img

দীর্ঘ ৫৬ বছরের প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে নীলফামারীর মানুষের। চিলাহাটি স্থলবন্দরে ফের ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। গত ১ আগস্ট রেলপথে ভারত থেকে পাথর আমদানির মধ্য দিয়ে আবার ব্যস্ত হয়ে ওঠে স্থলবন্দরটি। সেদিন ভারতের হলদিবাড়ী সীমান্ত স্টেশন থেকে পাথরভর্তি ৪০টি মালবাহী বগি (দুই হাজার ২৮৫.২০ মেট্রিক টন) পৌঁছে নীলফামারীর চিলাহাটি স্টেশনে। এর চার দিন পর গত ৫ আগস্ট ওই পথে চিলাহাটি পৌঁছে আরো ১৯টি পাথরভর্তি বগি। তৃতীয় দফায় গত ১০ আগস্টও পাথরবোঝাই ৩০টি ওয়াগন আসে।

১ আগস্ট ভারতের হলদিবাড়ী স্টেশন থেকে রেলবহরটি বিকেল ৫টার দিকে বাংলাদেশের সীমান্ত পেরিয়ে চিলাহাটি স্টেশনে পৌঁছে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে। স্থলবন্দর হয়ে ওঠে সরগরম। আমদানি-রপ্তানির শুভ সূচনার মুহূর্তটিতে করতালি এবং হাত নাড়িয়ে স্বাগত জানায় উত্সুক জনতা। ভারতীয় ওই রেলবহরে ছিলেন রেলওয়ের সিনিয়র গার্ড মুকেশ কুমার সিং, লোকো মাস্টার সঞ্জীত পাল চৌধুরী এবং অরজিৎ রায়। বাংলাদেশের পক্ষে চিলাহাটি স্টেশনে তাঁদের ফুল দিয়ে বরণ করেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী সুলতান মৃধা, বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনসহ আরো অনেকে।

একইভাবে ৫ আগস্ট দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে পাথরভর্তি ১৯টি বগি পৌঁছে চিলাহাটি স্টেশনে। এদিন পণ্যবাহী ট্রেনের পরিচালক নারদ পোদ্দারের নেতৃত্বে রেলবহরটি নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে চিলাহাটি প্রবেশ করেন লোকো মাস্টার রবিশা পাটেল ও সহকারী লোকো মাস্টার গৌরব কুমার। দুই দফায় ৫৯টি বগিতে এ পথে পাথর এসেছে ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের ডামডিম রেলস্টেশন থেকে। এ পথে পাথর আমদানির মধ্য দিয়ে কার্যত সচল হলো স্থলবন্দরটি।

২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর এ পথে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন হয়। সেদিন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই রেল যোগাযোগের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুই প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণার পর ওই দিনই চিলাহাটি স্টেশন থেকে ৩২টি পণ্যবাহী ওয়াগনের বহর নিয়ে ভারতের উদ্দেশে ছেড়ে যায় বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেনটি। ওই সময় রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন চিলাহাটি স্টেশনে বাঁশি বাজিয়ে ও সবুজ পতাকার সংকেত দিয়ে ট্রেনটির যাত্রা শুরু করেন। তারপর বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতের সীমান্ত অতিক্রম করে রেলবহরটি।

২০১১ সালের জুন মাসে তত্কালীন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান চিলাহাটি সরকারি কলেজ মাঠে এক জনসভায়  চিলাহাটি স্থলবন্দর সচলকরণ ঘোষণা দেন। এ লক্ষ্যে তিনি ওই দিন সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এরপর ২০১৩ সালের ২৮ জুলাই মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে চিলাহাটিকে স্থলবন্দর ঘোষণা করে ওই বছরের ১ আগস্ট সরকারি গেজেট প্রকাশ করা হয়।

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ভোগাবুড়ি ইউনিয়নে চিলাহাটির অবস্থান। চিলাহাটি ব্রিটিশ আমলের একটি প্রসিদ্ধ ব্যবসাকেন্দ্র। ব্যবসা-বাণিজ্য ঘিরে আনাগোনা ছিল দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীদের। ব্যবসার প্রসারতায় তাঁরা অনেকেই স্থায়ীভাবে বসবাসও শুরু করেন সেখানে। তাই চিলাহাটিকে বাসযোগ্য করে তুলতে নানা উদ্যোগের নজিরও রয়েছে তাঁদের। এর মধ্যে চিলাহাটি মার্চেন্ট উচ্চ বিদ্যালয় ও চিলাহাটি মার্চেন্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি উদাহরণ। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটি ব্যবসায়ীদের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪২ সালে। ব্যবসায়ীদের অবদান থাকায় প্রতিষ্ঠানের নামকরণে ব্যবহার করা হয় মার্চেন্ট কথাটি। শুধু তাই নয়, ওই সময় ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে নানা সেবামূলক কাজও সম্পাদিত হয়েছিল বলে জানা যায় বিভিন্ন তথ্য সূত্র থেকে।

এই বিভাগের আরও খবর