img

ষড়যন্ত্র শয়তানের কাজ। শয়তান ও তার অনুসারীরা সর্বদা অন্যের ক্ষতি করার জন্য ওত পেতে থাকে। তাদের ষড়যন্ত্রের জালে কখন কাকে আটকানো যায় সেই ফন্দি আঁটতে থাকে। শয়তান ও তার ষড়যন্ত্রকারী অনুসারীরা মানবতার শত্রু।এরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই মানুষের অনিষ্টে লিপ্ত হয়ে থাকে। নিম্নে শয়তানের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের কিছু পদ্ধতি তুলে ধরা হলো :

হিতাকাঙ্ক্ষীর বেশে ধোঁকা দেয় : শয়তান মানুষকে বন্ধু বেশে ধোঁকা দেয়। বিভিন্ন কথার মারপ্যাঁচে ফেলে তাদের ঈমান-আমল ধ্বংস করে দেয়। মানবজাতিকে জান্নাত থেকে বের করার জন্য সে এই পদ্ধতিই অবলম্বন করেছিল। যা মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ফাঁস করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর শয়তান তাদের প্ররোচনা দিল, যাতে সে তাদের জন্য প্রকাশ করে দেয় তাদের লজ্জাস্থান, যা তাদের থেকে গোপন করা হয়েছিল এবং সে বলল, তোমাদের রব তোমাদের কেবল এ জন্য এ গাছ থেকে নিষেধ করেছেন যে, (খেলে) তোমরা ফেরেশতা হয়ে যাবে অথবা তোমরা চিরস্থায়ীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। সে শপথ করে তাদের বলল, আমি তোমাদের সত্যিকারের হিতাকাঙ্ক্ষী। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২০-২১)

পাপকে সুশোভিত করে উপস্থাপন করে : শয়তান মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য পাপকে শোভিত করে উপস্থাপন করে। ফলে মানুষ পাপের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং হিদায়াতের পথ থেকে দূরে সরে যায়। তাদের কাছে পাপাচারের অন্ধকারকেই প্রগতি ও আলো মনে হয়, আর জাহান্নামের অগ্নিশৃঙ্খলকে সফলতার মালা মনে হয়। শয়তান এ পদ্ধতিতে মানুষকে পথভ্রষ্ট করবে বলে মহান আল্লাহর সামনেই ঘোষণা দিয়েছিল। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সে বলল, হে আমার রব, যেহেতু আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তাই জমিনে আমি তাদের জন্য (পাপকে) শোভিত করব এবং নিশ্চয়ই তাদের সকলকে পথভ্রষ্ট করব। ’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ৩৯)

শয়তান তার এই পদ্ধতির ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বহু জাতিকে পথভ্রষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর শপথ, আমি তোমার আগে বহু জাতির নিকট রাসুল প্রেরণ করেছি। অতঃপর শয়তান তাদের জন্য তাদের কর্মকে শোভিত করেছে। তাই আজ সে তাদের অভিভাবক। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। ’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৬৩)

মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয় : শয়তান মিথ্যা ও লোভনীয় প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষকে প্রতারিত করে। তার এই ছলনার ফাঁদে যারা পা দেয়, তারা নিজেদের ইহকাল-পরকাল ধ্বংস করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করে। আর শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ছলনামাত্র। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১২০)

অশ্লীল কাজে উদ্বুদ্ধ করে : শয়তান মানুষকে অশ্লীল কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। তার ষড়যন্ত্রের একটি হাতিয়ার হলো মানুষের অন্তরে অশ্লীলতার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘শয়তান তোমাদেরকে দরিদ্রতার ভয় দেখায় এবং অশ্লীল কাজের আদেশ করে। আর আল্লাহ তোমাদের তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। ’ (সুরা : বাকারা,  আয়াত : ২৬৮)

অদৃশ্য থেকে ষড়যন্ত্র করে : শয়তান অদৃশ্য থেকে মানুষের ক্ষতি করে। মানুষ শয়তানকে সরাসরি দেখতে পায় না। দুনিয়ায় শয়তানের অনেক দোসরও পর্দার আড়ালে থেকে কলকাঠি নেড়ে মানুষের অনিষ্ঠ সাধন করে। পবিত্র কোরআনে অদৃশ্য শয়তান থেকে মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বনি আদম, শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে, যেভাবে সে তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল; সে তাদের পোশাক টেনে নিচ্ছিল, যাতে সে তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখাতে পারে। নিশ্চয় সে ও তার দলবল তোমাদের দেখে যেখানে তোমরা তাদেরকে দেখো না। নিশ্চয় আমি শয়তানদের তাদের জন্য অভিভাবক বানিয়েছি, যারা ঈমান গ্রহণ করে না। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২৭)

মানুষের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করে : শয়তানের কাজই হলো মানুষকে আল্লাহর জিকির থেকে বিরত রাখা এবং পাপে লিপ্ত রাখা। এটি করতে গিয়ে সে মানুষের শিরায়-উপশিরায় প্রবেশ করে। এবং মানুষকে বিভিন্নভাবে কুমন্ত্রণা দেয়। তার একটি কর্মপদ্ধতি হলো, মানুষের মনে অহেতুক সন্দেহ ঢুকিয়ে মানুষের অন্তরকে নষ্ট করা। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, শয়তান মানুষের শরীরে রক্তের মতো চলাচল করে। আমি আশঙ্কা করলাম যে, সে তোমাদের মনে কিছু সন্দেহ ঢুকিয়ে দেবে। (বুখারি, হাদিস : ২০৩৮)

সত্য-মিথ্যার মিশ্রণে প্রপাগান্ডা ছড়ায় : শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য সত্য-মিথ্যার মিশ্রণে প্রপাগান্ডা ছড়ায়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, ফেরেশতামণ্ডলী মেঘমালার আড়ালে অবতরণ করেন এবং আকাশের ফায়সালা আলোচনা করেন। তখন শয়তানরা তা চুরি করে শোনার চেষ্টা করে এবং তার কিছু শুনেও ফেলে। অতঃপর তারা সেটা গণকের নিকট পৌঁছে দেয় এবং তারা তার সেই শোনা কথার সঙ্গে নিজেদের আরো শত মিথ্যা মিলিয়ে বলে থাকে। (বুখারি, হাদিস : ৩২১০)

আমাদের উচিত শয়তান ও শয়তানের অনুসারীদের এ ধরনের প্রপাগান্ডার ব্যাপারে সচেতন থাকা এবং মহান আল্লাহর কাছে শয়তান ও তার অনুসারীদের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাওয়া। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন।

এই বিভাগের আরও খবর