img

যাঁরা এই প্রথম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছেন, তাঁদের অনেকেরই অনেক রকম প্রশ্ন থাকে। নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে সেসবের জবাব ও পরামর্শ দিয়েছেন ৩৮তম বিসিএস (অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস) ক্যাডার প্রণয় কুমার পাল

►   এত বড় সিলেবাস! কিভাবে পড়া শুরু করব?

সিলেবাস নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সিলেবাসটা বড় হলেও এখানে অনেক বিষয় একটি অপরটির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

যেমন—বাংলা ও ইরেজি রচনা, অনুবাদ, বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ইত্যাদি পরস্পর সম্পর্কিত। এখানে এক বিষয়ের প্রস্তুতি অন্য বিষয়ের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে পরিপূরক হবে।

প্রথমেই সিলেবাস ও বিগত বিসিএসের প্রশ্নগুলো পড়ুন। সিলেবাসের কোন বিষয় থেকে কিভাবে প্রশ্ন এসেছে তা বিশ্লেষণ করুন। পুরো সিলেবাস ও প্রশ্নের ধরন যথাসম্ভব মাথায় নিয়ে আসার চেষ্টা করুন।

 

►   আমার হাতের লেখা খুব ছোট/বড়/কদর্য/ধীরগতি। আমি লিখিত পরীক্ষায় কী সমস্যায় পড়ব?

হাতের লেখা ছোট বা বড় যা-ই হোক, দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এই মুহূর্তে লেখার ধরন পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, প্রয়োজনও নেই। তবে হাতের লেখা যেমনই হোক, স্পষ্ট ও বোধগম্য হতে হবে। বানান ও ব্যাকরণগত ভুল যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।

মোট কথা, আপনার উপস্থাপনা বস্তুনিষ্ঠ হতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় অল্প সময়ে প্রচুর লিখতে হয়, হাতের লেখায় ধীরগতি থাকলে যথাসময়ে সব প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তর দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে। তাই নিয়মিত দ্রুতগতিতে লেখার অভ্যাস করুন।

 

►   প্রশ্নের মান (নম্বর) অনুযায়ী কত পৃষ্ঠা লেখা আদর্শ হতে পারে?

নম্বর অনুসারে পৃষ্ঠা নয়, সময়ের হিসাব করতে হবে। যেমন—চার ঘণ্টার ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় আপনি প্রতি ১ নম্বরের জন্য সময় পাবেন এক মিনিট ১২ সেকেন্ড। এভাবে নম্বর অনুসারে সময় ভাগ করে নিন।

 

►   কোচিং করব, নাকি নিজেই প্রস্তুতি নেব?

kalerkanthoকোচিং করা বা না করা প্রার্থীর ওপর নির্ভর করে। যদি আপনি মনে করেন কোচিং ছাড়াই প্রস্তুতি নিতে পারবেন, তাহলে দরকার নেই। আর যদি মনে করেন একটা ধারাবাহিক নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তুতি দরকার, তাহলে কোচিং করতে পারেন। কোচিংয়ের ইতিবাচক দিক হলো, মডেল টেস্টের মাধ্যমে প্রস্তুতি যাচাই মূল্যায়ন ও সময় ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়ানো যায়। তবে কোচিং করুন আর না-ই করুন, নিয়মিত লেখা অনুশীলনের বিকল্প নেই।

 

►   নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কিভাবে প্রস্তুতি গোছাব?

আপনি পরীক্ষা পর্যন্ত যথেষ্ট সময় পাবেন। এই সময়টুকু কাজে লাগাতে পারলে পরীক্ষায় ভালো করা কঠিন হবে না। প্রথমেই সিলেবাসটাকে কয়েক অংশে ভাগ করে ফেলুন। কোন অংশে আপনার দখল আছে, কোন অংশে দুর্বলতা আছে, কোন অংশে বেশি সময় দিতে হবে—এভাবে অংশগুলো ভাগ করুন। এরপর দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করুন। প্রথম অবস্থায় পড়া যত এগিয়ে রাখবেন, পরে চাপ ততো কম পড়বে। কমন বিষয়গুলোর জন্য একটা নোট খাতা প্রস্তুত রাখুন। এখানে টপিক অনুসারে শর্ট নোট তৈরি করুন। এগুলো পরীক্ষার আগমুহূর্তে যথেষ্ট কাজে দেবে।

 

►   নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে দুর্বলতা কিভাবে কাটিয়ে উঠব?

ধরুন আপনি গণিত, ইংরেজি, বিজ্ঞান বা অন্য কোনো বিষয়ে কিছুটা দুর্বল। সে ক্ষেত্রে কোনো টিউটরের কাছে পড়তে পারেন অথবা ইউটিউব ও গুগল ব্যবহার করতে পারেন। আপনার কনসেপ্ট এখানে পরিষ্কার করার সুযোগ পাবেন।

 

►   পরীক্ষা কি পিএসসি নির্ধারিত তারিখেই হবে?

যেহেতু সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ, তাই পিএসসি প্রদত্ত তারিখ ধরেই প্রস্তুতি নিতে হবে। যদি বিশেষ কারণে পরীক্ষা নিতে দেরি হয়, তাহলে আপনি আরো বেশি প্রস্তুতির সুযোগ পাবেন। তাই উল্লিখিত তারিখ (সম্ভাব্য) সামনে রেখেই প্রস্তুতি পরিকল্পনা ঠিক করুন।

 

►   ৪১তম লিখিত, ৪৩তম প্রিলিমিনারি ও ব্যাংক প্রস্তুতি কিভাবে সমন্বয় করব?

আপনি এরই মধ্যে ৪১তম প্রিলিমিনারি পাস করেছেন, তাই আপনি অন্যান্য প্রস্তুতিতে পিছিয়ে আছেন, এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই। ৪৩তম প্রিলিমিনারির কিছুদিন আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করেও আপনি পাস করার যোগ্যতা রাখেন! আর যাঁদের বয়স কিছুটা শেষের দিকে বা জরুরি ভিত্তিতে চাকরি দরকার, তাঁরা লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পাশাপাশি ব্যাংক ও অন্যান্য চাকরির প্রস্তুতিও নিতে পারেন। তবে বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসকে ফোকাস করে পড়লে সব পরীক্ষায়ই আপনি এর সুফল পাবেন।

 

►   এত ডাটা, চার্ট, উদ্ধৃতি এগুলো মনে রাখার উপায় কী?

ডাটা, চার্ট, উদ্ধৃতি—এগুলো লিখিত পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো যেসব বিষয়বস্তু পড়ছেন, সেগুলোর কনসেপ্ট পরিষ্কার রাখা। কমন কিছু বিষয়বস্তু, যেমন—দরিদ্রতার হার, জিডিপি, মাথাপিছু আয় ইত্যাদি অবশ্যই নখদর্পণে রাখতে হবে; যাতে প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার করতে পারেন। প্রাসঙ্গিক যে তথ্যগুলো আপনি মনে রাখতে চান, সেগুলোর জন্য আলাদাভাবে নোট রাখতে পারেন। আর বারবার পড়তে পড়তে তথ্যগুলো এমনিতেই মস্তিষ্কে স্থায়ী হয়ে যাবে।

 

এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিলে আশা করছি লিখিত পরীক্ষায় নিজের সর্বোচ্চটা দিতে পারবেন।

এই বিভাগের আরও খবর