ধানের বিশেষ জাতে ছড়াচ্ছে টুংরো ভাইরাস, প্রতিকার কী
বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা বলছেন উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলা ও কুমিল্লা এলাকায় ধানে টুংরো ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে, যা নিয়ে সতর্ক হওয়া উচিত।
বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডঃ নাজমুল বারী বলেছেন, গত কয়েকদিন আগেও তিনি রংপুরের কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং তিনি ধান গাছে টুংরো ভাইরাস দেখেছেন।
মি. বারী এ ভাইরাসটি নিয়ে গত কয়েকমাস ধরেই কাজ করছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তাকে নিয়েই তিনি কয়েকদিন আগে রংপুরের মিঠাপুকুরে কিছু এলাকা সরেজমিন দেখে এসেছেন।
"আমরা কয়েকটি এলাকায় ধানক্ষেতে টুংরো ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি দেখেছি। এটি নিয়ে এখনি সতর্ক হওয়া উচিত। কারণ আমাদের কৃষকদের এ ভাইরাস দমন বা প্রতিকারের বিষয়ে জানাশোনা নেই বললেই চলে," - বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে ধানের ব্যাপক চাষ হয় এবং এ অঞ্চলে বিশেষ করে সীমান্ত এলাকাগুলোতে কৃষকদের স্বর্ণা ধানের জাত ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়।
এখন গবেষকরা বলছেন, যে যেসব এলাকায় এ ধানের জাত বেশি চাষ হচ্ছে সেখানেই টুংরো ভাইরাসের আক্রমণ বেশি হতে দেখা যাচ্ছে।
টুংরো ভাইরাস আসলে কী
সাধারণ আউশ ও আমন মৌসুমে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।
সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, বাংলাদেশে আসলে ২/৩ বছর পরপরই বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রোগটি দেখা দেয় এবং এতে ফলন প্রচুর কমে যায়।
সবুজ পাতা ফড়িং নামের একটি পোকা এই ভাইরাসের বাহক। একটি পোকা টুংরো আক্রান্ত গাছ থেকে রস শোষণ করলে তার পাকস্থলীতে ভাইরাসটি গিয়ে অসংখ্য ভাইরাসের জন্ম হয়।
পরে এই পোকা যেসব সুস্থ গাছের রস শোষণ করে - তাতেই ভাইরাসটি ছড়াতে থাকে।
তবে ডঃ নাজমুল বারী বলছেন, একবারে পুরো জমির ধান এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়না।
এক ধরনের ফড়িংএর মাধ্যমে টুংরো ভাইরাস ছড়ায়
"১/২ টা গাছে হওয়া শুরু হয়। আক্রান্ত হলে গাছের রং কমলা হলুদ হয়ে যায় আর গাছগুলো বসে যায়। বেশি আক্রান্ত হলে সেই ধান গাছ থেকে আর কোন শীষ বের হয় না," বলছিলেন তিনি।
কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, আক্রান্ত ধান গাছ পাকা পর্যন্ত বাঁচতে পারে তবে আক্রমণ তীব্র হলে গাছগুলো শুকিয়ে মরার মত হয়ে যায়।
আর হালকা ভাবে আক্রান্ত গাছ বেঁচে থাকে তবে তাতে ২-৩ সপ্তাহ পর ফুল আসে এবং ফলন অনেক কম হয়। এসব গাছে ধানের ছড়া আংশিক বের হয় এবং দানাগুলো কালো ও অপুষ্ট হয়।
টুংরো ভাইরাস আক্রান্ত ধান গাছ কাটার পর তার মুড়ি ধানেও রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
বিশেষ ভ্যারাইটি আর এলাকায় ভাইরাসটি বেশি দেখা যাচ্ছে
কোন এলাকার ধানে টুংরো আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি এবং কেন
কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ, গাজীপুর জেলায় টুংরোর প্রাদুর্ভাব হয়ে আসছে।
তবে নাজমুল বারী বলছেন উত্তরাঞ্চলের ধান বেশি হয় এমন এলাকাগুলোতে এ রোগ বেশি হতে দেখা যাচ্ছে।
আর এর বাইরে কুমিল্লায় অনেক জমির ধান এ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে।
ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের একজন বিজ্ঞানী বলছেন এ ভাইরাসটির ওষুধ নেই তাই প্রতিরোধই একমাত্র উপায়।
মি. বারীর মতে কোনো এলাকায় একটি বিশেষ জাত দীর্ঘদিন ধরে আবাদ হলে সেখানকার জমিতে এ ভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে থাকে।
"উত্তরাঞ্চলের ভারতীয় স্বর্ণা জাতে ধান অনেক বেশি আবাদ হয়। এ জাতের ধান গাছেই টুংরো বেশি হচ্ছে," বলছেন তিনি।
অর্থাৎ টুংরো ভাইরাসটি আসলে ধানের ভ্যারাইটি ও এলাকার উপর ভিত্তি করে বিস্তার লাভ করছে।
মি. বারী বলছেন ভাইরাসটির সংক্রমণ বাড়ার আরেকটি কারণ হলো কৃষকরা এখনো জানেন না যে কিভাবে এটি দমন করা যাবে।
টুংরো প্রতিরোধে কৃষকদের সচেতনতার কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা
কিভাবে দমন করা সম্ভব
নাজমুল বারীর মতে অল্প গাছে আক্রান্ত হলেই সেগুলো উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে বা মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। আর পোকাটিও মেরে ফেলতে হবে।
কৃষি তথ্য সার্ভিস অবশ্য বলছে রোগ সহনশীল জাতের ধান চাষের দিকে কৃষকদের উৎসাহিত হতে হবে।
এছাড়া হাত জাল দিয়ে বা অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করে সবুজ পাতাফড়িং দমন করতে হবে। আলোক ফাঁদ ব্যবহার করে সবুজ পাতাফড়িং মেরে ফেলা যায়।
টুংরো আক্রান্ত জমির আশে পাশে বীজতলা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি।