img

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের উত্তেজনায় আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম চড়েছে দুই সপ্তাহ আগেই। সেই দামের আগুনে এবার ঘি ঢেলে দিয়েছে সাবেক সোভিয়েতভুক্ত কয়েকটি দেশে খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞায়। এ খবরে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় আবারও দাম বাড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

যুদ্ধের কারণে রাশিয়া থেকে গম আমদানিতে সংকট হবে এমন ধারণায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা আগেভাগেই বিকল্প দেশ থেকে গম আমদানির খোঁজ নিতে শুরু করেছেন।

যদিও বাংলাদেশ রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে কয়েক বছর ধরে গম, ছোলা আমদানি করেছে খুব কম। এরপর ইউক্রেন যেভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে তাতে আগামী বছরও সেই দেশ থেকে গমসহ অন্য খাদ্যপণ্য আমদানিতে সংকট তৈরি হবে। বিকল্প দেশ থেকে গম আমদানি করেই সরবরাহ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা।
 

kalerkantho

জানা গেছে, দেশের মোট গম আমদানির প্রায় ৮৯ শতাংশই আনেন বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা। ছোট-বড় অনেক শিল্প গ্রুপ এই গম আমদানি করে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই আসে সব গম। সেই হিসাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে সাড়ে ৫৩ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে দেশে। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে এসেছে ২৬ শতাংশ; ইউক্রেন থেকে এসেছে ১৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সমপরিমাণ গম আমদানির কথা। কিন্তু ১৩ মার্চ পর্যন্ত দেশে মোট গম আমদানি হয়েছে সাড়ে ৩০ লাখ টন। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে আমদানি হয়েছে ২৬ লাখ ১৬ হাজার টন। গত বছরের সমপরিমাণ গম আমদানির হিসাব করলে এই অর্থবছরের বাকি চার মাসে বেসরকারি খাতের আরো সাড়ে ১৬ লাখ টন গম আমদানির কথা। সেগুলো কিভাবে আসবে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের বড় গম আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বশর চৌধুরী বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে আমরা বিকল্প দেশ থেকে গম আমদানি করছি, এটা কিছুটা ভুল তথ্য। যুদ্ধ শুরুর অনেক আগে থেকেই আমরা আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কিছু দেশ থেকে গম আমদানি করে দেশে এনেছি। ’ তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া থেকে আমরা সর্বোচ্চ গম আমদানি করতাম আগে। কিন্তু গত দুই বছর নানা কারণে সেসব দেশ থেকে আমদানি কমেছে। এবার রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে দেশে আমদানি কমার কারণ হচ্ছে দাম বেশি থাকা, বাড়তি শুল্ক আরোপ। এই কারণে আমরা ভারত থেকেই বেশি আমদানি করেছি; ধারাবাহিকতা এখনো আছে। এর ফলে যুদ্ধের কারণে এবারও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আমাদের বেগ পেতে হবে না। ’

আবুল বশর চৌধুরী বলেন, ‘আগামী চার মাসে বেসরকারি খাতে সাড়ে ১৬ লাখ টন গম আমদানিতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না। যদিও দাম একটু বেশি হবে; এর পরও সংকট হবে বলে আমার মনে হচ্ছে না। ’

বিশ্বখ্যাত গম উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণন কারগিল, গ্রেইন করপোরেশনের মতো কম্পানির সঙ্গে ২২ বছর ধরে কাজ করছেন গ্রিন গ্রেইনের প্রধান নির্বাহী শাকিল আহমেদ তানভীর। তিনি বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতায় মনে হচ্ছে, দেশে গমের খুব একটা সংকট হবে না। ব্যবসায়ীরাই নিজেদের অভিজ্ঞতায় বিকল্প দেশ থেকে এই গম এনে সরবরাহ সামাল দেবেন। তবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হিসেবে দেশে উৎপাদিত ভুট্টা দিয়েই আটা-ময়দা চাহিদার বিশাল অংশ পূরণ সম্ভব। ’

তিনি বলেন, দেশে ৫৫ লাখ টনের ওপরে ভুট্টা উৎপাদন হয়; যেগুলো শুধু পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অথচ গম থেকে আটা-ময়দা উৎপাদনকারী একই মেশিনেই ভুট্টা থেকেই আটা, ময়দা, তেল উৎপাদন সম্ভব। দেশে গমের ব্যবহার যে হারে বেড়েছে, সেটি সামাল দিতে এখনই সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।

চট্টগ্রাম বন্দরের হিসাবে, দেশে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট সাড়ে ৫৩ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে। আমদানীকৃত গমের মধ্যে ৯ শতাংশ আনে সরকারের খাদ্য বিভাগ। ২০২১-২২ অর্থবছরে সাড়ে ছয় লাখ টন গম আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। এরই মধ্যে সাড়ে চার লাখ টন গম দেশে পৌঁছেছে। বাকি গম আসতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় বিকল্প দেশ থেকে গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারের খাদ্য বিভাগ। খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাখাওয়াত হোসেন, ‘চলতি অর্থবছরের বাকি সময়ে আমাদের আরো দুই লাখ টন গম আমদানির প্রস্তুতি আছে। ’

 

এই বিভাগের আরও খবর