img

গতকাল বুধবার রাতে হোয়াইট হাউসের প্রথম রাতের বাসিন্দা হিসেবে ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন টুইটবার্তায় হোয়াইট হাউসের একটি ভিডিওচিত্র প্রচার করেছেন। সঙ্গে দেওয়া বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘আমাদের সবার চেয়ে বড় এমন কিছুর প্রতি আপনাদের বিশ্বাস স্থাপনের জন্য ধন্যবাদ। আমরা একত্রে একটি সুন্দর বিশ্ব নির্মাণ করব।’

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে গতকাল দুপুরে শপথ গ্রহণ করার পর বাইডেন দিনভর নানা আনুষ্ঠানিকতায় কাটান। পূর্বসূরি তিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বিল ক্লিনটন এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আর্লিংটন জাতীয় সমাধিস্থানে সস্ত্রীক যান বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের ঐক্যের ক্ষেত্রে অন্যতম এই স্থাপনায় দাঁড়িয়ে সামরিক বাহিনীর দেওয়া স্যালুট গ্রহণ করা ছাড়াও ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।

হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ডাকা প্রথম কনফারেন্সে বাইডেন নিজ প্রশাসনের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই। আমি অনেক ভুল করব। যখন ভুল করব, তখন তা আমি স্বীকার করব। ভুল সংশোধনে সাহায্য করার জন্য আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই।’

বাইডেন তাঁর নিয়োগ করা প্রশাসনের কর্মীদের ভার্চ্যুয়ালি শপথ গ্রহণ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছ থেকে সততা ও শালীনতা চাই। আমাদের মনে রাখতে হবে, জনগণ আমাদের জন্য কাজ করে না। আমরা জনগণের জন্য কাজ করি। জনগণের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে।’

ওয়াশিংটন ডিসির স্থানীয় সময় বিকেল চারটার কিছু আগে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবারের মতো হোয়াইট হাউসে ঢোকেন জো বাইডেন। হোয়াইট হাউসের কাছেই ট্রেজারি বিভাগের অফিস ভবনের সামনে বাইডেন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মোটরশোভাযাত্রা–সহকারে নিয়ে আসা হয়। বাইডেন স্ত্রী জিলের হাত ধরে পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউ দিয়ে হোয়াইট হাউসে ঢোকার জন্য হাঁটতে থাকেন।

কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যেও দূর থেকে লোকজনকে হাত নেড়ে বাইডেন দম্পতিকে অভিনন্দন জানাতে দেখা যায়। বাইডেন ও জিলের পেছনে তখন হাঁটছিলেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। হেঁটে যাওয়ার সময় বাইডেন এক মুহূর্তের জন্য থামেন। এনবিসি নিউজের সাংবাদিক আল রকারের সঙ্গে তাঁকে মুহূর্তের জন্য শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা যায়। একপর্যায়ে বাইডেন চলে যান এনবিসি নিউজের সাংবাদিক মাইক মেমলির সামনে। মাইক জানতে চান, কেমন লাগছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে আমি বাড়িতেই ঢুকছি।’

বাইডেন ও জিল হোয়াইট হাউসের উত্তর প্রবেশপথ দিয়ে হাঁটতে থাকেন। হোয়াইট হাউসের তাঁদের ঢোকার মুহূর্ত ক্যামেরায় ধরে রাখা হয়। এ সময় বাইডেন বলেন, ঐক্যই হলো দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা।

হোয়াইট হাউসে ঢুকে পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বার্তা পাওয়ার কথা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের। ২০ জানুয়ারি বাইডেনের শপথ থেকে শুরু করে কোনো আনুষ্ঠানিকতায় ট্রাম্পের নাম উচ্চারিত হয়নি। ট্রাম্প যেমন বাইডেনের নাম মুখে নেননি, বাইডেনও তাঁর নাম মুখে আনেননি।

ট্রাম্পের মুখপাত্রের বরাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বলেছে, প্রথা অনুযায়ী ট্রাম্প ওভাল অফিসের ড্রয়ারে উত্তরসূরি প্রেসিডেন্টের জন্য নোট লিখে গেছেন। এই নোটে কী আছে, তা জানা যায়নি। বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট সম্বোধন করে আদৌ কী লেখা হয়েছে, এ নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহল বিরাজ করছে।

ট্রাম্প কখনো স্বীকার করেননি নির্বাচনে বাইডেন জিতেছেন। ৬ জানুয়ারি তাঁর আহ্বানে ক্যাপিটল হিলে সমর্থকদের তাণ্ডবের পর ট্রাম্প বলেছিলেন, ২০ জানুয়ারি ক্ষমতার পালাবদল ঘটবে। তবে এর আগে ট্রাম্প শান্তিপূর্ণভাবে হোয়াইট হাউস ছেড়ে যাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল।

বাইডেন বলেন, প্রেসিডেন্ট একটি উদার চিঠি লিখে গেছেন। চিঠিটি ব্যক্তিগত ও ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার আগে তিনি এর বিষয়বস্তু প্রকাশ করতে পারেন না বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি। তিনি চিঠিকে উদার বলে সাংবাদিকদের দ্বিতীয় দফা নিশ্চিত করেন।

হোয়াইট হাউসে ঢুকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে হাতে আজ নষ্ট করার সময় নেই। জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রথম দিন থেকেই কাজ কাজ শুরু করার ঘোষণা দেন তিনি।

বাইডেন বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে দ্রুত সই করার কথা জানান সাংবাদিকদের। ক্যামেরার সামনেই তিনি সব ফেডারেল স্থাপনায় লোকজনকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে নির্বাহী আদেশ জারি করেন। গত ১০ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় চার লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন। এ পরিস্থিতিতে চরম স্বাস্থ্য সংকটে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রবাসী। এমন কঠিন বাস্তবতায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন জো বাইডেন।

বাইডেন আগেই বলেছেন, করোনা মহামারির সংক্রমণ থেকে দেশবাসীকে বাঁচানোর উদ্যোগই হবে তাঁর প্রথম কাজ।

জলবায়ুবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তিতে পুনরায় যোগদানের নির্দেশেও স্বাক্ষর করেছেন বাইডেন। শপথ গ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন।

বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবিলায় ২০১৫ সালে প্যারিসে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের করা চুক্তি থেকে সরে এসেছিলেন সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম দিনের নির্বাহী আদেশেই প্রেসিডেন্ট বাইডেন জলবায়ু সমস্যা নিয়ে গত চার বছরের নীতিকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে প্যারিস চুক্তিতে ফিরে যাওয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে।

প্রথম কর্মদিবসেই ১৭টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন বাইডেন। অভিবাসনের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ভেঙে পড়া অভিবাসনব্যবস্থা সংস্কারে কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাইডেন। পৃথক নির্বাহী আদেশে মুসলিমপ্রধান দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে লোকজনের ঢোকার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরই মুসলিমপ্রধান কয়েকটি দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। এ নিয়ে সর্বত্র আন্দোলন শুরু হয়। এমন আদেশের মধ্য দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর অভিবাসনবিরোধী কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়েছিলেন।

নির্বাহী আদেশে অপ্রাপ্ত বয়সে মা–বাবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে আসা কয়েক লাখ অভিবাসীকে বিতাড়িত করা বন্ধ রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চালু করা ডাকা কর্মসূচি নামের এ অভিবাসন কর্মসূচি বন্ধ করার নির্বাহী আদেশ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এখন বাইডেনের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কর্মসূচিটি আবার চালু হয়ে ওঠায় যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক লাখ অভিবাসীর স্থায়ীভাবে বসবাস করার পথ উন্মুক্ত হলো।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার আগেই বাইডেন অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের সহযোগিতায় ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। বুধবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউসে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তাঁর প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেন, এমন প্রণোদনা আইন পাসে দ্বিদলীয় সমঝোতাকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। তবে রিপাবলিকানদের কাছ থেকে বিরোধিতা এলে সব ধরনের বিকল্প ভাবনায় আছে।

কংগ্রেস ও সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও এ ধরনের আইন প্রস্তাবের জন্য সিনেটে ৬০টি ভোটের প্রয়োজন। রিপাবলিকান পার্টির সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া সিনেটে এমন আইন প্রস্তাব করার জন্য এত ভোট নেই। যদিও সিনেটে প্রবীণ ডেমোক্র্যাট ও বাজেট কমিটির প্রধান বার্নি স্যান্ডার্স বলেছেন, সিনেটে রিপাবলিকান পার্টির কথা তাঁরা শুনবেন। তবে জনগণকে সাহায্যের জন্য মাসের পর মাস এ নিয়ে ব্যয় করা হবে না। সিনেটের রিকন্সিলিয়েশন প্রক্রিয়ায় ৫১ ভোটেও এমন আইন প্রস্তাব পাস করার সুযোগ আছে বলে বার্নি স্যান্ডার্স স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর