img

ঢাকার বিভিন্ন রুটে এক ধরনের অঘোষিত গণপরিবহন ধর্মঘট চলছে। বাসের শ্রমিকেরা বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন যা শুরু হয়েছে গতকাল ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে। 

ঢাকার সড়কগুলোতে আজ খুব সীমিত সংখ্যায় বাস চলতে দেখা গেছে। অনেক মালিক সকালের দিকে বাস সড়কে নামালেও কোন ধরনের সমস্যা হবে কিনা সেই আশঙ্কায় পরে আবার তা বন্ধ করে দেয়। 

আর এতে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। মিরপুরের মাজার রোড থেকে প্রতিদিন বারিধারায় অফিস করতে যান এমন একজন জান্নাতুল ফেরদৌস। 

তিনি বলছেন, "সকালে দেখলাম রাস্তায় আমার রুটের কোন বাস নেই যেটা মিরপুর এক নম্বর হয়ে, কালশী পার হয়ে নর্দার দিকে যায়। আমি পরে অন্য রুটের বাসে করে মহাখালী ঘুরে অফিসে গিয়েছি।"

তিনি বলছেন, গতকাল সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার সময়ও বাসের অপেক্ষায় তিনি দেড় ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। 

"গতকাল ফেরার সময় একটা বাসও ছিল না রাস্তায়। আজকে ফেরার সময় যে কী হবে এখনই আমি সেটা নিয়ে চিন্তা করছি।"

অনেক যাত্রী বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়ায় অটোরিকশায় করে অফিসে গেছেন। 

রাস্তা

গুলশানে অফিস করেন এমন একজন বলছেন, "আমি একটা অফিসের সাপোর্টিং স্টাফ। কত টাকা বেতন পাই বলেন? আমার মতো লোকের সিএনজি ব্যাবহার করা খুবই কষ্টের ব্যাপার।"

শ্রমিকেরা অবশ্য বলছেন, তারা উপায় না দেখে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। তারা বলছেন, মালিকেরা ঠিকই বর্ধিত ভাড়া পাচ্ছে, কিন্তু তাদের বেতন বাড়েনি। 

তারা বলছেন, বর্ধিত ভাড়া আদায় করতে তাদের প্রতিদিন হেনস্তা হতে হচ্ছে।

গাবতলি ডেমরা রুটে একটি কোম্পানির বাসে কন্ডাকটর হিসেবে কাজ করেন মোহাম্মদ উজ্জ্বল। 

তিনি বলছেন, "যে ভাড়াটা বাড়ানো হইছে সেটা অনেক যাত্রী দিতে চায় না। আমরা তো ভাড়া বাড়াইনি। কিন্তু নতুন রেটের ভাড়া চাইলে যাত্রীরা আমাদের গালাগালি দেয়, মারধোর করে। একদম প্রতিদিন এই ঘটনা ঘটেছে।"

"আবার যতজন যাত্রী উঠছে সেই অনুযায়ী হিসেবে যে টাকা হওয়ার কথা রাতে মালিককে পুরো টাকাটা বুঝাইয়া দিতে পারি না। কারণ অনেক যাত্রী ভাড়া কম দিচ্ছে। আমরা অসহায় বোধ করছি।"

রাস্তা

বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। (ফাইল ফটো)

নভেম্বরের চার তারিখ সরকার ডিজেলের দাম ১৫ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। প্রতি লিটারে ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকায নির্ধারণ করা হয়। 

ডিজেলের মূল্য বাড়ার জেরে ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে পরিবহন ধর্মঘট ডাকেন মালিকেরা। 

তিন দিন ধর্মঘট চলার পর পর ৭ তারিখ ডিজেলের বর্ধিত দামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাস ও লঞ্চের জন্য নতুন ভাড়ার হার নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তারপর পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। 

ঢাকায় বাস মালিকদের একটি সমিতি এসোসিয়েশন বাস কোম্পানিজের প্রেসিডেন্ট রফিকুল হোসেন কাজল বিবিসিকে বলেছেন, "আমি যানবাহন ব্যবসা শুরুর করার পর সেই ৮০ সাল থেকে দেখে আসছি বাসের ভাড়া বাড়লেই এরকম একটা ঝামেলা তৈরি হয়। সরকার যেভাবে ভাড়া বাড়ায় সেটা ঢাকা শহরের জন্য ন্যায় সঙ্গত হয় না।"

গাড়ি

সরকার সম্প্রতি ডিজেলের দাড় বাড়িয়েছে।

এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলছেন, "ঢাকা শহরে ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যাম। আপনি যখন সিএনজি বা উবারে করে কোথাও যাচ্ছেন তখন কি ওয়েটিং চার্জ দিতে হয় না? সায়দাবাদ থেকে ধরুন নরসিংদী যেতে যে সময় লাগে, দেখা যায় গুলিস্তান থেকে গাবতলি যেতে ট্রাফিক জ্যামের কারণে তার চেয়ে বেশি সময় লাগে। এই ওয়েটিং-এর জন্যে তো বাসে কোন চার্জ ওঠে না। জ্যামের কারণে সবমিলিয়ে দিনে কয়টা ট্রিপ হয়?"

তিনি বলছেন, তার মালিকানাধীন বাসও সকাল থেকে শ্রমিকেরা বন্ধ রেখেছে। 

"আমি চাচ্ছি আমার বাস রাস্তায় থাকুক কিন্তু আমার কর্মচারীরা রোজ মার খাচ্ছে। তাই তারা রাস্তায় গাড়ি নামাতে চাচ্ছে না।"

এই বিভাগের আরও খবর