img

বিভিন্ন ধরনের চায়ের মধ্যে গ্রিন টি বা সবুজ চা মানবদেহের জন্য বিশেষ উপকারী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তবে গর্ভাবস্থায় এই পানীয় পান নিরাপদ কি না, তা নিয়ে অনেকের মনেই দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে।

গ্রিন টি ক্যামেলিয়া সিনেনসিস নামের উদ্ভিদের পাতা থেকে তৈরি হয়।  এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকার কারণে এটি একটি স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে বিবেচিত হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রিন টির মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, বি, বি৫, ডি, ই, সি, ই, এইচ সেলেনিয়াম, ক্রোমিয়াম, জিংক, ক্যাফেইন, মেঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। এ ছাড়া  উদ্ভিজ্জ যৌগগুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যাটেচিন এবং পলিফেনলের মতো প্রয়োজনীয় উপাদান। তাই গর্ভাবস্থায় গ্রিন টি পানে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে মনে করছেন নিউইয়র্ক গবেষকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ অফ অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টদের মতে, গ্রিন টি এর প্রতি কাপে প্রায় ২৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে। যদি ক্যাফেইনের পরিমাণ প্রতিদিন ২০০ মিলিগ্রামের কম গ্রহণ করা হয় গ্রিন টি থেকে তবে গ্রিন টি পানে কোনো সমস্যা নেই গর্ভাবস্থায়। তবে গর্ভের ভ্রূণের সুরক্ষায় দিনে ২ কাপের বেশি গ্রিন টি পান না করাই ভালো বলে মনে করছেন তারা।

কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন,  গ্রিন টি শরীরে ফলিক অ্যাসিড বা ফোলেটের স্তর হ্রাস করার সম্ভাবনা রাখে, যা শিশু ভ্রূণের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক। তাই শিশু ভ্রূণের প্রথম ৩ মাস গ্রিন টি পরিহার করতে হবে। এরপর থেকে হবু মা চাইলে প্রতিদিন ২ কাপ গ্রিন টি পান করতে পারে। এতে অপকারিতা নয় বরং মিলবে গ্রিন টির উপকারিতা।

গর্ভাবস্থায় গ্রিন টি পানে যেসব সুবিধা রয়েছে বলে মনে করছেন গবেষকরা, তাহলো এই পানীয় হবু মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। এতে থাকা উদ্ভিজ্জ যৌগগুলো গর্ভাবস্থার আগে, গর্ভাবস্থায় এবং গর্ভাবস্থার পরে স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় গ্রিন টি পান করলে রক্তচাপ বা বমি বমি ভাবের জটিলতা দূর হয়। এতে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড এল-থেনাইন মানসিক চাপ বা উদ্বেগ কমাতে কাজ করে।

গ্রিন টিতে থাকা ক্যাটেচিন টিউমার গঠনে বাধা দেয়, ইমিউন সিস্টেমকে সমর্থন করে এবং রক্তচাপ কমাতে ভূমিকা রাখে যা প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার মতো গর্ভাবস্থার জটিলতা এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ।

এ ছাড়া এর এপিগালোক্যাটেচিন গ্যালেট (ইজিসিজি) নামের ক্যাটেচিন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।  বিপজ্জনক ফ্যাটি টিস্যুর মাত্রা কমায়। কোলেস্টেরল ২, ডায়াবেটিস টাইপ ২ এবং ৩ হওয়ার ঝুঁকি হ্রাসসহ এই পানীয় হৃদ্‌রোগ ও হৃদ্‌যন্ত্রের প্রদাহ কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।

ফ্রি র‌্যাডিকেলে দেহের গুরুত্বপূর্ণ কোষ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে, বদহজম এবং পেটের সমস্যা নিরাময়ে, মুখের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে এবং হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিতে হবু মা গ্রিন টি পান করতে পারবে। তবে শিশু ভ্রুণের সুরক্ষায় তা যেন কখনোই দৈনিক ২ কাপের বেশি না হয় সেদিকে রাখতে হবে সতর্ক দৃষ্টি।  

সূত্র: এই সময়  

এই বিভাগের আরও খবর