img

বাঁধ কেটে দেওয়ায় ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে। ধীরে ধীরে জেগে উঠছে ফসলের মাঠও। একই সঙ্গে জেগে উঠেছে কৃষকের বুকের দগদগে ক্ষত। স্বপ্ন বুনেছিলেন মাঠে। অতিবর্ষণের জলাবদ্ধতায় তা পঁচে গলে শেষ হয়ে গেছে। আমনের বীজতলার মাঠের দিক তাকিয়ে এখন শুধুই হাহাকার করছেন বাগেরহাটের শরণখোলার ১০ সহস্রাধিক চাষি। বীজতলার মাঠের দৃশ্য দেখে চোখের জল ফেলছেন তারা।

চাষিরা যে নতুন করে বীজতলা তৈরি করবেন, সে উপায়ও নেই। বর্তমানে শরণখোলার চারজন ডিলারের কারো কাছেই বীজ ধান মজুদ নেই। কারণ এলাকার চাহিদা অনুযায়ী ডিলাররা বিএডিসি থেকে বীজ ধান উত্তোলন করেন। উত্তোলনকৃত সেসব বীজ ধান বিক্রি হয়ে গেছে ৩০ জুনের মধ্যেই। এ অবস্থায় বীজতলা নষ্ট এবং বীজ ধান না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।

এদিকে, কৃষি অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক (ডিডি) জি এম এ গফুর বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) শরণখোলা পরিদর্শন করেছেন। তিনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতায় নষ্ট হওয়া আমনের বীজতলার ক্ষেত ঘুরে দেখেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি জরুরি ভিত্তিতে অন্য এলাকা থেকে বীজধান সংগ্রহ করে সংকট সমাধানের আশ্বাস দেন চাষিদের।

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, শরণখোলায় মোট ১১ হাজার ২৯০ জন চাষির মাধ্যমে এবার ৯ হাজার ৪৩৯ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিআর- ১১, বিআর-৫২ ও বিআর- ২২ জাতের ধান চাষের জন্য ৭৩০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়। সম্প্রতি অতিবর্ষণের জলাবদ্ধতায় ৫০ ভাগ বীজতলা পঁচে নষ্ট হওয়ার কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

তবে মাঠের বাস্তব চিত্র এবং কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ৮০ ভাগ বীজতলাই পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। বিআর-৫২ জাতের কিছু কিছু বীজতলা ভালো আছে। বিআর-৫২ জাত অন্য জাতের চেয়ে শক্তিশালী। এই জাতটির প্রতিকূল আহবাওয়ার সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকার সক্ষমতা একটু বেশি।

উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের পশ্চিম রাজৈর গ্রামের চাষি মো. সাইয়েদ আলী জানান, তার ১০ কাঠা জমির বীজতলা সব নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে বীজতলা তৈরির জন্য ডিলারের কাছে বীজধান কিনতে গিয়েছিলেন। কিন্ত কোনো ডিলারের কাছে বীজধান না পেয়ে ফিরে আসেন। 

সাউথখালী ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া গ্রামের চাষি মো. জহির খলিফা চার বিঘা জমিতে আমনের বীজতলা করেছিলেন। তা সবই শেষ হয়ে গেছে। পঁচা বীজতলা হাতে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

শরণখোলা উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারের ডিলার মেসার্স শহিদুল এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলার বিএডিসি অনুমোদিত চার জন ডিলার এলাকার চাহিদা অনুযায়ী বিআর-৫২, বিআর-২২ ও বিআর-১১ এই তিন জাতের ৪৫ টন বীজ ধান উত্তোলন করেন। এসব বীজ ধান ৩০ জুনের মধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। তাদের কারো কাছেই বীজ ধান নেই। এখন সরকারিভাবে এই সংকট সমাধানের ব্যবস্থা নিতে হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওয়াসিম উদ্দিন বলেন, কৃষি অধিদপ্ত খুলানার উপপরিচালক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে সংকট সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে, এই মুহূর্তে স্থানীয়ভাবে বীজ ধান সংগ্রহ করা সম্ভব না। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে দ্রুত বীজ ধান পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা করে সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর


সর্বশেষ