img

চাকরির প্রতিযোগিতামূলক বাজারে একটি ছোট ভুলই বাছাই পর্ব থেকে বাদ পড়ার জন্য যথেষ্ট। ধারাবাহিকভাবে নির্দিষ্ট গতির বদলে সাময়িকভাবে দ্রুতগতিতে প্রস্তুতি নিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন অনেকে। বিপত্তিটা এখানেই। চাকরিপ্রার্থীদের বাস্তব অবস্থা, ভুলত্রুটি বিশ্লেষণ ও অভিজ্ঞতার আলোকে পরামর্শ দিয়েছেন ৩৮তম বিসিএস (অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস) ক্যাডার প্রণয় কুমার পাল

বাংলাদেশে চাকরির বাজার প্রধানত দুই ধরনের—সরকারি ও বেসরকারি। এই আলোচনায় মূলত সরকারি চাকরির প্রস্তুতির বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেসরকারি চাকরিপ্রার্থীদেরও এটি কাজে আসবে। প্রার্থীরা সাধারণত যে ভুলগুলো সচরাচর করেন, সেগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে—সিদ্ধান্তগত ভুল ও প্রস্তুতিগত ভুল।

সিদ্ধান্তগত ভুল  

♦ লক্ষ্য নির্ধারণে ভুল করা : স্নাতক শেষ করার পর লক্ষ্য নির্ধারণে ভুল করে ফেলেন অনেক প্রার্থী। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রথম অবস্থায় বেসরকারি সেক্টরে কিছুদিন চাকরি করে আবার সরকারি চাকরির প্রস্তুতি শুরু করেন। মানে—তাঁরা একটা দোটানায় থাকেন। ফলে চাকরির প্রস্তুতিতে ঠিকমতো মন বসানো কঠিন হয়ে যায়, ওদিকে বয়স বেড়ে যাওয়ায় সরকারি চাকরির আবেদনের সুযোগও বেশিদিন থাকে না। আর যদি এভাবে কারো চাকরি হয়ও, এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে চাকরি জীবনে। বিশেষ করে চাকরির শেষের দিকে যোগ্যতা থাকার পরও পদোন্নতি হয় না সার্ভিস ইয়ার (বয়সের কারণে) শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে।

 

♦ সামর্থ্য ও যোগ্যতার বিচার না করা : লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখতে হবে—প্রার্থীর লক্ষ্য তাঁর সামর্থ্য ও যোগ্যতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না। অনেক প্রার্থীকে দেখা যায়—বাছাই পরীক্ষায় টেকার মতো যোগ্যতা না থাকার পরও বড় পদের চাকরির পেছনে ছুটতে গিয়ে তাঁর জন্য উপযুক্ত পদের চাকরিটিতে আর চেষ্টা করা হয় না। ফলে দুটিই তাঁর হাতছাড়া হয়ে যায়। আবার এমনও হয়, নিজের যোগ্যতার চেয়ে ছোট কোনো পদে যোগ দিয়ে পরে মানিয়ে নিতে পারেন না বা নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী পেশাগত মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হন।

 

প্রস্তুতিগত ভুল 

দীর্ঘদিন চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ার পরও বাছাই পরীক্ষাগুলোতে ভালো করতে পারছেন না, এমন চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যাও কম না। এর কারণ—

♦ বেসিক শক্ত না করেই প্রস্তুতি

বেশির ভাগ প্রার্থীই বেসিক মজবুত না করেই বাজার থেকে গত্বাঁধা কিছু বই নিয়ে পড়া শুরু করে দেন। দেখা যায়, পড়ার টেবিলে অনেক সময় দেওয়ার পরও সে অনুযায়ী আউটপুট নেই, বিশেষ করে গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলোতে বেসিক শক্ত করার বিকল্প নেই। সাধারণ জ্ঞানের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। না বুঝে শুধু মুখস্থ করলে সেগুলো মাথায় বেশি সময় থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পটভূমি জেনে যদি পুরো বিষয়টা মাথায় নেওয়া যায়, তাহলে সেটা অনেক দিন মনে থাকবে। এ জন্য বেসিক মজবুতের দিকে জোর দিন।

 

♦ পড়াশোনায় ধারাবাহিকতা : অনেক প্রার্থী পরীক্ষার সিজন অনুসারে পড়াশোনা করেন। কোনো পরীক্ষার সময় হলে আগ মুহূর্তে কয়েক দিন খুব পড়াশোনা করেন, এরপর আবার ঝিমিয়ে পড়েন। আসলে চাকরির প্রস্তুতি নিয়ে সাজাতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ছক। দ্রুতগতির চেয়ে নির্দিষ্ট গতিতে ধারাবাহিকতাটা ঠিক রেখে এগোনোটাই জরুরি।

 

♦ সামগ্রিক বনাম পৃথক প্রস্তুতি : বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্নের ধরনে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও সামগ্রিকভাবে বিষয়গুলো একই থাকে। প্রার্থীরা এগুলো না বুঝে প্রতিটি নিয়োগ পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা বই কেনেন। কিছু কিছু প্রকাশনী সেই সুযোগে শুধু প্রচ্ছদ পরিবর্তন আর একটু এদিক-সেদিক করে প্রায় একই ধরনের বই বাজারে আনে। তাই বিচ্ছিন্ন প্রস্তুতি না নিয়ে সামগ্রিক প্রস্তুতির দিকে নজর দিন।

 

♦ বারবার প্রস্তুতির ট্র্যাক পরিবর্তন : প্রার্থীরা বারবার প্রস্তুতির ধারা পরিবর্তন করলে পরে কোনো দিকেই পুরোপুরি প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয় না। যেমন—একজন কিছুদিন বিসিএসের প্রস্তুতি নিয়ে কিছুদিন পর আবার ব্যাংক প্রস্তুতির দিকে ঝুঁকে গেলেন, ফলে তাঁর কোনো দিকেই কিছু হয় না! তাই প্রস্তুতির ট্র্যাক পরিবর্তন না করে সিলেবাস বুঝে সম্মিলিত প্রস্তুতি নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। তবে যাঁরা ব্যাংক অথবা বিসিএসের কোনো একটিতে প্রস্তুতি নিতে চান, তাঁরা পছন্দ অনুযায়ী নির্দিষ্ট বিষয়ে গভীর প্রস্তুতি নিতে পারেন। মোটকথা, ট্র্যাক বারবার পরিবর্তন না করাই ভালো।

 

♦ নিজেকে যাচাই : প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য নিজেকে তৈরি করার গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ হচ্ছে নিজেকে যাচাই বা মূল্যায়ন করা। এর জন্য দরকার মডেল টেস্টভিত্তিক প্রস্তুতি। এর মাধ্যমে প্রার্থী নিজেকে যাচাই করতে পারবেন। ব্যাংক, বিসিএসসহ যেকোনো চাকরির জন্য এ ধরনের প্রস্তুতি খুবই কার্যকর। প্রিলিমিনারির জন্য বিভিন্ন মডেল টেস্ট বই ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং লিখিত পরীক্ষার জন্য কোনো কোচিং অথবা ব্যক্তিগত পরিসরে মডেল টেস্ট দেওয়া যেতে পারে, যা প্রার্থীকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে।

 

♦ দক্ষতা বৃদ্ধি : পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাগত দক্ষতা প্রার্থীকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে। যেমন—ভাষাগত দক্ষতা, কম্পিউটারে দক্ষতা, অন্যান্য কারিগরি দক্ষতা ইত্যাদি। ভাইভা বোর্ডে প্রাসঙ্গিকভাবে আপনার দক্ষতার বিষয়টি তুলে ধরতে পারলে মূল্যায়নে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকাটা সহজ হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়জীবন থেকেই দক্ষতার ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

 

♦ অযথা সময়ের অপচয় : যে সময়ে প্রার্থীদের সবচেয়ে বেশি সিরিয়াস হওয়া উচিত, সে সময়টা অনেকেই অপ্রয়োজনীয় আড্ডা, বিনোদন, সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্নভাবে নষ্ট করেন ফেলেন। বিনোদনের দরকার আছে, কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে পারাটাই একজন ব্যর্থ ও সফল ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয়। তাই চাকরির প্রস্তুতির সময়টাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন।

এ ছাড়া চাকরিপ্রার্থী হিসেবে অভ্যাসগত কিছু পরিবর্তন আনুন। নিয়মিত অনুশীলনের পাশাপাশি পত্রিকা পড়ুন এবং বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে আপডেট থাকুন।

এই বিভাগের আরও খবর