img

এবারের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাধারণ নির্বাচনে এখন পর্যন্ত তিন পদে এক হাজার ৫৭৬ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩৫৪ জন, সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য ৮৫৮ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য ৩৬৪ জন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ষষ্ঠ ধাপ এবং এর পরে বিচ্ছিন্নভাবে হতে যাওয়া বাকি সব ইউনিয়নের নির্বাচনে এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

এদিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বা ভোট ছাড়াই যাঁরা জনপ্রতিনিধি হয়েছেন, তাঁদের দু-একজন বাদে সবাই ক্ষমতাসীন দলের।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, দেশে ইউপি নির্বাচনের ইতিহাসে বিনা ভোটে এত ব্যাপকসংখ্যক জনপ্রতিনিধি হওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম। এ বিষয়ে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে এবারের তৃতীয় ধাপেই নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হন ২১৭ জন। ২০১১ সালে কারো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে নেই। ১৯৯৭ সালের নির্বাচনে ৩৭ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালে চারটি ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘটনা ঘটে। ১৯৮৮ সালে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ১০০ জন।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে গতকাল সোমবার জানানো হয়, আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় পঞ্চম ধাপের ৭১৪টি ইউপির নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগেই চেয়ারম্যান পদে ৫২ জন, নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে ৩২ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদে ১০৯ জন একক প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। গত রবিবার এ ধাপের নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে মাঠ পর্যায় থেকে রিটার্নিং অফিসারদের পাঠানো তথ্য সমন্বয় করে এসংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত এবং গতকাল তা প্রকাশ করে ইসি।

ইউপি নির্বাচনের এই পরিস্থিতির ব্যাপারে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘দেশের নির্বাচনব্যবস্থা আগেই ভেঙে পড়েছে। এবারের ইউপি নির্বাচনে তৃণমূল পর্যায়ের নির্বাচনেও এই হতাশাজনক পরিস্থিতি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অনেকে বলছেন, এই নির্বাচনে ব্যাপকভাবে মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় এমপিরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে ইউপিগুলোতে নিজেদের লোকজনকে জিতিয়ে আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এই পরিস্থিতি এবং নানা ধরনের চাপ ও হুমকিতে অনেক জনপ্রিয় প্রার্থী ভোটের মাঠে নামতে স্বস্তি বোধ করছেন না। প্রতিকারবিহীন সহিংসতাও অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতাও রয়েছে। নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে এ নির্বাচনে আনতে পারেনি। নির্বাচনী মাঠে কী ঘটছে না ঘটছে সে বিষয়ে কমিশনের নজরদারিও তেমন নেই।’

চার ধাপে যা হয়েছে : নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় চতুর্থ ধাপে ৮৪২টি ইউপি নির্বাচনে ভোটের আগেই চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ৪৮ জন, নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে ১১২ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ১৩৫ জন। এ ধাপে চেয়ারম্যান পদে তিন হাজার ৮১৪ জন, নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে ৯ হাজার ৫১৩ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩০ হাজার ১০৬ জন প্রার্থী ভোটের লড়াই করবেন। এই ধাপে ১৬টি রাজনৈতিক দল প্রার্থী দিয়েছে। তবে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা মোট প্রার্থীর তিন-চতুর্থাংশ।

এর আগে গত ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপের এক হাজার ইউপির মধ্যে ১০০টিতে চেয়ারম্যান পদে বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া সাধারণ সদস্য পদে ৩৩৭ জন এবং নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদে ১৩২ জন একইভাবে নির্বাচিত হন। গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের ৮৩৩টি ইউপির মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৮১ জন, নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদে ৭৬ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ২০৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। গত ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর দুই দফায় প্রথম ধাপে ৩৬৫টি ইউপির ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ২০ জুন অনুষ্ঠিত ২০৪টি ইউপির মধ্যে ২৮ জন চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এ ছাড়া একইভাবে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদে পাঁচজন এবং সাধারণ সদস্য পদে ২৯ জন নির্বাচিত হন। গত ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের স্থগিত ১৬১ ইউপির মধ্যে ৪৫ জন চেয়ারম্যান, নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদে সাতজন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৪৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

এই বিভাগের আরও খবর