img

দু’বেলা দাঁত মাজুন। তার পরও কিন্তু দরকার নিয়মিত ডেন্টাল চেক আপ। দাঁতের সমস্যা হওয়ার আগেই তা প্রতিরোধ করুন। যে ব্যাপারে সতর্ক করলেন গুরুনানক ইনস্টিটিউট অফ ডেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চ এর অধ্যাপক ডা. সৌমিত্র ঘোষ।

শুধু দাঁত মাজলেই দাঁতের স্বাস্থ্য ভাল থাকে না। দাঁত নিয়মিত দু’বার করে মাজতে হবে এটা প্রাথমিক শর্ত। এর পরও দাঁতে নানা রোগ বাসা বাঁধতে পারে। তাই সব করেও নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। শুধু দাঁত মাজলে বাহ্যিকভাবে দাঁত পরিষ্কার হলেও পুরোপুরি পরিষ্কার হয় না। সেটা নিয়ম করে চেম্বারে গিয়ে করাতে হয়। এটাই কিন্তু দাঁতের আসল যত্ন।

অবহেলায় বিপদ
সাধারণত তিন ধরনের সমস্যা, যেগুলি আগাম সতর্ক হলে মারাত্মক কিছু হওয়ার সম্ভাবনা প্রতিরোধ করা যায়।

মাড়িজনিত সমস্যা বা জিনজিভাইটিস: খাবার খেলে দাঁতের গায়ে একটা আস্তরণ পড়বেই। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘ডেন্টাল প্লাক’। এই ‘ডেন্টাল প্লাক’ জমতে জমতে ‘ডেন্টাল ক্যালকুলাসে’ পরিণত হয়। অর্থাৎ আস্তরণ আরও মোটা হয়ে দাঁতে ছোপ তৈরি করে। যখন এই সমস্যা মাড়ি পর্যন্ত যায়, তখন তাকে বলে ‘জিনজিভাইটিস’। আর যখন তা মাড়ি থেকে আরও গভীরে যায় তখন তাকে বলে ‘পেরিওডনটাইটিস’। আসলে দাঁতের গায়ে মোটা আস্তরণে অনেক ব্যাকটিরিয়া জমে থাকে। সেই ব্যাকটিরিয়া অ্যাসিড প্রোডাকশন করে। যার ফলে দাঁতের মাঝখানে যে হাড়গুলো রয়েছে, যেগুলো দাঁতগুলিকে চোয়ালের সঙ্গে ধরে রেখেছে, সেই হাড় ক্ষয়ে যেতে শুরু করে। কিন্তু এই সমস্যা শুরুতে কেউ-ই বুঝতে পারেন না। যখন অনেকটা ক্ষয়ে গিয়ে দাঁত নড়তে শুরু করে, রক্ত বের হয় তখন রোগী আমাদের কাছে আসে। কিন্তু নিয়মিত দাঁতের চেকআপ করালে শুরুতেই আমরা এই সমস্যা ধরতে পারি। সেই মতো প্রথমেই স্কেলিং করে বা দাঁত পরিষ্কার করে সমস্যা ঠিক করে দেওয়া সম্ভব।

 

ক্যাভিটি বা কেরিস: সাধারণত দাঁতে গর্ত হলে প্রাথমিক অবস্থায় অনেকেই তেমন গা করেন না। সেটা ফেলে রাখতে রাখতে যখন ব্যথা শুরু হয় তখন চিকিৎসকের কাছে আসেন। আগে এলে গর্ত দাঁতের গভীরে তেমন যায় না, ফলে সেটাকে ফিলিং করে ঠিক করে দাঁতকে রক্ষা করা সম্ভব। দাঁতের গর্ত যখন দাঁতের নার্ভ পর্যন্ত চলে যায় বা পেরিঅ্যাপাইক্যাল ইনফেকশন হয় তখন সেটাকে রুট ক্যানাল বা ক্রাউন করে ঠিক করতে হয়। আর বেশি দেরি হলে দাঁতের গর্ত থেকে ইনফেকশন ছড়িয়ে গেলে দাঁত তুলে ফেলতে হয়।

মুখগহ্বরের ক্যানসার: খুব ছোট একটা ক্ষত মুখের ভিতরে যদি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তাহলে বিপদের আশঙ্কা থাকে। এছাড়া তামাকজাত দ্রব্য যাঁরা খান তাঁদের প্রথমে গালের চামড়া মোটা হয়, শক্ত হয়। তারপর হাঁ ছোট হতে থাকে। খাবার খেলে ঝাল লাগা বা গাল জ্বালা করতে শুরু করে। এই সময় যদি কেউ চিকিৎসকের কাছে আসেন সেক্ষেত্রে সমস্যা ঠিক করা সম্ভব। আর দেরি করলে ক্যানসার প্রতিরোধ করা অসম্ভব। যেহেতু মানুষের মধ্যে এব্যাপারে সচেতনতা কম তাই মুখের ক্যানসারে আক্রান্তের সম্ভাবনাও এদেশ তথা এরাজ্যে বেশি। দাঁত ভেঙে গেলে সেটাও ফেলে রাখা যাবে না। ফেলে রাখতে রাখতে তা থেকে মুখে খোঁচা লাগতে লাগতে ঘা হয়ে ক্যানসার বাসা বাঁধতে পারে। তাই শুরুতেই সতর্ক হতে হবে। নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে দাঁত চেকআপ করালে এই সমস্যাগুলি প্রতিরোধ করার পাশাপাশি বয়সকালে দাঁত পড়ে যাওয়ার সমস্যা, দাঁতে ব্যথা এগুলি সবই প্রতিরোধ করা যায়।

কতদিন অন্তর অন্তর?
যাদের দাঁতে সমস্যা রয়েছে, তাঁদের ছ’মাসে একবার ও কোনও সমস্যা না থাকলে বছরে একবার অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া দরকার।

এই বিভাগের আরও খবর