img

মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে তখন রাতের অন্ধকার ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠছে একজনের শোকের কালো আঁধার। শেন ওয়ার্ন, শুধু একজন ক্রিকেটারই ছিলেন না। ছিলেন একজন জাদুকর, একজন কিংবদন্তি। থাইল্যান্ডের কোহ সামুইয়ে চলতি মাসের শুরুতে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। বুধবার (৩০ মার্চ) ছিল তার শেষকৃত্য। তাকে চিরবিদায় জানাতে এককালের জাতীয় দলের সতীর্থ কিংবা প্রতিপক্ষ থেকে শুরু করে অনেক রথী-মহারথীর সম্মিলন ঘটেছে মেলবোর্নে।

ওয়ার্নকে নিয়ে এত বড় আয়োজনে শুধু এই জাদুকর ছাড়া আর সবাই আছে। ব্রায়ান লারা, নাসের হুসেন, অ্যালান বোর্ডার কিংবা শচীন টেন্ডুলকার কে নেই তাতে! সারিবদ্ধভাবে বসেছে সমর্থক ও ভক্তরা। সবার চোখের কোণেই জল। এত পানি এক করলে হয়ত এক সমুদ্র হয়ে যেত! প্রিয় তারকাকে হারানোর বেদনা কতটা বিরহের যেন টের পাচ্ছেন সবাই।  

স্মৃতিচারণার মঞ্চে লিটল মাস্টার শচীন টেন্ডুলকার বলেন, সে সবসময় আউট করার উপায় ‍খুঁজে বেড়াত। বল অব দ্য সেঞ্চুরিতে বোকা বনে যাওয়া ইয়ান বেলের বিশ্বাস, ‘ওয়ার্নের চেয়ে অসাধারণ ও পাওয়ারফুল উপস্থিতি আর কারো নেই।’

প্রিয় সতীর্থ কিংবা এককালের প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের স্মৃতিচারণার মাঝেই পর্দায় ভেসে উঠে ‘বল অব দ্য সেঞ্চুরি’। কিংবা তাকে নিয়ে মজার কোনো স্মৃতির ভিডিও। 

১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৯ মেলবোর্নে জন্ম নেন শেন ওয়ার্ন। ক্রিকেটে হাতেখড়ি সেখানেই। এরপরের গল্পটা কাব্যিক। জাদুকরী লেগ স্পিন দিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের অসংখ্য ব্যাটারকে ঘায়েল করার পাশাপাশি, মায়াজালে বেঁধেছেন বিশ্বের কোটি কোটি ক্রিকেটভক্তকে। ক্যারিয়ারের প্রথম ও একমাত্র হ্যাটট্রিক করেছেন মেলবোর্নে। ইংল্যান্ডের অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসকে আউট করে টেস্টে ৭০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন সেখানেই। বক্সিং ডে টেস্টে একাই ৭ উইকেট তুলে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধসিয়ে দিয়েছিলেন এই মাঠেই।

ঘরের ছেলের এমন সব কীর্তির পর তার প্রতি ভালোবাসা স্বাভাবিকভাবেই বড্ড বেশি ভিক্টোরিয়াবাসীর। কিংবদন্তি ওয়ার্নের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এমসিজির বিখ্যাত সাউদার্ন স্ট্যান্ড, দ্য এসকে ওয়ার্ন স্ট্যান্ড নামকরণ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এছাড়া সেই প্রিয় জায়গাতেই তাকে চিরবিদায় জানানো হয়। 

থাইল্যান্ডের কোহ সামুইয়ে ৪ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন ওয়ার্ন। তার বয়স হয়েছিল ৫২ বছর। তাৎক্ষণিক ফক্স স্পোর্টস জানায়, শেন ওয়ার্নকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। ডাকলেও কোনো সাড়া দিচ্ছিলেন না তিনি। পরে জানা যায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ওয়ার্ন। মৃত্যুর আগে তার রুমে কয়েকজন নারীর পদচারণাও ছিল।

লেগ স্পিনের জন্য বিশ্বব্যাপী ওয়ার্নের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। যে কারণে অনেকে ওয়ার্নি বলেও ডাকতেন তাকে। ওয়ার্ন খেলুড়ে জীবন পার করেছেন প্রায় ১৫ বছর। এই সময়ে তিনি দেশের হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ ৭০৮ উইকেট নিয়েছেন, যা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ডটি শ্রীলঙ্কার মুত্তিয়া মুরালিধরনের দখলে।
 

১৯৯২ সালে টেস্টে অভিষেক হয় ওয়ার্নের। ওয়ানডেতে প্রথম তিনি জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেন তার এক বছর পর। জাতীয় দলের হয়ে ওয়ার্ন সবশেষ ম্যাচটি খেলেছেন ২০০৭ সালে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। টেস্টে মোট ১৪৫ ম্যাচ খেলেন তিনি। ওয়ানডেতে ১৯৪ ম্যাচে তিনি নিয়েছেন ২৯৩ উইকেট।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর