img

কোভিডের সংক্রমণ ঠেকাতে ঘোষিত সাধারণ ছুটির সময় দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের আয় কমে গিয়েছিল। প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। তবে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যাঁদের এমএফএস বা মোবাইল ব্যাংক হিসাব আছে, তাঁদের আয় হ্রাসের হার কম। অর্থাৎ, তাঁরা কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

কোভিড নিয়ন্ত্রণে ঘোষিত সাধারণ ছুটির সময় মানুষের চলাফেরা কমে গিয়েছিল। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল অর্থনৈতিক তৎপরতা। স্বাভাবিকভাবেই অরক্ষিত মানুষ তখন আরও অসহায় পড়েছিলেন। তবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কল্যাণে দরিদ্র মানুষেরা লেনদেন করতে পেরেছেন। অনেক তৈরি পোশাক কারখানা শ্রমিকদের মজুরি দিয়েছে এমএফএসের মাধ্যমে। আবার সমাজের বিত্তবান মানুষ দানও করেছেন। অবস্থাসম্পন্ন মানুষ গরিবদের সহায়তা করেছেন। সে জন্য দেখা গেছে, যাঁদের মোবাইল ব্যাংক হিসাব আছে, তাঁরা অতটা ক্ষতিগ্রস্ত হননি।

ব্যবস্থাপনা পরামর্শ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান পিআইস্ট্র্যাটেজি ডট অর্গ পরিচালিত ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ইন দ্য টাইম অব কোভিড-১৯ বা কোভিড-১৯-এর সময় ডিজিটাল আর্থিক সেবা শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এমএফএসের এই উপকারী ভূমিকার কথা বলা হয়েছে।

ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থার বিস্তার

সমীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯-এর সময় দেশের অনেক দুর্বলতা বেরিয়ে এলেও সরকার একটি কাজ বেশ ভালোভাবে করেছে। সেটা হলো, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সমাজের সবচেয়ে অরক্ষিত মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া। তৈরি পোশাকশ্রমিকদের মজুরি দিতে ছয় সপ্তাহের মধ্যে ২০ লাখের বেশি এমএফএস হিসাব খোলা হয়েছে। সামাজিক সুরক্ষা বা স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে মধ্যবিত্ত অনেকেই মোবাইল হিসাব খুলেছেন।

পাশাপাশি সরকার দেশের ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে এককালীন নগদ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যদিও সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয়নি। সামাজিক সুরক্ষার টাকা ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেওয়া হয়েছে।

সাধারণ ছুটির সময় অনেক মধ্যবিত্তই বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হননি। ফলে মোবাইল ফোনের টপআপ থেকে শুরু করে পরিষেবা বিল পরিশোধ, অনলাইনে বাজারের বিল-এসব কিছু ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিশোধ করেছে মানুষ।

নারীর অগ্রণী ভূমিকা

বাংলাদেশের যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। যুগে যুগে এমনটাই হয়ে আসছে। কোভিডের সময়ও সেই রীতির ধারাবাহিকতা দেখা গেল। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮৬ শতাংশ বলেছেন, কোভিডের কারণে তাঁদের লেনদেন বেড়েছে বা অপরিবর্তিত আছে। এর মধ্যে ৮৬ শতাংশ নারী এবং ৫৬ শতাংশ পুরুষ।

২০২০ সালের মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এই সমীক্ষা চালিয়েছে পিআইস্ট্র্যাটেজি ডট অর্গ। এই সমীক্ষার উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি হলো, নারীদের এমএফএস ব্যবহারে এগিয়ে আসার চিত্র। দেখা গেছে, মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত দেশে যত এমএফএস হিসাব খোলা হয়েছে, তার মধ্যে নারীই হচ্ছেন ৬৯ শতাংশ এবং পুরুষ মাত্র ৩১ শতাংশ। অর্থাৎ, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে এত দিন যেখানে নারীরা পিছিয়ে ছিলেন, সেখানে এই হিসাবে দেখা যাচ্ছে উল্টো। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সম্ভবত বাংলাদেশের সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে এটি ঘটেছে-তৈরি পোশাকশ্রমিকদের মজুরি, সামাজিক সুরক্ষা ভাতা ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রদানের সিদ্ধান্ত।

পাশাপাশি বিগত কয়েক বছরে দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে নারী-পুরুষের ব্যবধানও কমেছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০১৭ সালে যেখানে এই ব্যবধান ছিল ২৯ শতাংশ, ২০২০ সালে তা ২৪ শতাংশে নেমে এসেছে। আর্থিক পণ্যে নতুনত্ব আনা এবং নারীরা কীভাবে সেগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেন, তার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশের ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ নারীর আর্থিক হিসাব আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় যখন তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকেরা মজুরি পেয়েছেন, তখন এমএফএস ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। পরবর্তীকালে আমাদের সমীক্ষায় দেখা গেছে, মালিকেরা আবার আগের ব্যবস্থায় ফিরে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, এমএফএসে লেনদেনের খরচ বেশি হওয়ায় অনেকেই এটা ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হন। তবে এটা ঠিক, এমএফএস থাকায় সাধারণ ছুটির সময় ব্যবহারকারীরা তুলনামূলক সহজভাবে সহায়তা পেয়েছেন।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর