img

দেশে ১২টি বেসরকারি প্লান্টের কাজ আবারও চালু করার জন্য ঘনীভূত জ্বালানি আমদানির সম্ভাবনা রয়েছে। ঘনীভূত জ্বালানি হলো হালকা তরল হাইড্রোকার্বনের মিশ্রণ, যা গ্যাস থেকে পাওয়া যায়। প্লান্টগুলো ঘনীভূত জ্বালানি থেকে ডিজেল, পেট্রল এবং অকটেন আলাদা করে।

স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে ঘনীভূত জ্বালানি সরবরাহের সংকট এবং পরিবেশবান্ধব পেট্রোলিয়াম পণ্য নিশ্চিত করার বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশের কারণে কারখানাগুলো বন্ধ রয়েছে।

আমদানি করা ঘনীভূত জ্বালানিতে উচ্চস্তরের ডিজেল থাকবে এবং পরিশোধকরা শুধু এক বছরেরও বেশি সময় উৎপাদন স্থগিত থাকার পর ডিজেল উৎপাদনের অনুমতি পাবেন। তবে তারা অন্য জ্বালানি উৎপাদন করতে চাইলে বিএসটিআইয়ের নির্ধারিত মান বজায় রেখে করতে হবে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিসুর রহমান বলেন, আমরা এই খাতে বিনিয়োগের কথা বিবেচনা করে আমদানির মাধ্যমে প্লান্টগুলোতে কাঁচামাল সরবরাহের কথা ভাবছি।

বেসরকারি শোধনাগারগুলোতে সরবরাহের জন্য ঘনীভূত জ্বালানি আমদানি তদারকির জন্য একটি পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পেট্রোকেমিক্যাল অ্যান্ড রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ১৫ বছরে মোট ১৫টি বেসরকারি পেট্রোলিয়াম শোধনাগার প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে, যেখানে ৫ হাজারেরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

ক্ষতিকারক পেট্রোলিয়াম পণ্যের বিরুদ্ধে গত বছরের জানুয়ারিতে হাইকোর্ট রায় দেন। ছয় মাস পরে স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্রে ঘনীভূত জ্বালানি উৎপাদন হ্রাস পায় এবং কর্তৃপক্ষকে নিম্নমানের জ্বালানি তেল উৎপাদনের জন্য ১২টি শোধনাগারে সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

বিএসটিআই কর্তৃক নির্ধারিত মান অনুযায়ী, শোধনাগারগুলোতে ৮৯ রিসার্চ অকটেন নম্বর (RON) দিয়ে পেট্রল উৎপাদন করার কথা। রিসার্চ অকটেন নম্বর হলো, পেট্রলের কর্মক্ষমতা পরিমাপক। সংখ্যা যত বেশি হবে, পেট্রলের মান তত বেশি ভালো হবে।

ঘনীভূত জ্বালানি সরবরাহ স্থগিতের আগে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন প্লান্টগুলো ৮০ অকটেন নম্বরের পেট্রল উৎপাদন করতে পারে। 

বাংলাদেশের তুলনায় প্রতিবেশী দেশগুলোতে পেট্রলের মান অনেক ভালো। ভারতে রিসার্চ অকটেন নম্বর ৯১, পাকিস্তানে ৯২, শ্রীলঙ্কায় ৯২ এবং মিয়ানমারে ৯২ নির্ধারণ করা হয়েছে।

দেশে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার ব্যারেল ঘনীভূত জ্বালানি উৎপাদন করা যায়, যা তিনটি বেসরকারি এবং দুটি সরকারি পরিশোধনাগারে পাঠানো হয়। এই জ্বালানি এই পাঁচটি পরিশোধনাগারের জন্য যথেষ্ট নয়।

যার ফলে পেট্রোকেমিক্যাল অ্যান্ড রিফাইনারসের পক্ষ থেকে উচ্চমানের ঘনীভূত জ্বালানি আমদানির আবেদন জানানো হয়েছে যেন প্লান্টগুলো আবারও তাদের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করতে পারে।

এরপর জ্বালানি ও খনিজ বিভাগ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে এই ঘনীভূত জ্বালানির আমদানি ও এর ধারণক্ষমতা সম্পর্কে মতামত চেয়েছিল। 

আমদানীকৃত পেট্রোলিয়ামের ধারণক্ষমতা
বিপিসি অ্যাক্ট-২০১৬ অনুযায়ী, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন একমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অনুমোদিত কম্পানি, যা দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে পরিশোধিত এবং অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারে। বিপিসি-এর বর্তমানে সব মিলিয়ে ১৩ লাখ টন পেট্রোলিয়াম সংরক্ষণের ক্ষমতা রয়েছে।

তবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের তিনটি তেল বিপণন সংস্থা তাদের কাছে ঘনীভূত জ্বালানি রাখতে অস্বীকার করেছিল। তারা শুধু পরিশোধিত তেল সংরক্ষণের জন্য তাদের অবকাঠামো নির্মাণ করে থাকে।

শুধু ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড এবং স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কম্পানি লিমিটেড ২০ হাজার টন স্টোরেজ ধারণক্ষমতার সঙ্গে ডিজেলসমৃদ্ধ জ্বালানি সংরক্ষণ করতে সম্মত হয়েছে। আমদানীকৃত পণ্য সংরক্ষণের সুবিধা প্রস্তুত করতে আরো তিন থেকে চার মাস সময় লাগবে।

বিপিসির পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড প্ল্যানিং) সৈয়দ মেহেদী হাসান বলেন, করপোরেশন মন্ত্রণালয়কে আমদানির সুযোগ এবং এর ধারণক্ষমতা সম্পর্কে জানিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, যদি মন্ত্রণালয় আমাদের ঘনীভূত জ্বালানি আমদানি করতে বলে, তাহলে আমরা নিশ্চয়ই কাজটি করব। কারণ আমরা অন্যান্য জ্বালানি তেল আমদানি করছি।

এই বিভাগের আরও খবর