img

৪১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার জন্য তিন মাসের প্রস্তুতির ছক সাজিয়ে পড়াশোনা শুরু করে দিন এখনই। প্রার্থীদের প্রস্তুতি এগিয়ে নিতে আমাদের বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি আয়োজনের এবারের পর্বে থাকছে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা এবং সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। পরামর্শ দিয়েছেন ৩৮তম বিসিএস (কর) ক্যাডার নাজিরুল ইসলাম নাদিম

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার যে দু-তিনটি বিষয়ে খুব অল্প প্রস্তুতিতে সবচেয়ে বেশি নম্বর পাওয়া যায়, তার মধ্যে গাণিতিক যুক্তি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অন্যতম।

 

♦ গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা

চাকরির প্রস্তুতি নিতে গিয়ে গণিতে সবাই গুরুত্বসহকারে প্রস্তুতি নেয় বলে বিসিএস লিখিত বিষয় হিসেবে গণিতের আলাদা করে প্রস্তুতির দরকার হয় না। ছোটবেলা থেকে যে গণিত পড়েছেন, এটুকু দিয়েই খুব সহজে এই ধাপ পার হওয়া যায়। গণিতে ভালো করার জন্য নিয়মিত অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। ভয় না পেয়ে প্রতিদিন নিয়ম করে গণিত অনুশীলন করলে পূর্ণ নম্বর পাওয়া অসম্ভব নয়।

 

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার জন্য গণিতের সিলেবাসটা দুই ভাগে বিভক্ত—

১. গাণিতিক যুক্তি

২. মানসিক দক্ষতা

 

গাণিতিক যুক্তি : এই অংশের জন্য বরাদ্দ থাকে ৫০ নম্বর, সময় দুই ঘণ্টা। ১২টি প্রশ্ন থাকে। এর মধ্যে ১০টির উত্তর করতে হয়। সিলেবাস সাজানো হয়েছে নবম-দশম শ্রেণির গণিত সিলেবাসের মতোই। পাটিগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতির সমন্বয়ে প্রশ্ন হয়ে থাকে।

প্রস্তুতির জন্য অষ্টম শ্রেণির পাটিগণিত-বীজগণিত, নবম-দশম শ্রেণির বীজগণিত ও জ্যামিতি অংশ এবং উচ্চ মাধ্যমিকের গণিত বই থেকে বিন্যাস সমাবেশ, সম্ভাব্যতা, স্থানাঙ্ক জ্যামিতির অংশটুকু পড়া লাগবে। এ ছাড়া বিগত পাঁচ-ছয়টি বিসিএসের লিখিত প্রশ্নগুলো বুঝে সমাধান করলে সিলেবাস ও প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যাবে।

 

মানসিক দক্ষতা : এই অংশে বরাদ্দ থাকে ৫০ নম্বর। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মতো বৃত্ত ভরাট করে ৫০টি প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য পাওয়া যায় ১ নম্বর ও ভুল উত্তরের জন্য কাটা যাবে ০.৫ নম্বর।

মোট ছয়টি টপিকের ওপর প্রশ্ন করা হয়। টপিকগুলো হচ্ছে—ভাষাগত যৌক্তিক বিচার, সমস্যার সমাধান, স্থানাঙ্ক সম্পর্ক, সংখ্যাগত ক্ষমতা, বানান ও ভাষা এবং যান্ত্রিক দক্ষতা।

এ বিষয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো বই না থাকলেও গত বিসিএসের প্রশ্নগুলো থেকে ভালো ধারণা পাওয়া যায়। বাংলা ও ইংরেজি ব্যাকরণে দক্ষতা, গাণিতিক সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা, সাধারণ জ্ঞান ও অনুধাবন ক্ষমতা আপনাকে এ বিষয়ে এগিয়ে রাখবে। এ ছাড়া কোনো সহায়ক বই থেকে নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে আপনি এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন।

 

এগিয়ে যাওয়ার উপায়

♦ গণিতে ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য নিয়মিত অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদিন রুটিন করে নির্দিষ্ট সময় ধরে অনুশীলন করতে পারেন। যে টপিকগুলো আপনার কাছে কঠিন মনে হয় সেগুলোতে অধিক সময় ব্যয় করেন। অবশ্যই প্রতিটি অঙ্ক খাতায় বিস্তারিতভাবে লিখে করবেন।

♦ অনেকেই জ্যামিতি অংশের উত্তর করতে চায় না। তবে জ্যামিতি অংশে নিজের প্রস্তুতি নিয়ে রাখবেন, যাতে অন্য কোনো অংশে প্রশ্ন কমন না পড়লেও জ্যামিতি দিয়ে সেটা পূরণ করা যায়। জ্যামিতি অংশের জন্য বিগত বছরের প্রশ্নগুলো দেখে কয়েকটি উপপাদ্য পড়ে নোট করে রাখবেন।

♦ বীজগাণিতিক বা জ্যামিতিক সূত্র যেগুলো প্রয়োজনীয় সেগুলো খাতায় নোট করে মাঝে মাঝে চোখ বোলাতে হবে।

♦ গণিত নিয়ে একেবারে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ৩৫তম বিসিএসে একজন গণিতে মাত্র ৫ নম্বর পেয়েও কোটা ছাড়া অ্যাডমিন ক্যাডারে মনোনীত হয়েছেন। আপনি গণিতে আপনার সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন। অনেকেই গণিতে ৪০-৫০ নম্বর পান, আপনিও সেটাই পাওয়ার চেষ্টা করুন।

♦ কোনো অঙ্ক যদি দুইবার চেষ্টা করার পরও না মেলে, সে ক্ষেত্রে এটা ছেড়ে পরের প্রশ্নের উত্তর করাই ভালো।

 

♦ সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে মোট নম্বর ১০০ এবং সিলেবাস তিনটি অংশে বিভক্ত।

১. পার্ট-এ : সাধারণ বিজ্ঞান

২. পার্ট-বি : কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি

৩. পার্ট-সি : ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক টেকনোলজি

 

সিলেবাস ও প্রস্তুতি

পার্ট-এ

সাধারণ বিজ্ঞান : এই অংশে আলো, শব্দ, চুম্বক, এসিড ক্ষার ও লবণ, পানি, বায়ুমণ্ডল, খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান, বায়োটেকনোলজিসহ পরিবেশ ও সম্পদের খুব বেসিক অংশগুলো পড়তে হয়।

এই অংশের সর্বোত্তম প্রস্তুতির জন্য নবম-দশম শ্রেণির পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও সাধারণ বিজ্ঞান বই থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। এ ছাড়া রিভিশন ও প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার জন্য গাইড বইয়েরও সহায়তা নিতে পারেন।

 

পার্ট-বি

কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি

এই অংশের জন্য ২৫ নম্বর বরাদ্দ। সিলেবাসে থাকে কম্পিউটার সংগঠন ও বিভিন্ন অংশের পরিচিতি, বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন প্রগ্রাম, ডাটা কমিউনিকেশন, ডাটাবেইস, ডাটা ট্রান্সফার সিস্টেমসহ অন্যান্য প্রযুক্তিগত অংশ।

এই সিলেবাসের বেশির ভাগ আমরা প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্যই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। ফলে লিখিত পরীক্ষার জন্য খুব কম পরিশ্রমেই পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করা যায়। মাধ্যমিক শ্রেণির আইসিটি বই ও উচ্চ মাধ্যমিকের আইসিটি বইয়ের প্রথম তিনটি অধ্যায় পড়লেই এর সিলেবাস অনেকাংশেই দখলে চলে আসবে।

 

পার্ট-সি

ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক টেকনোলজি

এই অংশে ১৫ নম্বর। বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক কম্পোনেন্ট, ভোল্টেজ কারেন্টের বেসিক সূত্র, বিভিন্ন ধরনের সার্কিট, ডিজিটাল ও অ্যানালগ যন্ত্রপাতির গঠনসহ ইলেকট্রনিকসের বেসিক বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা নিতে হয়।

এ অংশের প্রস্তুতির জন্য মাধ্যমিক শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ইলেকট্রনিকস অংশের পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিকের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের বিদ্যুৎ, তড়িৎ চৌম্বক ও ইলেকট্রনিকস অধ্যায়ের সাধারণ আলোচনা থেকে ধারণা নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া বাজারে প্রচলিত কোনো সহায়ক বই থেকেও প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যায়।

 

এগিয়ে যাওয়ার উপায়

♦ বিজ্ঞান নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভয়ে থাকে আর্টস ও কমার্স নিয়ে যাঁরা পড়াশোনা করেছেন। প্রস্তুতির শুরুতেই আপনি ভুলে যান যে আপনি কখনো বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন না। কারণ এ বিষয়ের সিলেবাসের বেশির ভাগই মাধ্যমিক শ্রেণির বিজ্ঞানের বেসিক সিলেবাস, যা কঠিন কিছু নয়।

♦ প্রস্তুতির শুরুতেই গত তিন-চারটি বিসিএসের লিখিত প্রশ্ন ভালো করে সমাধান করে একটা ধারণা নিয়ে নিন কোন বিষয়বস্তুগুলোর গুরুত্ব বেশি। লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নগুলো দেখেই সিদ্ধান্ত নিন কোন অংশগুলো কিভাবে পড়বেন, কোথায় আপনার দুর্বলতা, কোন অংশে খুব কম সময়ে সেরা প্রস্তুতি নেওয়া যায়।

♦ এ অংশের সর্বোত্তম প্রস্তুতির জন্য মাধ্যমিকের পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান বইয়ের সাহায্য নেওয়া যায়। সিলেবাস দেখে দেখে যে টপিকগুলো জরুরি সেগুলো রিডিং পড়তে হবে। মুখস্থ করার চেয়ে বুঝে পড়বেন, যাতে পরীক্ষায় সৃজনশীল বা যেভাবেই আসুক, উত্তর দিতে পারেন।

♦ পড়ার সময় যেসব তথ্য-উপাত্ত বা ছবিগুলো গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, তা নোট খাতায় লিখে রাখতে হবে, যাতে পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে এই নোট খাতা দেখেই রিভিশন দেওয়া যায়।

♦ পরীক্ষার খাতায় প্রশ্ন বুঝে খুব স্বল্প কথায় মূল অংশে উত্তর করাটা জরুরি। এখানে অপ্রয়োজনীয় লাইন লিখে খাতা ভরে গেলে সময়ের অপচয় হয়, গোটা উত্তর করা যায় না। ২ নম্বরের কোনো প্রশ্নের উত্তর যদি দুই লাইনে দেওয়া যায়, সেটাই করতে হবে।

♦ প্রয়োজনীয় অংশে চিত্রসহ উত্তরের চেষ্টা করতে হবে। এতে উত্তরের মান বাড়বে। চিত্র আঁকার ক্ষেত্রে পেনসিল ব্যবহার করতে হবে। চিত্রের নিচে চিত্রের নাম-পরিচয় বা কিসের চিত্র আঁকা হয়েছে, সেটা কলম দিয়ে লিখে দিতে হবে।

♦ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত, পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন ল ও সূত্র, রসায়নের বিক্রিয়া, বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক টার্ম লেখার ক্ষেত্রে নীল কালির ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে খুব সহজেই বিশেষ অংশে পরীক্ষকের দৃষ্টি কেড়ে নেওয়া যায়।

♦ কিছু ছোট প্রশ্ন যদি আপনার সরাসরি কমন নাও পড়ে, আপনি বেসিক নলেজ ও বুদ্ধি বিবেচনা দিয়ে যতটুকু বোঝেন, উত্তর করবেন। উত্তর দেখে যেন পরীক্ষক বুঝতে পারেন এ বিষয়ে আপনার ধারণাটুকুই আপনার ভাষায় প্রকাশ করেছেন। এখানে ৫ নম্বরের উত্তর না করতে পারলে অনেকটাই পিছিয়ে যাওয়ার চান্স থাকে।

♦ এ বিষয়ে অনেক ছোট প্রশ্ন থাকে বলে বারবার নজর রাখতে হবে প্রশ্নের ক্রমধারা বজায় রেখে লেখা হচ্ছে কি না এবং কোনো ছোট প্রশ্ন বাদ গেল কি না। সময়ের দিকে নজর রাখতে হবে যেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সব প্রশ্নের উত্তর লিখে আসা যায়। এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

এই বিভাগের আরও খবর