img

রুশ অভিযানে বিধ্বস্ত ইউক্রেনে মুসলিমরা ইতিহাসের কঠিনতম রমজান উদ্যাপন করছে। প্রয়োজনীয় খাদ্য, পানীয়, জীবনোপকরণের সংকটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা শঙ্কা। তার পরও মুসলিমরা রোজা রাখছে এবং পারস্পরিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে। গত ১ এপ্রিল আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে ইউক্রেনের মুসলিমদের রমজান ভাবনা তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে মুসলিম লিগ অব ইউক্রেনের প্রধান নিয়ারা মামুতভা বলেন, ‘আমাদের সব কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। ইউক্রেনের বহু মুসলিম দেশত্যাগ করেছেন এবং যারা আছেন তাদেরও সাহায্য প্রয়োজন। ’ মামুতভা নিজেও চেরনিভতসির ইসলামিক সেন্টারে আশ্রয় গ্রহণকারী কয়েক বাস্তুচ্যুত পরিবারের সঙ্গে প্রথম ইফতার করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

জাতিসংঘের বর্ণনা মতে, রুশ অভিযানে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে এক কোটির বেশি মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে এবং ৪০ লাখ মানুষ ঘর ছেড়েছে। ইউক্রেনের জনসংখ্যার ১.১ শতাংশ মুসলিম। অর্থাৎ প্রায় চার লাখ মুসলমান ইউক্রেনে বসবাস করে। তাদের বেশির ভাগ ক্রিমিয়ান তাতার। এর মধ্যে রাজধানী কিয়েভে এক লাখ মুসলমানের বসবাস। চলমান যুদ্ধে যা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অবিরাম বোমাবর্ষণের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের কারফিউ এবং চলাচলে নানা ধরনের বিধি-নিষেধ মুসলমানের রমজান উদযাপনকে আরো কঠিন করে তুলেছে। কেননা তারাবির মতো সম্মিলিত ইবাদত বা এক সঙ্গে ইফতার করার ঐতিহ্যও রক্ষা করতে পারছে না। এ ছাড়া যেসব মুসলিম পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়ে নিজ পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও আপনজনদের ছেড়ে বহু দূরে চলে এসেছে, তাদের সহযোগিতায়ও এগিয়ে যেতে পারছে না। তার পরও মুসলিমরা রমজানের ইবাদত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নিয়ারা মামুতভা, যার স্বামী মুহাম্মেদ মামুতেভ একজন ইমাম। তিনি বলেন, ‘আমরা আল্লাহর ক্ষমা পেতে; আমাদের পরিবার, আমার আপনজন, আমাদের দেশ ইউক্রেনের জন্য প্রার্থনা করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করতে প্রস্তুত। ’

২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করলে ক্রিমিয়ান তাতার বংশোদ্ভূত মামুতভা বাস্তুচ্যুত হন এবং তার পরিবার জাপোরিঝজিয়াতে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হয়। মামুতভা বলেন, আমরা যখন ক্রিমিয়ায় বসবাস করতাম, তখন কখনো ভাবিনি আমাদের দেশত্যাগ করতে হবে। এর আগেও স্টালিন আমাদের জনগণকে (ক্রিমিয়ান তাতারদের) দেশত্যাগে বাধ্য করেছিল। আমার দাদা-দাদি ও মা-বাবা সব সময় ঘরে ফেরার স্বপ্ন দেখত। ১৯৮৮ সালে দুই বছর বয়সে আমরা ফিরে যাই, কিন্তু ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করার পর ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফলে আমরা পুনরায় ঘর ছাড়ি।

তিনি আরো বলেন, এই আমাদের পরিকল্পনায় অনেক পরিবর্তন আনতে হয়েছে। যার মধ্যে আছে ধর্মীয় শিক্ষা কার্যক্রম এবং গৃহহীনদের মধ্যে খাবার বিতরণ। এখন আমরা সাইরেন শুনলে পালিয়ে যাই এবং জানি না আগামীকাল আমাদের সামনে কী অপেক্ষা করছে। এর মানসিক প্রভাব অত্যন্ত কঠিন। মনে হচ্ছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১০ বছর পার হয়ে গেছে।

তুর্কি পর্দা বিক্রেতা ঈসা সেলেবি ২০১০ সাল থেকে ইউক্রেনে বসবাস করেন। তিনি বলেন, এই বছর বহু মানুষ তাদের ঘর থেকে দূরে আছে এবং অনেকে তাদের গাড়িতে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। আমরা সব সময় আমাদের ঘরের দরজা উন্মুক্ত রাখব রমজানে বা যুদ্ধের সময়। আমরা আমাদের রুটি ভাগ করে খাব।

আল জাজিরা অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর