শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে।

যারা লো প্রেশারের রোগী তাদের তাদের বেশি মাত্রায় লিচু খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত লিচু খাওয়া অনেক সময় লো প্রেশারের রোগীর বুক ধরফর সমস্যার সৃষ্টি করে। যারা ডায়াবেটিসের ওষুধ খান, তাদের লিচু খাওয়ার সময়ে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ পরিমাণের বেশি লিচু খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীর গ্লুকোজের পরিমাণ মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে।

পুষ্টিবিদদের মতে, ১০০ গ্রাম লিচুতে ৬৬ ক্যালোরি থাকে। বেশি লিচু খেলে তা ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে মেদবহুল মানুষের বেশি লিচু খাওযা উচিত নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছে, ব্যক্তিভেদে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত লিচু খেলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। যা হবু মায়ের শারীরিক জটিলতা যেমন ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা, মৃত সন্তানের জন্মদান এবং অ্যালার্জির প্রকোপ বাড়িয়ে তুলতে পারে অনেকটাই।


লিচু খাওয়ার সবচেয়ে মারাত্মক অপকারিতা হলো মৃত্যুঝুঁকি। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসির সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারত ও বাংলাদেশে কিছু এলাকায় শিশুর মৃত্যুর কারণ হিসাবে লিচু থেকে বিষক্রিয়ার প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সমীক্ষা বলছে, ভারতের বিহার রাজ্য এবং বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অনেক শিশুর মৃত্যুর কারণ এটি।

মৃত্যুর কারণ হিসেবে সমীক্ষাটি খুঁজে পেয়েছে একটি অবাক করা কারণ। লিচুতে থাকা হাইপোগ্লাইসিন নামে একটি রাসায়নিক উপাদান শরীরে শর্করা তৈরি রোধ করে। তব সব ক্ষেত্রে নয়। খালি পেটে অতিরিক্ত লিচু খাওয়া অথবা আগের দিন রাতে না খেয়ে থাকা এবং সকালে ঘুম থেকে উঠেই লিচু খাওয়া শিশু ও ডায়াবেটিস রোগীর শরীরে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দেয়। তাই এভাবে যে কেউ লিচু খেলে  তা মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অবস্থায় লিচু খেয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকটাই বাড়িয়ে দেয় অপরিপক্ক লিচুকে। এছাড়া লিচু রোগ প্রতিহত করতে কৃষকের অজানা কীটনাশকের প্রয়োগকেও দায়ি করা হয়েছে।

তাই লিচু যেন আপনার মুত্যুর কারণ হয়ে না উঠে তার জন্য অবশ্যই নিশ্চিত করুন আপনার কেনা লিচু যেন অপরিপক্ক ও কীটনাশকমুক্ত হয়। সেই সঙ্গে চেষ্টা করুন খালি পেটে লিচু খাওয়া থেকে বিরত থাকতে।

এই নির্দেশনা মেনে একজন সুস্থ মানুষ সারাদিনে সর্বোচ্চ ৮ টি লিচু খেলে সুস্থ ও নিরাপদ থাকবেন। তবে শিশু ও ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এই লিচুর পরিমাণ ৩ টির অধিক না হওয়াই ভালো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বেশি সতর্কতা মেনে চলতে এই লিচুর পরিমাণ এক সঙ্গে না খেয়ে সারাদিনে অল্প অল্প করে খেলে সবচেয়ে নিরাপদ থাকা যাবে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। সেই সঙ্গে বেশি লিচু দিয়ে জুস তৈরি করে খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে বলে মনে করছেন গবেষকরা। কারণ হিসেবে তারা বলেন, এভাবে লিচু খেলে শরীরে বেশি পরিমাণে লিচু প্রবেশ করার সুযোগ পায়। 

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, বিবিসি।  

এই বিভাগের আরও খবর