img

কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সব বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে প্রশ্ন পাঠানো হয়। ৫৭৪ জন উত্তর পাঠান। তাঁদের মধ্যে অনেকে পরে জরিপে অংশ নিতে সম্মত হননি, কারও আগে থেকেই মানসিক সমস্যাসহ নানা সমস্যা ছিল।

চূড়ান্ত জরিপ হয় ৪৭৯ জনের ওপর। টেলিফোনে তাঁদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। চিকিৎসক ৩৬৬ জন, নার্সসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মী ১১৩ জন। তাঁদের ৩৩ শতাংশ ছিলেন নারী। ২ জানুয়ারি জরিপ প্রতিবেদন বিএসএমএমইউর একাডেমিক পর্যায়ে উপস্থাপন করা হয়।

উদ্বেগ, বিষণ্নতা

জরিপে উঠে এসেছে, প্রায় ২১ শতাংশ চিকিৎসক এবং ৬ শতাংশ সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মী উদ্বেগে ভুগেছেন। এ ছাড়া ১৮ শতাংশ চিকিৎসক এবং প্রায় ৭ শতাংশ সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মী বিষণ্নতায় ভুগেছেন।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরিচালিত ২০১৯ সালের মানসিক স্বাস্থ্য জরিপের সঙ্গে তুলনায় দেখা গেছে, মানসিক স্বাস্থ্য জরিপে অংশ নেওয়া সাধারণ মানুষের তুলনায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা বেশি উদ্বেগ-বিষণ্নতায় ভুগেছেন। মানসিক স্বাস্থ্য জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে উদ্বেগের হার ছিল ৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বিষণ্নতা ৬ দশমিক ৭ শতাংশ।

জরিপ পরিচালনার নেতৃত্বে ছিলেন বিএসএমএমইউর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুল আহসান। তিনি বলেন, বৈশ্বিক পর্যালোচনা বলছে, কোভিড-১৯-এর সম্মুখযোদ্ধা স্বাস্থ্যকর্মীদের ৩০-৪০ শতাংশের মধ্যে উদ্বেগ-হতাশার মতো মানসিক সমস্যা দেখা গেছে। বাংলাদেশের অবস্থা কী, তা এই জরিপে বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে।

জরিপ পরিচালনা দলের সদস্য চিকিৎসক রুবাইয়া খান বলেন, শুরুর দিকে চিকিৎসকসহ অনেক স্বাস্থ্যকর্মী মারা গেছেন। সব মিলিয়ে আতঙ্ক, বিষণ্নতা বেশি ছিল।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে ৮ হাজার ১৫৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চিকিৎসক ২ হাজার ৮৯০ জন। চিকিৎসক মারা গেছেন ১২৯ জন।

অনিদ্রা, উৎকণ্ঠা

জরিপ বলছে, যাঁরা ছয় সপ্তাহের বেশি টানা কাজ করেছেন, তাঁদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-অনিদ্রার লক্ষণ বেশি পাওয়া গেছে। প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ চিকিৎসক এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী অনিদ্রায় ভুগেছেন। পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি) বা ঘটনা-পরবর্তী উৎকণ্ঠায় ভুগেছেন প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ চিকিৎসক এবং প্রায় ২ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী।

অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশের আগে থেকেই কোনো শারীরিক অসুস্থতা ছিল। যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হাঁপানি ইত্যাদি। অংশগ্রহণকারীদের ৫৫ শতাংশ শারীরিক ব্যায়াম করতেন।

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করতেন জ্যেষ্ঠ নার্স ইসরাত জাহান। গত বছরের এপ্রিল ও মে মাসে ওয়ার্ডটিতে তিনিসহ ৫ জন নার্স এবং ৭ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হন। তিনি বলেন, বাসায় বয়স্ক মা, দুই শিশুসন্তান ও স্বামী আছেন। তাঁদের জন্য প্রচণ্ড ভয় হতো।

করোনার সম্মুখযোদ্ধা স্বাস্থ্যকর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে একাধিকবার সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর সংস্থার এক বুলেটিনে চীন ও সিঙ্গাপুরের পর্যালোচনা তুলে ধরে বলা হয়, মহামারিতে স্বাস্থ্যকর্মীদের চারজনে একজন হতাশা-উদ্বেগে ভুগছেন। তিনজনের একজন ভুগছেন অনিদ্রায়।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর