img

ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ‌আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি ভবনে অনুষ্ঠিত নাগরিক সম্মাননা অনুষ্ঠানে চার বাংলাদেশি নাগরিককে পদ্ম পুরস্কার প্রদান করেছেন।

ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ পেলেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার প্রয়াত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। আর চতুর্থ সর্বোচ্চ সম্মাননা পদ্মশ্রী পেয়েছেন প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ, লেখক ও বাংলাদেশে জাদুঘর আন্দোলনের পথিকৃৎ ড. এনামুল হক।

আজ মঙ্গলবার ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সোমবার (৮ নভেম্বর) দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে প্রয়াত মোয়াজ্জেম আলীর পক্ষে পদ্মভূষণ পুরস্কার গ্রহণ করেন তার স্ত্রী তূহফা জামান আলী। সশরীরে উপস্থিত থেকে পদ্মশ্রী গ্রহণ করেন ড. এনামুল হক। তাদের হাতে সম্মানজনক এ পুরস্কার তুলে দিয়েছেন ভারতের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ।

সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীকে পদ্মভূষণ ও ড. এনামুল হককে পদ্মশ্রী পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল গত বছর। ভারতের ৭১তম প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি তাদের সম্মানিত করার ঘোষণা দেয় দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এছাড়া চলতি বছর ‘পদ্মশ্রী’ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের আরও দুই গুণী ব্যক্তিত্ব সনজীদা খাতুন ও লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির, বীর প্রতীককে। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এতদিন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারেনি ভারত সরকার। সম্প্রতি দেশটিতে মহামারি পরিস্থিতির উন্নতির কারণে সোমবার একসঙ্গে দু’বছরের বিজয়ীদের হাতেই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, জনকল্যাণে সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীকে (মরণোত্তর) পদ্মভূষণ প্রদান করা হয়েছে। প্রয়াত রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিসের একজন বিশিষ্ট সদস্য ছিলেন। তিনি ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ভারতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং দুই দেশের মধ্যে বৃহত্তর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে জ্বালানি সহযোগিতা এবং স্থল যোগাযোগ শুরু করার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহিরকে (অব.) জনকল্যাণে পদ্মশ্রী প্রদান করা হয়েছে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির (অব.) বীর প্রতীক, স্বাধীনতা পদক পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ বিষয়ক একজন স্বাধীন গবেষক ও লেখক। তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুদ্ধে যোগ দিতে বাহিনী ত্যাগ করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের 'ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ' পুরস্কার প্রকল্পের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, যা মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী দেশের নাগরিকদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছিল।

প্রত্নতত্ত্বের জন্য অধ্যাপক এনামুল হককে পদ্মশ্রী প্রদান করা হয়। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক। তিনি একজন বিশিষ্ট প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং অত্যন্ত সম্মানিত সাংস্কৃতিক কর্মী যিনি প্রত্নতত্ত্বের ক্ষেত্রে এবং জাদুঘরের উন্নয়নে জীবন উৎসর্গ করেছেন।

শিল্পকলার জন্য শ্রীমতী সনজিদা খাতুনকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। তিনি একজন বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থার অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠাতা এবং ষাটের দশকের শুরুতে বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি নিবেদিত ছায়ানটেরও প্রতিষ্ঠাতা তিনি। তার তত্ত্বাবধানে ছায়ানট একটি শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং নৃত্যকলার প্রসারে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর