img

রক্তে শর্করার পরিমাণ ৪ মিলিমোল বা ৭০ একরের নিচে নেমে গেলে তাকে চিকিৎসার পরিভাষায় ‘হাইপোগ্লাইসেমিয়া’ বলা হয়, যা হাইপো নামেও পরিচিত। এ সমস্যায় কেউ আক্রান্ত হলে বড় বিপদ ঘটে যেতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য এটি একটি বিভীষিকা।

 

হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় রক্তের গ্লুকোজ বা শর্করা হঠাৎ নেমে যায়। গবেষণা বলছে, বেশির ভাগ ডায়াবেটিসের রোগী জীবনে এক বা একাধিকবার এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন।


মানব শরীরের জীবনীশক্তি বা ফুয়েল হলো গ্লুকোজ, যা শরীরের প্রতিটি কোষে শক্তি জোগায়। বিশেষ করে মস্তিষ্কের একমাত্র জ্বালানি হলো গ্লুকোজ। এই গ্লুকোজ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেলেই হতে পারে বিপদ। যার ফলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্রম কমে রোগী অচেতন হয়ে পড়তে পারেন। এমনকি চলে যেতে পারেন কোমায়। তাই নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা খেয়াল রাখা দরকার। শর্করার মাত্রা ৭০ একক বা তার নিচে নেমে গেলেই সাবধান হতে হবে।

 

যারা নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধ খান, তাদের অনেক সময়েই রক্তে শর্করার পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত কমে যায়। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি খারাপ, যখন মাত্রাতিরিক্ত হারে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যায়। তাই যারা নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধ খান ও ইনসুলিন ব্যবহার করেন, তাদের সবসময় সতর্ক থাকা উচিত। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।


হাইপোগ্লাইসেমিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ

কিছু উপসর্গের মাধ্যমে রোগী হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ বুঝতে পারবেন। রক্তে গ্লুকোজ কমে যেতে থাকলে হাত বা শরীর কাঁপা, বুক ধড়ফড়, ঘামতে থাকা, অস্থির লাগা, মেজাজ খারাপ হওয়া, চোখ ঝাপসা হয়ে আসা, মাথাব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ শুরু হয়। যদি দ্রুত গ্লুকোজ না গ্রহণ করা হয়, তবে মস্তিষ্কে শর্করা কমে যেতে থাকে আর রোগী ভুল, অসংলগ্ন কথা বলতে থাকেন, অর্ধচেতন বা অচেতন হয়ে পড়েন। কখনো খিঁচুনি শুরু হয়ে দাঁতে দাঁত লেগে যায়। একজন ডায়াবেটিসের রোগী, বিশেষ করে যারা ইনসুলিন বা ইনসুলিন উৎপাদনকারী ওষুধ সেবন করছেন, তাদের এই লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানা খুবই জরুরি।
 

কেন হয় হাইপো

সাধারণত ডায়াবেটিসের রোগীদের নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। ঠিক সময়মতো খাবার না খাওয়া, পরিমাণে খুব কম খাওয়া, প্রয়োজনের অতিরিক্ত ইনসুলিন বা ওষুধ সেবন করা, হঠাৎ কোনো দিন অতিরিক্ত ব্যায়াম বা কায়িক শ্রম করে ফেলা ইত্যাদি কারণে এমনটা হতে পারে। যাদের কিডনি বা যকৃতের জটিলতা আছে, যাদের ডায়াবেটিস দীর্ঘদিনের, যারা অ্যালকোহল সেবন করেন তাদের হাইপো বেশি হয়। আবার অনেকে ঘুমের মধ্যেই রক্তে শর্করা কমে গিয়ে অচেতন হয়ে পড়তে পারেন। এটাও বিপজ্জনক।

 

কী করবেন

যদি রক্তে শর্করার মাত্রা ৭০ এককের নিচে নেমে যায়, তাহলে ১৫ গ্রাম মিষ্টি কিছু খান। মধু, চকলেটজাতীয় খাবার খেলে ভালো। এমন কিছু খেতে হবে যেগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেবে। এর পর ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর আবার মাপতে হবে রক্তে শর্করার মাত্রা। তাতে যদি সংখ্যাটি ৭০ এককের ওপর ওঠে, তাহলে ভালো। যদি তা না হয়, তাহলে আবার ১৫ গ্রাম মিষ্টি খেয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।

 

সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো, এক গ্লাস পানিতে আড়াই-তিন চামচ চিনি গুলে দ্রুত পান করা। একটা চকলেট, মিষ্টি, ক্যানডি, চিনি মেশানো জুস খেলেও চলবে। কিন্তু যদি এমন হয় যে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার জন্য রোগী অর্ধচেতন বা অচেতন হয়ে পড়েছেন, তবে জোর করে চিনির পানি গেলানো যাবে না। সে ক্ষেত্রে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে শিরায় গ্লুকোজ দিতে হবে।
 

যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়

খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামে শৃঙ্খলা আনতে হবে। সঠিক সময়ে স্বাস্থ্যকর ও প্রয়োজনীয় খাবার খেতে হবে। দিনে অন্তত ছয়বার খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। ঘুমের আগে হালকা খাবার খাওয়া। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনে ইনসুলিন বা ওষুধের মাত্রা কমানো বা বাড়ানো। বছরে একবার কিডনি বা যকৃতের টেস্ট করা।


তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার

এই বিভাগের আরও খবর