img

বিসিএস ক্যাডার হওয়ার প্রথম ধাপ প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। অনেক প্রার্থী বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েও বারবার ব্যর্থ হন। এর পেছনের কারণগুলো খুঁজে দরকারি পরামর্শ দিয়েছেন ৩৫তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা রবিউল আলম লুইপা

 

বিসিএস প্রিলিমিনারিতে সাধারণত মোট প্রার্থীর ৪-৮ শতাংশ পাস করেন। বেশি পড়াশোনার পরও যদি প্রিলির ফল আশানুরূপ না হয় কিংবা বারবার পরীক্ষা দিয়েও ফেল করতে হয়, তাহলে বুঝতে হবে কোথাও নিশ্চয়ই ত্রুটি আছে। হতে পারে প্রস্তুতির কৌশলে গড়বড় কিংবা  পরীক্ষার হলে কৌশলী হতে পারেননি!

 

১. আপনি হয়তো নেগেটিভ মার্কিংয়ের শিকার হচ্ছেন। আপনি ১৫০টি এমসিকিউর উত্তর দিয়ে ১০০টি শুদ্ধ করতে পারলেও ৫০টি ভুল উত্তরের জন্য আপনার নম্বর ৭৫-এ নেমে আসে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আপনাকে প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে বাসায় বসে নিয়মিত মডেল টেস্ট দিতে হবে। যেকোনো চাকরির প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় আপনাকে জানা প্রশ্নের বাইরেও কিছু প্রশ্নের উত্তর কমন সেন্স প্রয়োগ করে বা বুদ্ধি খাটিয়ে দিতে হবে (শুধু জানা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে পরীক্ষায় টেকা অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব)। বাসায় বসে নিয়মিত মডেল টেস্ট দিলে আপনি বুঝতে পারবেন এভাবে দেওয়া উত্তরগুলোর মধ্যে কতগুলো সঠিক বা ভুল হচ্ছে। যদি দেখেন, এই পদ্ধতি ভালো কাজ করছে, তাহলে আপনি এর ওপর কিছুটা আস্থা রাখতে পারেন! একেবারেই না বুঝে আন্দাজে উত্তর দেওয়া যাবে না। নেগেটিভ নম্বর এড়াতে নৈতিকতা অংশের প্রশ্নের উত্তর ও কিছু কনফিউজিং প্রশ্নের উত্তর করার সময় সতর্ক থাকতে হবে। সম্ভব হলে এ রকম প্রশ্নের উত্তর করা থেকে বিরত থাকুন।

 

২. ধরুন, আপনি খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়েছেন, পরীক্ষায়ও কমন পড়েছে প্রায় সব প্রশ্ন। কিন্তু সময়ের অভাবে আপনি জানা সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আসতে পারলেন না। অথবা সময়ের অভাবে শেষের দিকে আপনার মাথা এলোমেলো হয়ে গেলে ভুল উত্তর দিয়ে এলেন। এমন সমস্যার সমাধানেও আপনাকে প্রস্তুতির সময় বাসায় ঘড়ি ধরে মডেল টেস্ট দিয়ে সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।

 

বাসায় মডেল টেস্ট দেওয়ার সময় আপনি ৯০ বা ১০০ মিনিটে ২০০ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রাকটিস করবেন। এ ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ থাকবে পুরো সময়ের অর্ধেক ইংরেজি ও গণিত এবং বাকি অর্ধেক সময় অন্য বিষয়গুলোতে দিন। একটি প্রশ্নের উত্তর বা ম্যাথ প্রথম দেখায় না পারলে সেটি নিয়ে বসে থেকে সময় নষ্ট করবেন না। ঠাণ্ডা মাথায় কিছু প্রশ্ন এড়িয়ে যান। এ রকম প্রশ্নগুলো মার্ক করে রাখুন, সব উত্তর শেষে সময় পেলে সেই প্রশ্ন নিয়ে ভাববেন। এ ছাড়া আপনাকে সব প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে, ব্যাপারটা এমন নয়।

 

৩. পরীক্ষায় আপনার নার্ভাসনেস বা অসুস্থতাজনিত কোনো সমস্যা প্রতিবারই হলে সময় নিয়ে আগে থেকেই সেটি সমাধান করে রাখুন। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। পরীক্ষার আগের রাতে পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক দুশ্চিন্তা না করা, পরীক্ষার হলে মানসিকভাবে শক্ত বা কনফিডেন্ট থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

 

৪. প্রস্তুতির সময় অনেক পড়েছেন, কিন্তু পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখলেন কমন পড়েনি। এমনটা কেন হলো, সেটা খুঁজে বের করুন। অনেককেই সাধারণ জ্ঞানে অসাধারণ হওয়ার প্রবণতা দেখান! প্রিলির প্রস্তুতিতে কৌশলী হতে হবে এবং সিলেবাস অ্যানালিসিস করে পড়তে হবে। কী কী পড়বেন আর কী কী বাদ দেবেন, সেটি প্রথমে বাছাই করুন। তাহলে গুরুত্বপূর্ণ নয় এরূপ কোনো বিষয়ে সময় দিতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কিছু বাদ যাবে না। বাংলা-ইংরেজি সাহিত্য, বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি যতই পড়েন না কেন, সব প্রশ্ন কমন পাবেন না! গণিত, মানসিক দক্ষতা, সাধারণ বিজ্ঞান, তথ্য-প্রযুক্তি, বাংলা ও ইংরেজি ব্যাকরণ প্রভৃতি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করুন। এই বিষয়গুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারলে পরীক্ষায় প্রশ্ন কমন পাওয়ার সম্ভাবনা যেমন বাড়বে, তেমনি ভুল হওয়ার আশঙ্কাও কমে আসবে। মনে রাখবেন, যে প্রশ্নটি অনেক পড়ে কমন পাবেন আর যে প্রশ্নটি কম পড়ে কমন পাবেন, দুটিরই মান কিন্তু সমান (মান-১)।

 

৫. এক বিষয়ের একাধিক বই আপনার প্রস্তুতিকে শক্তিশালী করার চেয়ে উল্টো দুর্বল করে ফেলতে পারে। বিভিন্ন টপিক একাধিক বই থেকে পড়তে গেলে অনেক সময় সমন্বয়হীনতা বা কোনো কিছু বাদ পড়ার আশঙ্কা দেখা যায়। তাছাড়া সময়ও নষ্ট হয়। তাই ভালো প্রস্তুতিতে প্রতিটি সাবজেক্টের জন্য একটি বই থেকে পুরো কোর্স সম্পূর্ণ করুন।

 

৬. প্রস্তুতির সময় বা পরীক্ষার হলে অন্যের অনুকরণও আপনার ব্যর্থতার কারণ হতে পারে। পরিচিত কারো জানার পাণ্ডিত্য দেখে বিচলিত হবেন না, এতে আপনার ওপর বাড়তি মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। তা ছাড়া একেকজন প্রার্থীর অবস্থা একেক রকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই অনেক ক্ষেত্রে প্রার্থী তাঁর অবস্থার ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুতি কৌশলের প্রয়োগ বা পরিবর্তন করবেন।

 

৭. পরীক্ষার আগে ঠিকভাবে রিভিশন দিতে না পারাও আপনার ব্যর্থতার কারণ হতে পারে। সারা বছর সব কিছু পড়লেন, কিন্তু পরীক্ষার আগে ঠিকঠাক সময় ব্যবস্থাপনার অভাবে সব রিভিশন দিতে পারলেন না; তাহলে বলা যায়, প্রস্তুতিটা শেষ মুহূর্তে এসে অপূর্ণ রয়ে গেল! কারণ পড়াশোনার অনেক বিষয়বস্তু আছে, যেগুলো একবার রিভিশন দিলেই মনে থাকে; কিন্তু তা না হলে ঠিকঠাক উত্তর করা কঠিন।

 

৮. অনেকের মধ্যেই একটা প্রবণতা দেখা যায় ‘এবার এমনিতেই পরীক্ষা দেব, আগামী বছর সব পড়ে ফাটিয়ে দেব।’ এমনও হতে পারে, এ বছর যে কারণে পড়াশোনায় মন বসাতে পারছেন না বা সময় মিলছে না, আগামী বছরও সে রকমটিই হতে পারে! প্রথম বিসিএসে অংশ নিয়ে প্রিলি তো পাস করেছেনই, সেই সঙ্গে কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার হয়েছেন, এমন বিস্তর নজির আছে। তাই পরীক্ষা দিতে হলে সিরিয়াস প্রস্তুতি নিয়েই অংশ নিন। তা না হলে অন্য যে পেশায় আগ্রহ আছে, সেখানে চেষ্টা করুন।

kalerkantho

৯. অনেকে পড়া মনে রাখতে পারেন না। সব বিষয় সম্পর্কে আপনার ভাসা ভাসা পড়া বা এমসিকিউ স্টাইলে পড়া কোনো উপকারে আসবে না। প্রশ্ন ঘুরিয়ে দিলে কিংবা অপশনগুলোর মধ্যে সঠিক উত্তরটি থাকার পরও আপনি আর উত্তর করতে পারছেন না। এর মানে আপনি সেই টপিকটি বুঝে পড়েননি। কোনো বিষয়বস্তু নিয়ে পড়ার সময় টপিক বা টাইম পিরিয়ড ধরে বর্ণনামূলকভাবে পড়তে হবে। এতে আপনার স্মৃতিতে তথ্যটি স্থায়ীভাবে জমা হয়ে থাকবে।

 

১০. ইন্টারনেট, ফেসবুক, অতিরিক্ত আড্ডা, পড়াশোনায় আলসেমি—এগুলো বিসিএসের প্রস্তুতির জন্য ক্ষতিকর। দৈনন্দিন জীবনকে একটি রুটিনের মধ্যে নিয়ে আসুন। প্রত্যেক কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে গুছিয়ে প্রস্তুতি নিন।

এই বিভাগের আরও খবর