img

টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় ছয় বছর পলাতক থাকার পর সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি আজ বুধবার আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। সহিদুর এই মামলার প্রধান আসামি সাবেক সাংসদ আমানুর রহমান খান রানার ভাই।

সহিদুর তাঁর বাবা সাংসদ আতাউর রহমান খান ও ভাই সাবেক সাংসদ আমানুর রহমান খান রানার সঙ্গে বেলা পৌনে ১১টার দিকে টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ঢোকেন। সেখানে আত্মসমর্পণ করে তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন প্রার্থনা করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মনিরুল ইসলাম খান এবং বাদীপক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম জামিনের বিরোধিতা করেন। এ সময় আদালতে উপস্থিত হয়ে নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রী ও মামলার বাদী নাহার আহমেদ ন্যায়বিচারের স্বার্থে সহিদুরকে জামিন না দেওয়ার জন্য আদালতের প্রতি অনুরোধ করেন। শুনানি শেষে বিচারক সিকান্দার জুলকান নাইন দুপুরের পর আদেশ দেবেন বলে জানান।

পরে সহিদুর পুলিশি হেফাজতে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে একটি অস্ত্র মামলায় টাঙ্গাইলের দ্বিতীয় অতিরিক্ত ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। দুপুরের পর এই মামলার শুনানি হবে বলে টাঙ্গাইলের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এস আকবর খান জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, সহিদুর গত সোমবার আত্মসমর্পণ করতে টাঙ্গাইল আদালতে যান। কিন্তু বিচারক না আসায় তিনি নির্বিঘ্নে চলে যান।

পুলিশ সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তাঁর কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ফারুক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২০১৪ সালের আগস্টে গোয়েন্দা পুলিশ আনিসুল ইসলাম রাজা নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে রাজার দেওয়া স্বীকারোক্তিতে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তৎকালীন সাংসদ আমানুর রহমান খান ও তাঁর ছোট ভাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি বেরিয়ে আসে।

এর এক সপ্তাহ পরে গোয়েন্দা পুলিশ মোহাম্মদ আলী নামের অপর একজনকে গ্রেপ্তার করে। মোহাম্মদ আলী আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে আমানুরের অপর দুই ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান এবং ব্যবসায়ীনেতা জাহিদুর রহমান খানের নাম বের হয়ে আসে। তারপরই জাহিদুর ও সানিয়াত গা ঢাকা দেন। ওই বছরের ১৫ নভেম্বর আমানুর ও সহিদুর আত্মগোপনে চলে যান। ২২ মাস পলাতক থাকার পর আমানুর আদালতে সমর্পণ করলে তাঁকে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

পরবর্তী সময়ে প্রায় দুই বছর হাজতে থাকার পর আমানুর জামিনে মুক্ত হন। ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষে সাবেক সাংসদ আমানুর, তাঁর তিন ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। বর্তমানে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।

সহিদুর পলাতক হওয়ার পর ২০১৫ সালে গোয়েন্দা পুলিশ টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পোড়াবাড়ি থেকে দুটি পিস্তলসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। পরে ওই ব্যক্তি তাঁর স্বীকারোক্তিতে এই পিস্তল সহিদুর তাঁদের কাছে রাখতে দিয়েছিলেন বলে জানান। এ মামলায় গোয়েন্দা পুলিশ সহিদুরসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর