img

দিন ও রাত মহান আল্লাহর সৃষ্টির নিদর্শন। দুটিরই ভিন্ন ভিন্ন গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য রয়েছে। তবে এই দুটির মধ্যে রাতের তাৎপর্য অনেক বেশি। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই রাতে জাগরণ ইবাদতের জন্য গভীর মনোনিবেশ, হৃদয়ঙ্গম এবং স্পষ্ট উচ্চারণে অনুকূল।’ (সুরা : মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ৬)

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ও মহান আল্লাহর কালাম আল-কোরআনও অবতীর্ণ হয়েছিল রাতের বেলায়। তবে তা ছিল এক বিশেষ রাত, এই রাত এতটাই তাৎপর্যপূর্ণ যে এই রাতে মানুষের ভাগ্য লেখা হয়, তাই তাকে কদরের রাত বা ভাগ্য নির্ধারণের রাত বলেও অবহিত করা হয়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আমি এটি অবতীর্ণ করেছি বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়।’ (সুরা : দুখান, আয়াত : ৩-৪)

গ্রহণযোগ্য তাফসিরবিদদের মতে, এখানে কদরের রাত বোঝানো হয়েছে। কেননা পবিত্র কোরআনের অন্য জায়গায় ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আমরা কোরআন অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে; আর আপনাকে কিসে জানাবে কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। সে রাতে  ফেরেশতাগণ ও রুহ নাজিল হয় তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে। শান্তিময় সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত।’ (সুরা : কদর, আয়াত : ১-৫)

শুধু কদরের রাতই নয়, প্রতিটি রাতের ইবাদতই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম মাধ্যম। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বন্ধুকে রাতের ইবাদতের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর হাবিবকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘হে বস্ত্রাবৃত! রাতে নামাজে দাঁড়ান, কিছু অংশ ছাড়া, রাতের অর্ধেক কিংবা তার চেয়ে কিছুটা কম। অথবা তার চেয়ে বাড়াও আর ধীরে ধীরে সুস্পষ্টভাবে কোরআন পাঠ করো।’ (সুরা : মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ১-৪)

মহান আল্লাহ তাঁর বন্ধুকে উদ্দেশ করে রাতের বেলা নামাজ পড়তে বললেও একে ফরজ করে দেওয়া হয়নি, বরং নফল হিসেবে রাখা হয়েছে। তবে কেউ যদি রাতের বেলা বিছানা ছেড়ে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতে পারে, তার জন্য রয়েছে বিশেষ পুরস্কার। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ আদায় করো তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে। আশা করা যায়, তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭৯)

রাতের ইবাদত শুধু তাহাজ্জুদ ও কোরআন তিলাওয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তাহাজ্জুদ, তিলাওয়াতের পাশাপাশি কিছু সময় আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করাও অনেক সওয়াবের। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং রাতের একাংশেও তুমি তাঁর তাসবিহ পাঠ করো এবং নামাজের পশ্চাতেও।’ (সুরা : কাফ, আয়াত : ৪০)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর রাতের একাংশে তাঁর উদ্দেশে সিজদাবনত হও এবং দীর্ঘ রাত ধরে তাঁর তাসবিহ পাঠ করো।’ (সুরা : দাহর, আয়াত : ২৬)

সুবহানাল্লাহ, মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাকে তাঁর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দিতে চান বলেই তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার সব সূত্র এভাবে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বাতলে দিয়েছেন, যার মাধ্যমে বান্দা তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে, পাশাপাশি বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হতে পারে।

যারা রাতের প্রহরে মহান আল্লাহর জন্য সিজদাবনত হয়ে যায়, মহান আল্লাহ তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার রবের রহমত প্রত্যাশা করে (সে কি তার সমান, যে এরূপ করে না)। বলো, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান? বিবেকবান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ৯)

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর বিশেষ শ্রেণির বান্দাদের আলোচনা করতে গিয়েও রাতে ইবাদতকারীদের কথা উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, আনুগত্যশীল ও ব্যয়কারী এবং শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৭)

কারণ সে সময় মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ডাকতে থাকেন, তখন বান্দা মহান আল্লাহর কাছে যা চায়, তিনি তাদের তা-ই দান করেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমাদের রব আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতে যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে, তখন প্রথম আসমানে নেমে এসে বলতে থাকেন, কে আমাকে ডাকবে যে আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আমার কাছে চাইবে যে আমি তাকে দেব? কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে যে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব? (বুখারি, হাদিস : ১১৪৫)

এর দ্বারা শেষ রাতের ইবাদতের গুরুত্ব বোঝা যায়। মহান আল্লাহ সবাইকে রাতের ইবাদতে আত্মনিয়োগ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এই বিভাগের আরও খবর